ঢাকা: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার জন্যও সঞ্চালন লাইনটি ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আদানী (ঝাড়খণ্ড, ভারত) পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন।
বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের আওতায় ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে। মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এখন প্রকল্পের ২৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ১৯৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মেয়াদে বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল। এখন প্রকল্পের মেয়াদ ০২ বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধেই পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়েছে। এখন প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের উপ প্রধান মোহাম্মদ তারিফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। প্রকল্পের মাধ্যমে পাশের দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এছাড়া রূপপুরের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তের জন্যও ব্যবহার করা হবে। যদিও রূপুরের জন্য একটি মেইন সঞ্চালন লাইন রয়েছে। মেইন লাইনের পাশাপাশি এটা সহায়তা করবে।
নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পরামর্শক সেবা অর্থায়নের উৎস এবং কাজের পরিধি পরিবর্তন হয়েছে। অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী প্রকল্পের সম্পূর্ণ লাইনের পরামর্শক সেবা কাজে যৌথ অর্থায়নের সংস্থান রাখা হয়েছিল।
প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে সম্পূর্ণ লাইনের ডিজাইন ও তদারকির পরিবর্তে শুধুমাত্র ৯ কিলোমিটার, রিভার ক্রসিং কাজের জন্য সরকারি অর্থায়নে পরামর্শক নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে সঞ্চালন লাইনের প্যাকেজটি তিনটি লটে এবং বে সম্প্রসারণ কাজের প্যাকেজটি দু’টি লটে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ০২ বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ফলে কর্মকর্তাদের বেতন, দৈনিক ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যয় বৃদ্ধি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত রেট অনুসারে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট এবং ভ্যাট (স্থাপন ব্যয়) অংশে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি অংশে অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় ব্যয় ৪৭ এবং ৮৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে। কারিগরিভাবে উত্তীর্ণ সর্বনিম্ন দরদাতার প্রদত্ত দরের ভিত্তিতে পরিবহন ব্যয়, বীমা, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম এবং বৈদ্যুতিক স্থাপন ব্যয় নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাজের প্রকৃতি পরিবর্তিত হওয়ায় পরামর্শক সেবা অংশের ব্যয় ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর, কালিহাতি, বাসাইল, জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, ক্ষেতলাল, কালাই, রাজশাহী, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, কাহালু, বগুড়া সদর, গাবতলী, শাজাহানপুর, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর, ধুনট এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জ, রানীগঞ্জ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট বিরামপুর, হাকিমপুর গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বাস্তবায়িত হবে।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং লোভোল্টেজ সমস্যার সমাধান করা। আগামী ২০২২-২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ অংশে সরবরাহের জন্য বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণ অপরিহার্য। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
এতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপি থেকে ৮৭৬ কোটি ৮৫ লাখ বা ২৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয়বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বড়পুকুরিয়া-বগুড়া পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন, বগুড়া-কালিয়াকৈর পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৯টি রিভার ক্রসিং টানা হবে। কালিয়াকৈর ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রে ৪০০ কেভি এআইএস দু’টি বে সম্প্রসারণ, পার্বতীপুর ২৩০ কেভি সুইচিং স্টেশনে ২৩০ কেভি এআইএস দু’টি বে সম্প্রসারণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২১
এমআইএস/এসআইএস