ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

দুর্বল কোম্পানির তালিকাচ্যুতিতে বাঁচবে বিনিয়োগকারী

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
দুর্বল কোম্পানির তালিকাচ্যুতিতে বাঁচবে বিনিয়োগকারী

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনহীন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা খারাপ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হলে ইনোসেন্ট ইনভেস্টর (নতুন ও অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী) বেঁচে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

সম্প্রতি দু’টি কোম্পানি তালিকাচ্যুত করার পর আরও ১৫টি কোম্পানি তালিকাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।  

ডিএসই'র এই সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য কতটুকু ইতিবাচক তা জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে না থাকলে প্রকৃতপক্ষে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ক্ষতি কম হবে।

কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম কমে আসবে, কিছু বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হলেও  নতুন, অনভিজ্ঞ ও নিষ্পাপ (ইনোসেন্ট) বিনিয়োগকারীরা বেঁচে যাবে।

ডিএসইর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সাবেক উপদেষ্টা বলেন, এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া উচিৎ ছিল। যে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ কিংবা অদূর ভবিষ্যতে উৎপাদন চালু হবে না, সেইসব কোম্পানিকে দ্রুত তালিকাচ্যুত করা উচিৎ। এক্ষেত্রে যারা ভুল সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ করেছেন তারা ধরা খাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাদের জন্য ডিএসই বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু করার নেই।

যেসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য কাজ করে তাদের মধ্যে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ৫ বছর ধরে লভ্যাংশ দেয় না এমন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত থাকার যোগ্যতা নেই।

এক্ষেত্রে ডিএসই ২ কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করেছে, আরও ১৫ কোম্পানিকে শোকজ করেছে। বাজারের জন্য এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এতে অসাধু শেয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছাবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার বিষয়ে সতর্ক থাকে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জাঙ্ক শেয়ারের দাপট যত কমবে, পুঁজিবাজার তত ভালো আচরণ করবে।

ডিএসইর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরাও। তারা বলছেন, কিছু বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সামগ্রিকভাবে বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। কারণ এসব কোম্পানির নামে বিভিন্ন রকম গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচ্চ দামে শেয়ার কেনার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়। এতে অতিলোভে পড়ে নতুন ও অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকায় থাকা দু’টি কোম্পানির ১৫ হাজার শেয়ার আমার কাছে আছে। তারপরও বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে আমি এই উদ্যোগের পক্ষে।

ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী রিংকু ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, বাজে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় ভালো শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বর্তমানে কম। এই উদ্যোগ বাজারে জন্য ইতিবাচক। এখন বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানির শেয়ার দেখে বিনিয়োগ করবে। দিনে দিনে বড় কোটিপতি বনে যাওয়ার স্বপ্ন বাদ দিবে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিংকে তালিকাচ্যুত (ডিলিস্টিং) করেছে ডিএসই। অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানি দু’টির উৎপাদন শুরু করার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই তালিকায় থাকা আরও ১৫ কোম্পানিকে গত ৬ আগস্ট শোকজ করা হয়। তাদের কাছে পাঠানো চিঠির সঠিক জবাব না দিতে পারলে ওই কোম্পানিগুলোও বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এমএফআই/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।