ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির অবদান কমেছে

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির অবদান কমেছে

ঢাকা: বিগত এপ্রিলের তুলনায় গত মে মাসে দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোর অবদান কমেছে। বাজার মন্দা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় গত মে মাসে দেশের উভয় বাজারে লেনদেন ও বাজার মূলধনে অবদান কমেছে সরকারি কোম্পানির।

অপরদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ওষুধ ও রসায়ন খাতে পুঁজিবাজারে বেসরকারি কোম্পানির অবদান আরো বেড়েছে।

নতুন বেসরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে দ্রুত সরকারি কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অথচ বাস্তব চিত্র হচ্ছে ২০১০ সালে মহাধস পরবর্তী সময়ে বহু বেসরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও এ সময়ে মাত্র একটি সরকারি কোম্পানি বাজারে এসেছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ডিএসইতে মোট ১৯ সরকারি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। মে মাসে এই কোম্পানিগুলো থেকে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। অথচ আগের মাস এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিলো ডিএসই’র মোট লেনদেনের ১০ শতাংশ। যা মে মাসে কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে।

লেনদেনের পাশাপাশি এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ডিএসইর বাজার মূলধনের ২ শতাংশ অবদান কমেছে। গত এপ্রিল মাসে ডিএসইতে এ খাতের অবদান ছিলো ১০ শতাংশ। আর মে মাসে অবদান ছিলো ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।   অথচ বাজার মূলধনের দিক থেকে বহুজাতিক কোম্পানির অবদান ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। যা লেনদেনের দিক থেকে ৫৫ শতাংশ। এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারে দাম বাড়লে ডিএসইর চিত্র পাল্টে যায়।

জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো কার্যক্রমই দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়তই দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। যে কারণে প্রায়ই প্রতারিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

তাই বাজারের স্বার্থে দ্রুত সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনলে সরকার বিনা সুদে টাকা সংগ্রহ করতে পারবে। আর মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসলে কারসাজি চক্রের দাপট কমে আসবে। বিনিয়োগকারীরা লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন। বাজারও চাঙা হবে।

ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বাংলানিউজকে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবদান অনেক বেশি। অথচ দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির অবদান মাত্র ৬শতাংশ। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সরকারি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজার স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের অবদান রাখবে। পুঁজিবাজারের প্রতি সরকারের দায়িত্ব বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানি বাজারে আসলে জবাবদিহিতা আরো বাড়বে। লোকসানে থাকা কোম্পানি মুনাফায় ফিরবে। যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে ধসের পরপরই বাজারে সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর গত ৬ বছরে মোট তিন দফা সময় বেধে  দেওয়া হয়। এর মধ্যে দু’বার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও হস্তক্ষেপ করেন।

এরপরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কবে নাগাদ বাজারে আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব মো. ইউনুসুর রহমান এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। গত ৫ মে তার সভাপতিত্বে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারি মলিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে ছাড়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির বক্তব্যে নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়। অর্থাৎ গত ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শেয়ার বাজারে ছাড়ার পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি লি. (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ইস্টার্ন কেবলস (ই কেবলস), ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট (ইস্টার্ন লুব), আইবিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা অয়েল), মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড( মেঘনা পেট), ন্যাশনাল টিউব (এনটিএল টিউবস), পদ্মা অয়েল কোম্পানি (পদ্মা অয়েল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পাওয়ার গ্রিড), রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি ( রেনউইক  জেএ), শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড (শিয়ার এমইউজি), তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস, জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড (জিলবাংলা), এটলাস বাংলাদেশ (এটলাস বাং)।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১২ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬,
এমএফআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।