ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

কারসাজিতে শেয়ার দর বৃদ্ধি, তদন্তেই সাড়

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪
কারসাজিতে শেয়ার দর বৃদ্ধি, তদন্তেই সাড়

ঢাকা: কারসাজির মাধ্যমে একাধিক চক্র বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর আস্বাভাবিক বাড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়সাড়াভাবে এসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণ তদন্তে কমিটি গঠন করলেও প্রতিবেদন জমা দেন না।

ফলে বারবার একই রকম কারসাজি করে পার পেয়ে যাচ্ছে কারসাজিকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, শেয়ার দর বাড়ানো চক্রের সঙ্গে স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কোম্পানি এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে।
 
জানা যায়, ২০১৩ সালের শেষের দিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘ইন্সট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট সার্ভিলেন্স সিস্টেম’-এর মাধ্যমে চার কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সনাক্ত করে। কোম্পানিগুলো হলো- মিথুন নিটিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড, তাল্লু স্পিনিং এবং বঙ্গজ লিমিটেড।
 
কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে কারণ জানতে তাৎক্ষণিক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। আর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এসব কমিটির প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশনা থাকলেও তা যথাসময়ে দাখিল করতে পারেনি কমিটি।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ‘কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে আমরা প্রতিবেদন এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে প্রতিবেদন কমিশন বৈঠকে পাঠানো হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে গত কয়েকটি কমিশন সভায় আমরা কয়েকটি কোম্পানি ও ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আর্থিক শাস্তি দিয়েছি। এগুলোর বিরুদ্ধেও কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
 
কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছিল সেগুলো সঠিক কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ চার কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি-না তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। তবে অনেক সময় অনেক কোম্পানির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে খালাস দিতে হয়।
 
জানা যায়, মূলত একাধিক চক্র বাজারে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানি সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়ানো চেষ্ট করে। এক্ষেত্রে তারা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে। এছাড়া চক্রটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কোম্পানি এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে বা সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোম্পানির অগ্রীম তথ্য সংগ্রহ করে। বিশেষ করে কোম্পানিটি কতটুকু লভ্যাংশ দেবে, মুনাফার পরিমাণ, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য, রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হবে কি-না ইত্যাদি তথ্য।
 
ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে বাজার থেকে এ কোম্পানির সিংহভাগ শেয়ার কম মূল্যে ক্রয় করে রাখে এসব অসাধু চক্র। যার মাধ্যমে বাজারে ওই কোম্পানির শেয়ার সরবরাহে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। আর এরই মধ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় অগ্রীম সংবাদ। সংবাদের ভিত্তিতে ওই কোম্পানির শেয়ার দর হু হু করে বাড়তে থাকে।
 
আর বাজারে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারী একটু বেশি দাম দিয়েও শেয়ার ক্রয় করার অর্ডার দেয়। এভাবে কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে চক্রটি তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সটকে পড়ে। যেসব বিষয় বিএসইসির নজরে আসে সেগুলো তদন্তে কমিটি গঠন করেও প্রতিদেবন জমা দেয় না কমিটির সদস্যরা।
 
তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাল্লু স্পিনিং কোম্পানির শেয়ার দর ৩০ টাকা থেকে ৪৬ টাকা, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল কোম্পানির শেয়ার ৪০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, মিথুন নিটিং কোম্পানির শেয়ার ৭৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং বঙ্গজ লিমিটেডের শেয়ার ৪৩০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। যা বিএসইসির ‘ইন্সট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট সার্ভিলেন্স সিস্টেম’-এ অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়।
 
এ বিষয়ে সার্ভিলেন্স বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। পাশাপাশি অস্বাভাবিক শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কারসাজিচক্র ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জড়িত রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে বিএসইসির উপ-পরিচালক শামসুর রহমান, মোহাম্মদ রকিবুর রহমান ও সহকারী পরিচালকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কিন্তু কমিটি আজও তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
 
ফলে প্রলোভনের মাধ্যমে এসব অতিমূল্যায়িত শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেই বিক্রি করা হয়েছে। আর তদন্ত কমিটি গঠনের ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার দর পুনরায় পড়ে যাওয়ায় একপক্ষের মুনাফা হলেও অন্য পক্ষকে ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।