ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

দুঃখে ভরা পরবাসে এক পশলা বিনোদন! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
দুঃখে ভরা পরবাসে এক পশলা বিনোদন!  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রিয় মাতৃভূমি থেকে বহু দূরে। আপনজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন। পরবাসে নানা দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ও ব্যস্ততা ভুলে; ক্ষণিকের আনন্দ খোঁজা!তবে সেটা প্রকৃতির কাছে! প্রকৃতির দেয়া নির্মল সে আনন্দ ক্ষণকালের জন্য সকল অপ্রাপ্তি যেন মিটিয়ে দিয়েছে। অতি চমৎকার, নৈসর্গিক ও শৈল্পিক সৌন্দর্য, যা কল্পনাকেও হার মানায়!

এর মাঝে অনুকূল আবহাওয়া অভূতপূর্বভাবে আমাদের সহায় হওয়ায় আনন্দের কোনো ঘাটতি হয়নি। কোথায় যেন পড়েছিলাম “যদি স্রষ্টাকে পেতে চাও, সৃষ্টির দিকে তাকাও”।

 

সত্যি কী বিচিত্র স্রষ্টার সৃষ্টি! সে সুন্দর কল্পনাতীত; বর্ণনাতীত তো বটেই। তোমরা রবের কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তাকাও। আবার তাকাও। তোমার দৃষ্টি বারবার পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরে আসবে ।  

সত্যি দেখার মত ফ্রান্সের “ভোল লে রোজ” Veules les roses (গোলাপ প্রজাসভা) সামুদ্রিক অঞ্চল। এটির অবস্থান উত্তর ফ্রান্সের নরমান্ডির সেইন মেরিটাইম বিভাগে। ২শ'৪৭ একর এলাকা নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলে রয়েছে হ্রদ, পুকুর, হিমবাহ ও সমুদ্রসৈকত।  

২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী এখানে মাত্র ৫শ'৪৬ জন লোক বসবাস করেন। সাজানো-গোছানো পাহাড়, সমুদ্রসৈকত,ঘরবাড়ি, ফোয়ারা, নদী, গাছপালায় প্রকৃতির অপরূপ সাজ। এমনকি সমুদ্রপাড়ে ছোট বাচ্চাদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল। কচিকাঁচাদের আনন্দের এ লাফালাফিতেই চোখ আটকে যায়!পাশেই নীল জলরাশির বিশাল সমুদ্র।  

অথচ প্রকৃতির স্বাভাবিকতায় কোনো রকম ব্যাঘাত না ঘটিয়ে সবকিছুই যেন নিজের মত করে প্রযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে এখানে। অবশ্য ফ্রান্সের যেখানেই  গিয়েছি,এমনটাই দেখেছি। পাহাড়, পর্বত, প্রকৃতি যেখানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থা অটুট রেখেই তা মানুষের বসবাসযোগ্য আর ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে।

প্যারিস শহরটাও অনুরূপ। উপর থেকে দেখলে দেখা যায় কত উঁচু-নিচুতে স্থাপনা গড়া হয়েছে। প্যারিস থেকে ভোল লে রোজ বাসযোগে প্রায় ২শ' কিলোমিটারের পথ। কখনো পাহাড় কখনো পর্বতের নিচ দিয়ে আবার কখনো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বিশাল বিশাল রাস্তা, অরণ্য পাড়ি দিয়ে সেখানে যাওয়া।  

আগেও অন্যসব দুর্গম এলাকায় গিয়ে খেয়াল করেছি, এখানে এসেও দেখলাম; ফ্রান্সের সীমানায় যেখানেই থাকুন না কেন, সেখানকার এবং শহরের নাগরিক সুবিধা প্রায় একই রকম। যাবতীয় উপাদান, সুযোগ-সুবিধা একই। অবশ্য এখানে নির্মল প্রকৃতির বাড়তি সুবিধা অবারিত। এসব দেখলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।  

কত শত বছরে তারা এমনটি করতে পেরেছে! ফ্রান্সে যা দেখি তাতেই অবাক হই। আসলে দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা-আন্তরিকতা আর পরিকল্পিত শ্রমের কোনো বিকল্প নেই। যাক, মূল প্রসঙ্গে আসি।  

গত রোববার ফ্রঁসে আবেক রাব্বানী নামের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভোল লে রোজ(Veule les rores) সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ ও বনভোজনের আয়োজন করা হয়।  প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আন্তরিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত সৌহার্দ্যে ভরপুর ছিল এর সার্বিক আয়োজন। প্রতিটি মুহূর্ত যেন কেটেছে পারস্পারিক মধুরতায়, সজীব–নির্মলতায়। এতে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ফ্রঁসে আবেক রাব্বানী র প্রতিষ্ঠাতা রাব্বানী খান।  

তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আহমেদ আলী আকবর সুমন, জাহিদ, মিলন,অরণ্য আমীর, প্রাণ---আরএফএল গ্রুপের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন খান প্রমুখ ।  প্লাস দ্য লা শাপেলে অবস্থিত ফ্রঁসে আবেক রাব্বানী প্রতিষ্ঠানের বটতলা থেকে এ সমুদ্রভ্রমণের শুরু। ভোর থেকেই প্যারিসের বিভিন্ন শহর থেকে জড়ো হতে থাকে উৎসুক ডেলিগেটগণ।  

সকাল ৮টা থেকে কুপন সংগ্রহ, সমুদ্রের নীল জলরাশির ছাপে বর্ণিল কারুকার্য সমৃদ্ধ টিশার্ট ও সাথে সেলফি স্টিক। ১শ' ২৫ জনের মাঝে এসব বিতরণ শেষে লক্ষ্যপানে ২টি বাসে যাত্রা শুরু করে সকাল সোয়া ৯টায়।  

এ ভ্রমণে আসা-যাওয়া এবং সমুদ্রপাড়ের সময়টুকু এমনই সৃজনশীল ছিল যে, যে সব লোক কোনোদিন মাইক্রোফোনের ধারেকাছেও ভেড়েননি, তারাও নানা ভাব-কথনের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। কথার ঢালি উজাড় করে দিয়েছেন। গান,গল্প, কৌতুক, কবিতা, চুটকি, আঞ্চলিক কৃষ্টি-কালচারের নানান দিকের সুরসিক  উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে! 

তাদের সেসব পরিবেশনায় প্রতীয়মান হয়েছে, সবার মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা কিছু না কিছু প্রতিভা দিয়েছেন। আর যারা মাইক্রোফোন ধরেননি, তারা আরো বেশী সঙ্গ দিয়ে পুরো ভ্রমণকে প্রাণবন্ত করতে কার্পণ্য করেননি। এ আয়োজনে ১শ' ২৫ জন অংশগ্রহণ করেন।  

এতে সন্তান-সন্ততিসহ কয়েকটি পরিবারের সংস্রব দিয়েছে বাড়তি উৎসব। আর পুরো ভ্রমণে আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন বাংলা ভাষা জানা ফরাসী নাগরিক জেরেমি কোদরোঁ ও মাদাম মিতেলমাঁ। জেরেমি বাংলার লালন, বাউল ও চট্টগ্রাম এবং সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় গান, কৌতুক পরিবেশন করে সকলকে যারপরনাই বিমোহিত করেছেন।  

সমুদ্রের নীল জলরাশির উদাত্ত হাতছানি কার সাধ্য এড়িয়ে যাওয়া! তীরে এসে বাস থামতেই সকলে নেমে পড়ে। লাফালাফি, সাঁতার কাটা, ফুটবল নিয়ে মাতামাতি, সেলফি, ফটোশেসন, লম্ফঝম্ফ...... । এর মাঝে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সমুদ্রের জোয়ারভাটা। ফলে আমরা যেখানে লাফালাফি, দাপাদাপি করছি কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানটায় বিশাল ধূ ধূ বালুচর! প্রকৃতির মাধ্যমে স্রষ্টার এ কি লীলাখেলা ! 

সত্যি অবাক করা। এ আকর্ষণ রেখে কারই বা ফিরে যেতে ইচ্ছে করে! মন চায়, জোয়ারভাটার এ খেলা দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নামুক। জোনাকি জ্বলুক। চাঁদের আলো পড়ুক নীল জলরাশির ঢেউয়ে। সব কোলাহলে তৃপ্তির প্রশান্তি ঘিরে কেটে যাক না সময়... ... ... কিন্তু যান্ত্রিক এ জীবনে তা কি সম্ভব ? এবার যে ফেরার পালা! ফিরতে মন নাহি চায়। তবুও ফিরতে হয়। তবে আবার আসবো এ আশায়।  

এ ভ্রমণে তিন পর্বে ছিল খাওয়ার আয়োজন। সকালের নাস্তা। দুপুরের খাবার এবং ফিরতি পথে হালকা নাস্তা। ... সবশেষে সমুদ্রপাড়ে আয়োজন করা হয় কনসার্ট। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল লটারি। একশ' ২৫ জনের সবাই এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম পুরস্কার ফ্ল্যাট টিভিসহ ছিল ৪০টি নানা আকর্ষণীয় জিনিস।  

উদ্যোগতাদের প্রতি অংশগ্রহণকারীদের আবদার ছিল, প্রতিবছর যেন এ রকম আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা তাদের আবদার পূরণে আশার বাণী শোনান। এবারের মত ভবিষ্যতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আবেদন জানান তারা। এভাবেই একটি দিনের অপরূপ আনন্দভ্রমণের সুন্দর সফল সমাপ্তি ঘটে। এবার ফেরার পালা প্রতিদিনের একঘেঁয়ে ব্যস্ত জীবনে।

বাংলাদেশ সময়:১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।