ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

খুলনায় বাজার ছেড়েছেন ২৫ হাজার বিনিয়োগকারী

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪
খুলনায় বাজার ছেড়েছেন ২৫ হাজার বিনিয়োগকারী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টফোর.কম

খুলনা: অব্যাহত দরপতন ও মন্দায় পুঁজি হারিয়ে শেয়ারবাজার ছাড়ছেন খুলনার বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিমাসেই বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব বন্ধ ও নিষ্ক্রিয় হওয়ার তালিকা বাড়ছে।



সদ্যবিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাগে, ক্ষোভে ও দেনার বোঝা কাঁধে নিয়ে এখানকার প্রায় ২৫ হাজার বিনিয়োগকারী এ ব্যবসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন।

শিল্পনগরী খুলনায় বর্তমানে ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ রয়েছে। যেখানে ২০১৩ সালের মাঝামাঝির দিকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার বিনিয়োগকারী ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন পাট ও চিংড়ি মাছ ব্যবসায়ী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও কর্মী, এমনকি গৃহিণীরাও। বাজারে মন্দা অব্যাহত থাকায় আস্থাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে অনেকেই বাজার ছেড়েছেন। ফলে সিকিউরিটিজ হাউজে কমে গেছে লেনদেন। সঙ্গে সঙ্গে সরকারও রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খুলনা ইনভেস্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ডাকুয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের ক্রমাগত দরপতনের কারণেই তারা বাজারবিমুখ। আবার যেসব বিনিয়োগকারী বাজারে আছেন, তাদের অনেকের শুধু বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবটিই সক্রিয়। সেখানে নেই কোনো শেয়ার।

তিনি জানান, সদ্যবিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে এখানকার প্রায় ২৫ হাজার বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশের রয়েছে মার্জিন ঋণ।

আইসিবি সিকিউরিটিজ, এম সিকিউরিটিজ, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, স্টক অ্যান্ড বন্ড সিকিউরিটিজ, র্যাপিড সিকিউরিটিজ, এনসিসি সিকিউরিটিজ, জয়তুন সিকিউরিটিজ, ফখরুল সিকিউরিটিজ, আল-আরাফা সিকিউরিটিজ, সিনহা সিকিউরিটিজ ও আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বাজারে দরপতন থাকার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেকে অপেক্ষায় ছিলেন, বাজার ভালো হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেও বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশানুযায়ী ভালো বাজার না পেয়ে তারা এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

বাজার ছেড়েছেন এমন বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এসময় তারা জানান, আসন্ন ঈদে তাদের পরিবারে থাকবে না কোনো আনন্দ।
তাছাড়া এসব বিনিয়োগকারী তাদের নানা দুঃখ আর কষ্টের কথা তুলে ধরেন।

আইসিবি সিকিউরিটিজের মাকদুম নামের এক বিনিয়োগকারী জানান, তিনি বিদেশে থেকে অর্জিত টাকা দিয়ে ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে ঋণছাড়া বিনিয়োগ শুরু করেন। দেশে ফিরে তার আয়ের একমাত্র উৎস হয় শেয়ার ব্যবসা। বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠলে তার মোট বিনিয়োগে ২০ লাখ টাকা মুনাফা যোগ হয়। যে কারণে তিনি পরবর্তীতে বাজারে ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। তার পোর্টফোলিওতে সবগুলো শেয়ারও ছিল ভালো মৌলভিত্তির। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে ধস নামায় তার পুঁজির অর্ধেক হারিয়ে ফেলেন। এর পর তিনি অপেক্ষায় থাকেন বাজার ভালো হওয়ার। কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও বাজার আর ভালো হয়নি।

আবেগে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে পুঁজি হারিয়ে বাজার ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছি।

বিদেশের মাটিতে শত কষ্টে অর্জিত পুঁজি হারানো কষ্ট বুকে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা হয়তো কোনো দিন পূরণ হবে না। কী করবেন এখন তিনি একথা ভেবেই দিশেহারা।
আল-আরাফাহ সিকিউরিটিজ-এর বিনিয়োগকারী নাজমুল হক লিটন জানান, রূপসা-বাগেরহাট মহাসড়কে তার তিন-চারটি পরিবহন ছিল। বাজার ভালো অবস্থায় এসব গাড়ি বিক্রি করে শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক দরপতনে তার পোর্টফলিও শূন্য।

তিনি জানান, রাগে ক্ষোভে এখন আর হাউজে আসেন না।

স্টক অ্যান্ড বন্ড সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী মো. ইরফান বলেন, বাজার মন্দায় আমার ত্রিশ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর এই টাকার অধিকাংশ টাকাই মার্জিন ঋণের টাকা।

নাজমুল বলেন, আশা ছিল নতুন সরকার এলে বাজার ভালো থাকলে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে পারব। কিন্তু তা আর হয়নি। যার কারণে আমি বাজার ছেড়েছি।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে তার পরিবারে কোনো কেনাকাটা হবে না।  

সিনহা সিজিউরিটিজ হাউজের এক বিনিয়োগকারী বললেন, সরকার গলা টিপে ধরে বলছে বাঁচতে।

তার অভিযোগ বাজার উন্নয়নে সরকার মনোযোগী না হওয়ার কারণে তাদের এই ব্যবসা ছাড়তে হয়েছে। হতে হয়েছে বেকার।

আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজের খুলনা শাখা ব্যবস্থাপক তাপস কুমার সাহা জানান, সদ্যসমাপ্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হাউজে নতুন বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা তুলনামূলক বাড়েনি। বরং অনেক পুরনো বিনিয়োগকারী আগের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে না পেরে বাজার ছেড়েছেন।

কয়েকজন সিকিউরিটিজ হাউজ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয় না হলেও প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে হাউজগুলোতে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিল আরেক দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ আরো বেড়ে গেছে।

তারা জানান, অনেক মালিক এই অবস্থায় তাদের বেতন দিতে পারছেন না। মালিকরা কী করবেন তা বুঝে ওঠতে পারছেন না। তারা রয়েছেন উভয় সংকটে। হাউজ চালিয়ে যাবেন না বন্ধ করে দেবেন।

বাংলাদেশ সময় : ০৬৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।