ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চলছে গ্যাসের হরিলুট, চোর খুঁজে পায় না পুলিশ!

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
চলছে গ্যাসের হরিলুট, চোর খুঁজে পায় না পুলিশ!

সাভার (ঢাকা): সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে গ্যাসের প্রয়োজন অনেক বেশি। শিল্প কারখানায় নেওয়া এসব গ্যাসের পাইপ লাইন থেকে বাসা বাড়িতে গ্যাস নিচ্ছে এখানকার কিছু সিন্ডিকেট।

 

বিভিন্নভাবে তিতাস গ্যাস সাভার অফিসকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী মুখোশের আড়ালে চোরেরা মূল্যবান রাষ্ট্রীয় এই সম্পদের হরিলুট করছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব সংযোগ দেই বাড়ির মালিকদের কাছে।

অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রীয় এই সম্পদ চুরির ঘটনা এ অঞ্চলের পুলিশকে জানালেও নেওয়া হয় না ব্যবস্থা। এমনকি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ চিহ্নিত অবৈধ গ্যাস চোরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই ফিরে আসে। উল্টো গোপন খবর প্রদানকারীদের নানাভাবে হেনস্তা করে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাতে আশুলিয়ার তাজপুর ইউসুফ মার্কেট এলাকায় নেক্সট জেনারেশন লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসের সামনে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয়দের এমন খবরের বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্ট ঘটনাস্থলে গেলে রফিক নামে এক শ্রমিক তড়িঘড়ি করে গর্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেন এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। সেই শ্রমিক রফিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গর্তের মাধ্যমে সেই কারখানার গ্যাস লাইন থেকে গ্যাস নিয়ে ১০টি বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হবে। এজন্য তোলা হয়েছে বাড়ির মালিকদের থেকে মোটা অংকের টাকা।

রফিকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী প্রভাবশালী রশিদ, নাজিম উদ্দিন ও আবুল কাশেমসহ ১০-১৫ জন দলবেধে সেখানে উপস্থিত হন। তারা এসময় এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালান। তবে তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের উপস্থিতিতে বিষয়টি আশুলিয়া থানায় জানানো হয়। কিন্তু আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকির আসতে দেরি হবে বলে প্রতিবেদকে জানান।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। ততক্ষণে পুলিশ আসতে আসতেই গ্যাস চোররা সব পালিয়ে যান। পরে থানার এই কর্মকর্তা অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উল্টো প্রতিবেদকসহ তার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে অসংলগ্ন জেরা করতে থাকেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করেন। এরপর কোনো প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান এসআই মিলন ফকির।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত কয়েক দিনে আশুলিয়ার জামগড়া, কাঠগড়া, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, চিত্রশাইলসহ বেশকিছু এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। মূলত রমজান মাসেই এই অবৈধ সংযোগ প্রদানের হিড়িক বেশি থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধ সংযোগ প্রতি ২০-৫০ হাজার পর্যন্ত মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবৈধ গ্যাস গ্রহীতারা বলেন, এলাকায় প্রায় ৪০-৫০টা বাড়িতে গ্যাস দিবে বইলা ২০-৫০ হাজার কইরা টাকা নিছে তারা। আমরাতো জানি না কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ। এখন আমাদের দিছে আমরা নিচ্ছি।

অবৈধ গ্যাস চুরির খবর প্রদানকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই এলাকায় তো আমারে নিয়া তাণ্ডব চলতাছে। আমি না কি এলাকায় পুলিশ, সাংবাদিক আইনা ভরায় ফেলছি। নানাভাবে চাপ আসতেছে আমার ওপর। ’

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকিরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, ভাই আপনারা চলে যান। ঘটনাস্থলে যাইয়া কাউরে পাই নাই। আর লিখিত কোনো অভিযোগ পাই নাই। তদন্ত চলতেছে। তদন্ত চলুক, তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যেটা হয় আর কি। আর কি দিয়া, কি হয় আমি জানাবো।

এর আগে, আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলামকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়টি জানানো হলে তিনি ওই এসআইকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তবে এরপর থেকে তাকে আর চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের সাভার জোনাল অফিসের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও করোনাকালীন সময় আমরা বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান চালাতে পারছি না। করোনা পরবর্তী সময় আমরা অবৈধ গ্যাস প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।