ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রাশিয়া থেকে নৌপথে যন্ত্রপাতি আসছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
রাশিয়া থেকে নৌপথে যন্ত্রপাতি আসছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের

ঢাকা: রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাপাতি রাশিয়া থেকে আসা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশকিছু যন্ত্রাংশ রূপপুরে এসে পৌঁছেছে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর পেসার ভ্যাসেল।

বিশাল প্রকল্পটির রিয়্যাক্টর থেকে শুরু করে সব যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে রাশিয়াতে। এসব সমুদ্র পথে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরে আনা হচ্ছে।

এরপর মোংলা থেকে নদীপথে রূপপুরে প্রকল্পস্থলে যাচ্ছে। আর যন্ত্রপাতিগুলো রেল বা সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে পরিবহন করাই সুবিধাজনক ও নির্ভরযোগ্য মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আনার জন্য প্রকল্প সংলগ্ন পদ্মানদীতে একটি জেটি (বন্দরের আদলে) নির্মাণ করা হয়েছে। নৌপথে যন্ত্রপাতিগুলো এ জেটিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া নদীতে পানির প্রবাহ বাড়লে অর্থাৎ আগামী বর্ষা মৌসুমে ভারী যন্ত্রপাতিগুলো জেটিতে আসতে শুরু করবে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে এগিয়ে চলছে। যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে আসা শুরু করেছি। এরইমধ্যে প্রথম ইউনিটের ইমারজেন্সি কোর কুলিং সিস্টেমের মূল যন্ত্রাংশের অর্ধেক এসে গেছে। নদীপথে পানি প্রবাহ বাড়লে ভারী যন্ত্রপাতিগুলো আসতে শুরু করবে। যথা সময়ে নির্মাণ কাজ যাতে শেষ করা যায়, সে অনুযায়ীই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংশ্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যেই রূপপুরে এসে পৌছেছে। গতবছর স্থাপন করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ডিভাইস কোর ক্যাচার। ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের ইমারজেন্সি কোর কুলিং সিস্টেমের জন্য মূল যন্ত্রাংশের চারটি অর্থাৎ অর্ধেক চলে এসেছে।  

কোর কুলিং সিস্টেমের যন্ত্রাংশ মোট আটটি। বাকি চারটিও দ্রুত চলে আসবে। চলতি বছর পর্যায়ক্রমে অন্য যন্ত্রপাতিও আসবে। এছাড়া প্রকল্পের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল আগামী সেপ্টেম্বরে আনা হবে। যা অক্টোবর বা নভেম্বরে প্রকল্পে স্থাপন করা হবে। আর এই রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বলা হয়।

এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে বলেন, কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এর যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে রাশিয়া থেকে।

রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে। দ্বিতীয় ইউনিটের শেষ হবে ২০২৪ সালে।

প্রকল্পটির কাজের যথাযথ মান দেখার জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে করছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ), রাশিয়ার পরমাণু শক্তি রেগুলেটরি বডি, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের বিশেষজ্ঞরা এর নির্মাণ কাজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। সর্বশেষ গত দুই ফেব্রুয়ারি আইএইএ’র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল প্রকল্প পরিদর্শন করে যান। এছাড়া প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রতি মাসে একাধিক বার প্রকল্পটি পরিদর্শন করছেন।

এদিকে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিগুলো তৈরি হচ্ছে রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মেশিন প্রস্তুতকারী ডিভিশন এটমএনার্গোমাসের চারটি কারখানায়। সেখানে কাজের অগ্রগতি দেখতে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়া গেছেন প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

আগামী ১ মার্চ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই সময়ে মন্ত্রী কারখানাগুলো ঘুরে যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ দেখবেন।  এছাড়া গতবছরও তিনি যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, সব নীতিমালা অনুসরণ করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আইএইএ, রাশিয়ার পরমাণু রেগুলেটরি বডি ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। আমরাও প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এসকে/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।