ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘বাংলাদেশে পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি নির্মাণে সহায়তা দেবে রাশিয়া’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
‘বাংলাদেশে পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি নির্মাণে সহায়তা দেবে রাশিয়া’ রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভে।

ঢাকা: পারমাণবিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চায় রাশিয়া। বাংলাদেশ দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলে রূপপুর এনপিপি নির্মাণে অর্জিত অভিজ্ঞতা খুবই কাজে আসবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহা-পরিচালক আলেক্সি লিখাচেভে।



এছাড়া বাংলাদেশের বিবেচনাধীন একটি গবেষণা চুল্লি নির্মাণের জন্য রাশিয়া তাদের ডিজাইন করা একটি গবেষণা চুল্লির ভিত্তিতে নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে বলেও লিখাচেভে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি রোসাটমের মহাপরিচালক রাশিয়া এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।

১৯ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর স্থাপন হয়।   এ উপলক্ষে রোসাটমের মহাপরিচালক বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প সাইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।  

পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক্স অবস্থা সামান্য ঝুঁকি হয়তো সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সেগুলো মোকাবিলায় তারা সচেষ্ট বলে তিনি জানান।

এছাড়া এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং রাশিয়া প্রকল্পটিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবে না বলেও লিখাচেভ জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে কেমন চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ রাশিয়া টোয়েন্টি ফোরের (রশিয়ার) এ প্রশ্নের উত্তরে আলেক্সি লিখাচেভে বলেন, ঠিক এক বছর আগে প্রথম পাওয়ার ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। সাইটে এসে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে, গত এক বছরে কী পরিমাণ কাজ হয়েছে। রোসাটম বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তার সব বাধ্যবাধকতা পূরণ করে যাচ্ছে। প্রথম ব্লকে পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টারবাইন হলে ওভারহেড ক্রেন স্থাপন করা হয় এবং এপ্রিল মাসে স্থাপিত হয় জেনারেটর স্টেটর। এছাডাও এপ্রিল মাসে, নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস আগে, রিঅ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের নির্মাণে মূল কংক্রিটের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, এর মধ্যে থাকছে প্রথম পাওয়ার ইউনিটের প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস। জুনে, ইনার কন্টেনমেন্ট ডোমের কংক্রিটিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটে, ফেব্রুয়ারির শেষে প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইনের ঢালাই সম্পন্ন করা হয়। এপ্রিলের শেষে, আমরা ইঞ্জিন রুমে টারবাইন ইউনিটের ভিত্তির কংক্রিট-এর কাজ শেষ করেছি। জুনে, ইমারজেন্সি কোর কুলিং সিস্টেমের ইনস্টলেশন সম্পন্ন হয় এবং ইনার কন্টেনমেন্টের ধাতব কাঠামো ইনস্টল করা হয়। চারটি কুলিং টাওয়ারের নির্মাণে কাজ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে চলছে।

আগামীতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ আনা যায় তার জন্য সাইটে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেসব বাংলাদেশি কাজ করবেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। সাইটে প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞদের দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে বিশেষজ্ঞদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভোরোনেঝ এনপিপিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

পারমাণবিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কোনো পরিকল্পনা আছে কী? বাংলাদেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বা অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে কোন আলোচনা চলছে কিনা? রাশিয়া টোয়েন্টি ফোরের (রশিয়া) এমন আরেক প্রশ্নের উত্তরে রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হওয়ার পরেও, আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা শেষ হয়ে যাবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অপারেশন চলাকালীনও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করে যাব। বাংলাদেশ সরকার যদি দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন রূপপুর এনপিপি নির্মাণের সময় আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা খুবই কাজে আসবে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি গবেষণা চুল্লি নির্মাণের বিষয়ে গুরুত সহকারে বিবেচানা করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাশিয়ার ডিজাইন করা একটি গবেষণা চুল্লির ভিত্তিতে একটি নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব জমা দিয়েছি।


পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, করোনার কারণে সৃষ্ট জটিলতা সত্ত্বেও, প্রকল্প নির্মাণ কাজ যাতে নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। অবশ্যই আমরা বুঝতে পারছি যে, পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং লজিস্টিক্স অবস্থা সামান্য ঝুঁকি হয়তো সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এগুলো মোকাবিলায় আমরা সদা সচেষ্ট।

এই প্রকল্পটি নিজেরাই পরিচালনায় বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের সক্ষম হতে কত সময় লাগতে পারে পারে, এ ধরনের এক প্রশ্নের উত্তরে রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, আগে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই, এমন অনেক দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের।
আমরা অবশ্যই জানি যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হস্তান্তর করার পর এর নিরাপদ কার্যক্রম নিশ্চিত করা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং একইসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এমপ্লয়িদের পেশাদারিত্বের ওপরে এটি কতোটা নির্ভরশীল। নির্মাণ চুক্তি সইয়ের সময় রোসাটমের সহায়তায় মূল বিশেষজ্ঞদের তৈরির ব্যাপারটি বিবেচনায় নেওয়া হয়। জেনারেল কন্ট্রাক্ট অনুসারে অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ১ হাজার ১১৯ জন মূল বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রিজার্ভ হিসেবে আরো ৩০৫ জনও তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা।

দুই ধাপে বিশেষজ্ঞ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে, প্রথম ধাপে রূপপুর প্রকল্পের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভারোনেঝ এনপিপিতে এবং দ্বিতীয় ধাপে রূপপুর সাইটের সাইন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টারে, যা আজকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলাম।

তিনি জানান, ২০১৮ সাল থেকে অদ্যবধি ৬৬০ জনের অধিক বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। রাশিয়ায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি লাভ করেছেন ২৪০ জন যারা প্রথম ইউনিটের পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকবেন। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি লাভ করেছেন প্রায় ৩০০ জন এবং প্রায় ১৩০ জন এখনো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।  

নির্মাণ চলাকালীন আমরা সাইন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছি, যাতে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটলেশনের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কমিশনিং, পারমাণবিক জ্বালানির সরবরাহ এবং ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর আরো ৩-৪ বছর আমরা বাংলাদেশি সহকর্মীদের সর্বোচ্চ সহাযোগিতা প্রদান করে, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলতে পারি এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হবেন। যেকোনো অবস্থাতেই আমরা এই প্রকল্পটিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।