ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ওইমেক্স ইলেকট্রোডের অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
ওইমেক্স ইলেকট্রোডের অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন

ঢাকা: বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস) লঙ্গন এবং শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে ওইমেক্স ইলেকট্রোড লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয়ে (ইপিএস) কারসাজির পাশাপাশি কর সমন্বয়ে দেখানো হয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য।

ওইমেক্স ইলেকট্রোড লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

২০১০ সালে উৎপাদনে যাওয়া কোম্পানিটি এসব অনিয়মের মধ্য দিয়ে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নেবে।

কোম্পানি বলছে, এই টাকা আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যবহার করা হবে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইকরামুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি কমিশন খতিয়ে দেখছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএএস’র নিয়ম অনুসারে, রিস্টেট ইপিএস বলতে মোট শেয়ার দিয়ে মুনাফাকে ভাগ করে হিসাব করাকে বোঝানো হয়। কিন্তু ওইমেক্স ইলেকট্রোড কর্তৃপক্ষ নোট ২৮ এ ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রিস্টেড ইপিএস দেখিয়েছে। যাতে রিস্টেড ইপিএস বেশি দেখানো হয়েছে।

বিএএস অনুযায়ী, প্রিফারেন্স শেয়ার ও অন্যান্য বিষয় যখন কমন বা সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হয়, তখন ডাইলুটেড ইপিএস গণনা করতে হয়। এ জাতীয় কোনো কিছু না ঘটায় ওইমেক্স ইলেকট্রোডে ডাইলুটেড ইপিএস গণনা প্রযোজ্য নয়। তবে কোম্পানিতে ডাইলুটেড ইপিএস অ্যাপলিকেবল বলে প্রসপেক্টাসের ১৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৮ পৃষ্ঠায় ডাইলুটেড বলে ভুল ইপিএস দেখানো হয়েছে।
 
২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৫) ভুল শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখিয়েছে ওইমেক্স ইলেকট্রোড কর্তৃপক্ষ। এ সময় ০ দশমিক ৯৩ টাকার পরিবর্তে ০ দশমিক ৫৩ টাকা ইপিএস দেখানো হয়েছে।

বিএএস-৩৩ অনুযায়ী, শেয়ার ওয়েটেড না করে এ ভুল ইপিএস দেখানো হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ওইমেক্স ইলেকট্রোড। একইসঙ্গে শ্রমিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

কোম্পানিটি ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, ২০১২ সাল পর্যন্ত নিট আয়ের ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন এবং বিতরণ কোনোটাই করেনি। ফলে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর পরের ৩ বছর ফান্ড গঠন করা হলেও আইন অনুযায়ী বিতরণ করা হয়নি।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, ওইমেক্স ইলেকট্রোড প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য হলেও শুধু অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ পদ্ধতিতে শেয়ার প্রতি ৩১ টাকা পাওয়ার যোগ্য বলে প্রসপেক্টাসে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে ১ দশমিক ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করা হবে। কিন্তু একটি কোম্পানি সমস্যা থাকলেই শুধু অভিহিত মূল্যে আসতে চায় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
 
বিএএস-১২ অনুযায়ী, প্রযোজ্য হলেও ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেফার্ড টেক্স গণনা করেনি ওইমেক্স ইলেকট্রোড। এ বাবদ পরবর্তীতে সমন্বয়ও করা হয়নি। যাতে বর্তমানে নিট সম্পদের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া ২০১৫ সালের আগে সঠিক মুনাফা দেখানও হয়নি।
 
প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভিতরের রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসব সম্পত্তির অবচয় চার্জ না করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়েছে ওইমেক্স।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এমএফআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।