ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

আগ্রহ বাড়ছে উৎপাদন খাতে

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪
আগ্রহ বাড়ছে উৎপাদন খাতে

ঢাকা : উৎপাদন খাতের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এর ফলে বাজার মূলধনেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ খাতের কোম্পানিগুলোর অবদান।

২০১০ সালের ধসের পর থেকেই বাজারে এই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়তে দেখা যায়। সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসেও বাজার মূলধনে অবদানের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করেছে এ খাতটি।
 
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে খাত ভিত্তিক অবদানের তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
 
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০ সাল শেষে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের মাত্র ২২ শতাংশ ছিল উৎপাদন খাতের (খাদ্য, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র, প্রকৌশল, সিরামিক, চামড়া, কাগজ ও মুদ্রণ, পাট এবং সিমেন্ট) অবদান। বর্তমানে (এপ্রিল মাস শেষে) তা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫১ শতাংশে ওঠে এসেছে। যা খাত ভিত্তিক বাজার মূলধনের অবদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
 
এপ্রিল শেষে বাজার মূলধনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সার্ভিস ও বিবিধ খাত। এ খাতের অবদান ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর পরের স্থানে রয়েছে আর্থিক খাত। এ খাতের অবদান ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
 
শেয়ারবাজারে উৎপাদন খাতের অবদান বাড়তে থাকে ২০১০ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পতনের পর থেকে। অপরদিকে ওই সময় থেকে কমতে থাকে আর্থিক খাতের অবদান।
 
২০১০ সাল শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের অবদান ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ২০১১ সালে বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের অবদান বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশে। পরের বছর ২০১২ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে।
 
আর ২০১৩ সালে বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের অবদানে মোটামুটি বড় ধরনের উষ্ফলন ঘটে। বছর ব্যবধানে বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। চলতি বছরেও এ খাতটির অবদান বাড়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাস শেষে এর অবদান বেড়ে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।
 
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে গেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলো আর্থিক খাতের তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছে। এটি বিনিয়োগকারীদের উৎপাদন খাতের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে। তাছাড়া গত কয়েক বছরে উৎপাদন খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটিও বাজার মূলধনে এ খাতের অবদান বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
 
অপরদিকে ব্যাংক পরিচালনায় কিছু অদক্ষতা লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগ কমায় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অলস অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে কমছে অর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের মুনাফার পরিমাণ। এতে শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে।
 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সব খাতেই বিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করছে। তবে অন্যান্য খাতের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে উৎপাদ খাত। এছাড়া ২০১০ সালে ধসের পর উৎপাদন খাতের বেশ কিছু নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে এসেছে। এসব কারণেই শেয়ারবাজারে উৎপাদন খাতের অবদান বেড়েছে।
 
ডিএসই তথ্য মতে, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের অবদান ৮৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের। যা ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপরের স্থানেই রয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি। এ খাতের কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ২০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের আট দশমিক ৮৫ শতাংশ।
 
উৎপাদন খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধনে অবদান ছয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে ১৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকৌশল খাতের বাজার মূলধনে অবদান নয় হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ, বস্ত্র খাতের সাত হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা বা তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ, সিরামিকের এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ, চামড়ার দুই হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণের ৪৯ কোটি বা দশমিক শূন্য দুই শতাংশ এবং পাট খাতের কোম্পানিগুলোর অবদান ৭০ কোটি বা দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাজার মূলধনে উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর অবদান যথেষ্ঠ পরিমাণে বেড়েছে। অপরদিকে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান কমে গেছে।
 
তিনি বলেন, বাজার মূলধনে কোন প্রতিষ্ঠান কতটুকু অবদান রাখছে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামের ওপর।   ২০১০ সালের ধসের পর সব খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। তবে এ হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা অন্য খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতে কম। যে কারণে উৎপাদন খাতের অবদান বেড়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দাম অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছিল। ধসের পর সব খাতের শেয়ারের মূল্য সংশোধন হয়েছে। তবে এখনো অনেক কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়টি বিবেচনা করে তথ্য যাচাই বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।