ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

চাকরিচ্যুত হচ্ছেন ডিএসইর জিএম আসাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৪
চাকরিচ্যুত হচ্ছেন ডিএসইর জিএম আসাদ

ঢাকা: সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে নিজের ও স্ত্রীর নামে অবৈধ শেয়ার ব্যবসা করার অভিযোগে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) জিএম খন্দকার আসাদউল্লাহকে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মিত কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।


 
এর আগে বাংলানিউজে খন্দকার আসাদুল্লাহর অনিয়ম নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।  

তিনি বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ পায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
 
সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার আসাদউল্লাহ এবং তার স্ত্রী লাজুল লায়লার নামে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকে শেয়ার ব্যবসা করেন। তার স্ত্রীর বিও হিসাব নম্বর ৪০০৫০০০১৫০২২৫।
 
অথচ আইন অনুযায়ী শেয়ারবাজারের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি ও তার পরিবারের কোনো সদস্য কোনোভাবেই শেয়ার ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারেন না।

এ বিষয়ে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫-এর অনুচ্ছেদ ৪ (১)-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি নিজে বা অন্য কাহারও মাধ্যমে সুবিধাভোগী ব্যবসা করিবেন না বা উক্তরূপ ব্যবসার ব্যাপারে কোন ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান বা সহায়তা করিবেন না। ’
এছাড়া চাকরিবিধি অনুযায়ী, ডিএসই’র কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শেয়ার ব্যবসা করতে পারবে না। এমনকি তার পরিবারের কোনো সদস্যকে এ ব্যবসায় জড়াতে পারবে না।
 
আইনের এ বিধি লঙ্ঘন করেই ডিএসই’র জিএম পদে থেকে দেদারছে শেয়ার ব্যবসা করেছে খন্দকার আসাদ। সেই সঙ্গে নিজ স্ত্রীকে শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
 
বিএসইসি’র প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আসাদউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রত। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই না। ’
 
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বরাবর এক নারী লিখিতভাবে আসাদউল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর তিন সদস্যের উচ্চ কমিটি গঠন করে বিএসইসি এবং অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ২০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়।
 
পরবর্তীতে খন্দকার আসাদউল্লাহসহ ডিএসই’র অন্য কর্মকর্তাদের শেয়ার ব্যবসার বিষয়ে সকল তথ্য চেয়ে পাঠায় বিএসইসি। প্রশাসন থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজড) পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের কাছেও একাধিকবার তথ্য চেয়ে পাঠায় বিএসইসি। যার প্রেক্ষিতে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পর্ষদ দু’দফায় বিএসইসিকে তথ্য দেয়।
 
এদিকে বিএসইসি’র তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, খন্দকার আসাদ তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা পরিচালনা করেন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ইনভেস্টমেন্টে ৭২৭ নম্বর কোডে, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টে ১৫৯ নম্বর কোডে এবং এনসিসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে ১৬০ নম্বর কোডের মাধ্যমে লেনদেন করেন। যার মাধ্যমে তিনি পুঁজিবাজার থেকে মোট ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।
 
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খন্দকার আসাদ পুঁজিবাজার থেকে অবৈধভাবে টাকা তুলে নিয়েছেন। তবে সে টাকা কোথায় রেখেছেন তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই অবৈধভাবে তার তুলে নেওয়া টাকার সঠিক অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর খতিয়ে দে‍খা উচিত। বিশেষ করে তিনি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন কি-না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
 
এর আগে পুঁজিবাজার কারসাজির ও শেয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএসইসি’র (সাবেক এসইসি) নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কবীর ভূঁইয়াকে ২০১২ সালে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে ৮০ লাখ টাকার শেয়ার কারসাজির অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
শেয়ার কারসাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রথমে আনোয়ারুল কবীর ভুঁইয়াকে ওএসডি করা হয়। এরপর অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১ মার্চ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।