ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সন্ত্রাস দমন নয়, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন প্রধান বিবেচ্য

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
সন্ত্রাস দমন নয়, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন প্রধান বিবেচ্য ছবি : শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্কে সন্ত্রাসবাদ দমন প্রধান ইস্যু নয়। বরং দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্কে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো জ্বালানি খাতের উন্নয়ন।

এ বিষয়ে দুই বন্ধু দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন  ঢাকাস্থ রাশিয়ার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দর এ নিকোলেইভ।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন  ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।

এ সময়ে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদ‍ূত।

তিনি জানান, সৌদি জোটের নেতৃত্বে সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশ নেওয়ায় রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বিস্মিত হয়েছিল। তবে  ঢাকা থেকে মস্কোকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সৌদি জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধি অনুসরণ করবে।

‘২০২১ ও ২০৩০ সালের ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে রাশিয়া। ’

আগামী ১০ মার্চ ঢাকা থেকে বিদায় নিচ্ছেন আলেকসান্দর এ নিকোলেইভ।

বিদায়ের আগে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে  রাশিয়ার এই রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের প্রায় সব  রাজনৈতিক দলেরই ঐকমত্য রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ারও সমর্থন রয়েছে। দলটির কোনো আপত্তি নেই। তিন বছর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাতে এ বিষয়ে আমার আলাপ হয়েছিল।

‘তিনি রূপপুর বিষয়ে আমাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন।

কোনো নির্দিষ্ট সরকারের সঙ্গে নয়, রাশিয়ার সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে,’ বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আলেকসান্দর ই নিকোলেইভ বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বিভাগের কর্মকর্তারা রাশিয়া  থেকে আরও অস্ত্র  কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এটি দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার বিষয়। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলে রাশিয়া বিষয়টি বিবেচনা করবে।

৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব প্রশ্ন তুললেও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে  সমর্থন অব্যাহত রেখেছে এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত বলেন,  রাশিয়া কোনো  দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা নাক গলায় না। রাশিয়া কোনো দেশের ওপর তার দর্শনও চাপিয়ে দেয় না। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। যেকোনো সরকারের সঙ্গে রাশিয়া কাজ করে যাবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন,  সিরিয়ার বিষয়ে রাশিয়ার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটা হস্তক্ষেপ নয়। কারণ সিরিয়া সরকারের অনুরোধেই সেখানে আক্রমণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন,  বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে পারমাণবিক জ্বালানিই হতে পারে অন্যতম শক্তি। এ  ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন এটি নিরাপদ। আমি পরমাণু বিশেষজ্ঞ নই, তবে আপনারা পরমাণু বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জানতে পারেন, রূপপুর পরমাণু প্রকল্প কতটা নিরাপদ।

‘এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ভয় কাজ করছে তা মূলত অজ্ঞতার কারণেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানলে আশা করি, এ ভয় দূর হবে। ’

বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আসছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া গিয়েছিলেন। সে সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহী। তবে প্রেসিডেন্ট কবে আসবেন সেটা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাসপ্রম ও বাংলাদেশের পেট্রোবাংলা জ্বালানিখাত উন্নয়নে একযোগে কাজ করছে। তারা একত্রে ১০টি স্থানে  গ্যাস কূপ অনুসন্ধানে কার্যক্রম চালিয়েছে। ওই অনুসন্ধানের ফলে প্রতিদিন ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস এখন উত্তোলিত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের মোট গ্যাস উত্পাদনের ৮ ভাগ।

‘এছাড়া ২০১৫ সালে গ্যাসপ্রমের সঙ্গে বাপেক্সের আরও একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৫টি স্থানে গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো হবে। ’

আলেসান্দর ই নিকোলায়েভ বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সহযোগিতার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, পোশাক শিল্প, মত্স্য, ওষুধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুই দেশ একযোগে কাজ করছে।

এসব খাতে দিনে দিনে সহযোগিতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যু‍ৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬৫ কোটি ডলার বা এক লাখ এক  হাজার  কোটি টাকা।

চুক্তি অনুসারে ১২০০ করে মোট ২৪০০  মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে রাশিয়া।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়।

আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
জেপি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।