ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

সেকেন্ডারিতে মন্দা, আইপিওতে চাঙা পুঁজিবাজার

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
সেকেন্ডারিতে মন্দা, আইপিওতে চাঙা পুঁজিবাজার

ঢাকা: ২০১০ সালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর পুঁজিবাজারে ছোট-ছোট অন্তত দশটি ধ্স দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে নতুন করে পুঁজি হারিয়ে নি‍ঃস্ব হয়েছেন হাজার হজার বিনিয়োগকারী। পাশাপশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং বাজার সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

অথচ পুঁজিবাজারের এ মন্দা সময়েও ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) অর্থাৎ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের বাজার ছিলো চাঙা। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এর ফলে সেকেন্ডারি মার্টেকে শেয়ারে লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা এখন আইপিওতে বিনিয়োগ করছেন। কারণ আইপিওতে বিনিয়োগ করে লাটারি পেলেই কয়েকগুণ মুনাফা তুলে নিয়েছেন।

এ কারণে সাড়ে ২৯ লাখ বিনিয়োগকারীর ১২ থেকে ১৫ লাখ এখন সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে আইপিও’তে বিনিয়োগ করছেন। পুঁজিবাজারের শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফর ডিপজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূত্র মতে, ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর থেমে থেমে পুঁজিবাজার দরপতন চলছেই। ফলে এখন পর‌্যন্ত সেকেন্ডারি বাজারের মন্দাভাব কোনোভাবেই কাঁটছে না। অপরদিকে আইপিও বাজার এতোটাই চাঙা যে, একটি কোম্পানির এক লট শেয়ার পেতে ৭২জন বিনিয়োগকারী টাকা জমা দিয়ে লটারিতে অংশ নিচ্ছেন। যা গত ৭ বছরের গড় চাহিদার তুলনায় আট গুণেরও বেশি।

ডিএসই সূত্র মতে, ২০১০ সালে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে সেসব কোম্পানির শেয়ার পেতে ৯ দশমিক ২৪ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে। একই অবস্থা ছিলো ২০১১ সালে। ২০১১ সালে ১৪ কোম্পানি শেয়ার পেতে আবেদন পড়ে গড়ে ৩ দশমিক ৮৬ গুণ, ২০১২ সালে ১৭ কোম্পনিতে ৪ দশমিক ৯৭ গুণ, ২০১৩ সালে ১২ কোম্পানিতে ৭ দশমিক ৬৩ গুণ, ২০১৪ সালে ১৪ কোম্পানিতে ১৭ দশমিক ৬০ গুণ, ২০১৫ সালে ১৬টি কোম্পানিতে ৯ দশমিক ৭২ গুণ, ২০১৬ সালে ১০ কোম্পানিতে ৯ গুণ এবং ২০১৭ সালে এখন পর‌্যন্ত ৭টি কোম্পানিতে ঘোষিত শেয়ারের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৪৬ গুণ আবেদন বেশি জমা পড়েছে।

এ সাত বছরের মধ্যে আইপিওতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়ে জাহিন স্পিনিং মিলসের শেয়ারের জন্য। যা চাহিদার চেয়ে ৭৩ দশমিক ৯৩ গুণ বেশি ছিলো। আর সব চেয়ে কম আবেদন পড়েছে জিবিবি পাওয়ারের। যা ছিলো ০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এদিকে সর্বশেষ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার্স লিমিটেড। গত ২এপ্রিল-১০ এপ্রিল পর‌্যন্ত আবেদন শেষে দেখা যায় কোম্পানির আইপিওতে চাহিদার চেয়ে ২৮ গুণ আবেদন বেশি জমা পড়েছে। অর্থাৎ দিন যতো যাচ্ছে আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ততই বাড়ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার মন্দা কিংবা চাঙা যেমনই থাকুক না কেন আইপিও নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শেষ নেই। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কেমন যাচ্ছে, আগামীতে কেমন হবে, কোনো দামে কেনা উচিত, কোনো দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই বিনিয়োগকারীদের। ভাল-মন্দ সব কোম্পানির আইপিওতেই ওভার সাবস্ক্রিপশন দেশের শেয়ার বাজারের একটি পরিচিত বাস্তবতা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর লেনদেন শুরুর দিকে বিশেষ করে প্রথম কয়েক কার্যদিবসে নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যায়।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে শেয়ারের দাম যাতে না কমে সে জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে বেশি দামে শেয়ার কিনে সাপোট দেওয়া হয়। তায় বিনিয়োগকারীরা ডাবল মুনাফা পায়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, লটারিতে শেয়ার পেলেই দিগুণ দামে বিক্রি করে লাভমান হওয়া যায়। তাই সেকেন্ডারি বাজার ছেড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন আইপিও বাজারে ঝুঁকছেন। এখানে কয়েকটি কারসাজি চক্রও জড়িত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
এমএফআই/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।