ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২০ 

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার বছর

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার বছর

রাজশাহী: সদ্যই বিদায় নিচ্ছে পুরোনো খ্রিস্ট বছর। ৩১ ডিসেম্বর কৃষ্ণরাত পেরুলেই পরদিন পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য।

তবে পৌষের কুয়াশামোড়া প্রকৃতির কারণে শিশির জমা দূর্বাঘাসে এবার সেই সূর্যালোকের ছোঁয়া নাও লাগতে পারে। কিন্তু ভোরের আলো ফুটুক বা কুয়াশাচ্ছন্নই থাকুক; বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের পরিক্রমায় এরই মাঝে বিদায় নেবে আরও একটি বছর।

দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি যাবে উল্টে। নিশি অবসানে শুরু হবে ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২১ সালের প্রথমদিন। আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসেব-নিকাশ পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সবাই।

আগামী দিনের নতুন স্বপ্নে পাখা মেলবে-সোনালি প্রত্যাশা। নানান কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী পকেট ডায়রিটাও সাবেক হবে। ঝরা পল্লবের মতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়বে আরও একটি বছর। তবে করোনার কারণে বিগত বছরগুলোর মতো রাজশাহীতে এবার বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর নেই।

এর পরও বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল নানান ধরনের ঘটনা। কখনও হারানোর বেদনায় কাতর, আবার কখনও দাবির পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন রজশাহীবাসী। তা নিয়েই পদ্মাপাড়ের মানুষগুলোর মনের গহ্বরে জমা পড়েছে স্মৃতির পলি। যোগ হয়েছে নানান প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-বেদনা আর বজ্রকণ্ঠের প্রতিবাদ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর ভাইরাল হয়েছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয়।

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার বছর: দীর্ঘ ১০ মাস মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরোপারে চলে যান বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। চিরবিদায়ের তালিকায় নাম লেখান রাজশাহীর কিংবদন্তি এ সংগীতশিল্পী। এন্ড্রু কিশোর তার গান দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো জাতিকে। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্ম এন্ড্রু কিশোরের। তার বেড়ে ওঠাও এ শহরে। পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা করেছেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন সংগীতের প্রতি অনুরক্ত।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে 'প্লেব্যাক সম্রাট' হিসেবে পরিচিত এন্ড্রু কিশোরের গানের ভুবনে পথচলা শুরু ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর হাত ধরে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী। নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, দেশাত্মবোধক গানসহ প্রায় সব ধরনের গানই করতেন তিনি। শ্রোতাদের কাছে এন্ড্রু কিশোর ছিলেন এক জনপ্রিয় নাম। রাজশাহী বেতারের এ শিল্পীই যে একদিন বাংলা গানকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন, সে কল্পনা এন্ড্রু কিশোর নিজেও হয়তো মনে করেননি। সারা জীবন গান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। এরই মাঝে শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি ক্যানসার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছিল। মাঝে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সামগ্রিক উন্নতি দেখা যাচ্ছিল না। এন্ড্রু কিশোর নিজেও দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন, যার ফলে জুনে তাকে দেশে আনা হয়। কয়েক দিন ধরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে আরও বেশি। অবশেষে গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় জন্মভূমি রাজশাহীতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তার শেষ ইচ্ছে ছিল- এ রাজশাহীর মাটিই যেন হয় তার শেষ ঠিকানা হয়। সেখানেেই যেন চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়। কিংবদন্তি এ শিল্পীর শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাই করেছে পরিবার। নিজের দেখিয়ে যাওয়া স্থানেই গত ১৫ জুলাই তাকে সমাহিত করা হয়। ছোট্ট ক্রিসমাস ট্রির নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এন্ড্রু। নৌকাডুবি: গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। বিয়ের পরদিন নববধূ নিয়ে বরযাত্রী ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ৯ মার্চ সকাল পর্যন্ত ৬২ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানে বরসহ ৩৩ জনকে জীবিত এবং ৯ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সার্বিক সমন্বয় ও পরিচালনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিজিবি ও বিআইডব্লিউটিএ স্থানীয় জেলের একটি সমন্বিত দল পদ্মানদীতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। পদ্মার চরে গিয়ে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে অসচেতনভাবে সবাই নৌকায় ওঠেন। শ্রীরামপুরের বিপরীতে পদ্মা নদীর মাঝে দুর্ঘটনার সময় দু'টি নৌকায় বর-নববধূসহ মােট ৪২ জন যাত্রী ছিলেন। এক এক করে সর্বশেষ নববধূ সুইটি খাতুন পুর্ণিমার মরদেহ উদ্ধার হয়। নৌকাডুবির ঘটনায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জনে। সবার শেষে পাওয়া যায় পূর্ণিমার মরদেহ। পত্রিকা বিক্রেতার খুকির জীবন-সংগ্রাম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা পুরোনো একটি ভিডিও গত নভেম্বরে ভাইরাল হয়। এতে সারাদেশে পরিচিতি পান রাজশাহীর একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা জোহরা দিল আফরোজ খুকি।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে অনেকেই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিয়েছেন নগদ সহায়তা। এরই মধ্যে তার বাড়িটিও সংস্কার করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ বেগম রোকেয়া দিবসে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় জয়িতার পুরস্কার। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল জীবন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এ নারীর হাতে ক্রেস্ট, সম্মাননা ও সনদপত্র তুলে দেন। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর: স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বিজয়ের মাসে এ নিয়ে আন্দোলনে ফুঁসে ওঠেন সমগ্র রাজশাহীবাসী। অবশেষে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শুভক্ষণে রচিত হয় রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত।

জনদাবির মুখে রাজশাহীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে- রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বিজয়ের দিন রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত স্থাপন করা হয়।

রাজশাহী সার্ভে ইনস্টিটিউট চত্বরে ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু প্রধান অতিথি হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।