ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বেআইনিভাবে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
বেআইনিভাবে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে

ঢাকা: ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি, যে প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে তা সম্পন্ন বেআইনি এবং কোনো বিবেচনাতেই তেলের দাম বাড়ানো গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে কি প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার রয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। গণশুনানির ভিত্তিতে তেলের দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক না অযৌক্তিক, ভোক্তাদের দ্বারা এবং নানা ধরনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নিশ্চিত কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করে মূল্য পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়া এবং সেটা বিইআরসি করবে সেই বিষয়ে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বিইআরসির আইন লঙ্ঘন করে বিপিসির জ্বালানি বিভাগ থেকে যে কাজটা করা হলো, তা বিইআরসির আইন মতে অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার মতই অপরাধ করেছে জ্বালানি বিভাগ। রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠান যদি এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায় ভাবলে আমাদের আতঙ্কিত হতে হয়।

তিনি আরও বলেন, মূল্যবৃদ্ধি অথবা যেকোনো কিছুই সরকার করুক না কেন তা জনস্বার্থেই করে। জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হয় সরকারের কৃতকর্মের দ্বারা, সরকারের কর্ম সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদের কাজের এবং সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়। জ্বালানি বিভাগ মূল্যবৃদ্ধির আগে ভেবে দেখেনি এই কাজটি করলে, এটা জনস্বার্থে নাকি জনস্বার্থের বিপক্ষে হবে, মূল্যবৃদ্ধি জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে নাকি অভিশপ্ত আঘাত হবে, না জনগণকে নিপীড়ন করা হবে এটা তারা ভেবে দেখেনি।

জ্বালানি এ বিশেষজ্ঞ বলেন, কেরোসিনের গ্রাহক হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ। কেরোসিনের ঘাটতি যদি ৫ টাকা হয়, সেখানে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দেওয়া হল। কেরোসিনে কয় টাকা ভর্তুকি দিতে হয়? সেই ভর্তুকির টাকাও কিন্তু আমরা ভোক্তারাই বিভিন্ন কর এবং ভ্যাটের মাধ্যমে প্রদান করি। কেরোসিন এবং ডিজেলের আমরা যে কর বা ভ্যাট দিচ্ছি প্রয়োজন হলে সেই কর বা ভ্যাট না নিয়ে, দাম কমিয়ে দিয়ে, ভর্তুকি বা ঘাটতি দেখানোর কৌশল থেকে কি নিজেদের বিরত রাখতে পারিনা?   

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি এমন একটা পণ্য যার দাম বাড়লে, মূলত সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে এবং সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। আজকের ডিজেলের দাম বেড়ে গেল, কালকেই পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে। ফলে পরিবহনে যেসব পণ্য আসবে সেগুলোর দামও বেড়ে যাবে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। জ্বালানি এবং গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয় সেই তুলনায় কয়েকগুন বেড়ে যাবে। করোনাকালে এমনিতেই মানুষের আয় হ্রাস হয়ে গেছে, ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের টিকে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সেখানে এভাবে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জায়গাটা দুর্বল এবং আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং করে দিলাম। তার পরিণতি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিবেচনা, কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য বলা যায়না। তেলের দাম বৃদ্ধি যিনি করেছেন তিনি বেআইনিভাবে করেছেন। অন্যদিকে বৃদ্ধি করে যে পরিমাণ টাকা তিনি সাশ্রয় করছেন, সেই টাকাতে যে জনগণের কোন উপকার হবে সেটাও বিবেচনার বিষয়।

ড. এম শামসুল আলম বলেন, বলা হচ্ছে ডিজেলের দাম ভারতের চেয়ে ৫৯ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ভারত যখন আমাদের চেয়ে কম মূল্যের ডিজেল বিক্রি করেছে, তখন তো বলা হয়নি ভারতে দাম কম, আমরা বেশি দাম নিচ্ছি এটা ঠিক হচ্ছে না। তখনতো দেশে ডিজেলের দাম কমানো হয়নি। সুতরাং এসব কথা অসাধু ব্যবসায়ীরা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সেভাবে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ভোক্তাকে ঠকাচ্ছে এবং লুন্ঠনমূলক মূল্য হার নির্ধারণ করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ লুট করছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবার পরিবর্তে লুন্ঠনের কাজে নিয়োজিত, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, এটার পরিণতি ভয়াবহ এবং আশঙ্কাজনক। আমরা ভোক্তারা সেই কারণে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
আরকেআর/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।