ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সিঙ্গাপুর

ইঁদুর আর পুতুলে ভরা অফিস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭
ইঁদুর আর পুতুলে ভরা অফিস মাদারশিপের অফিসে কাগজ কাটছে ইঁদুর- বাংলানিউজ

সিঙ্গাপুর থেকে: অরচার্ড রোডে অফিস ‘মাদারশিপ’র। ছিমছাম ছোট অফিস। এটা দেখতে ঘরের মতো। ঠেসে ঠেসেই বলা চলে জায়গা করা হয়েছে বৈঠকখানায়। ছোট টেবিল ঘিরে ১০টির মতো চেয়ার বসানো যায়। এরপরে দু’টি বেঞ্চ পেতে দেওয়া হয়েছে, ঠিক স্কুল ঘরের মতো। পেছনের সাদা বোর্ডে হরেক ধরনের কার্টুন আর ক্যাপশন দেখেই বোঝা যায় এটা ব্যাঙ্গ করার দুনিয়া।

মাদারশিপ এখানকার একটি জনপ্রিয় অনলাইন। এরা শুধুই মজাদার সব রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এটা কোনো গণমাধ্যম নয়, বরং পাঠকদের বিনোদন দেওয়ার মাধ্যম। এরমধ্যেই শিক্ষামূলক বিভিন্ন তথ্যও প্রকাশ করা হয়। প্রয়োজনে গ্রাফিক্স এবং ভিডিও তৈরি করা হয়। মাদারশিপের ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেজে এসব ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেকোনো তথ্যকে মজাদার করে উপস্থাপন করাই এ অনলাইনের বিশেষ দিক।  

বয়সে বেশ তরুণ এখানকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং ব্যবসায়িক শাখার পরিচালক মারতিনো তান। সবসময় হাসি খুশি থাকেন। অবশ্য এতোদিনে এটা বোঝা হয়ে গেছে সিঙ্গাপুরবাসীর সব হাসি মন থেকে নয় বরং এটা কর্মস্থলের বাড়তি যোগ্যতা।  

মারতিনোর সঙ্গে এর আগে একবার অরচার্ড হোটেলে এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপ ফোরামের সেমিনারে দেখা হয়েছিল। সেবার কথা বলার সুযোগ হয়নি। তাই বুধবার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না বিস্তারিত জানার। তবে ব্যবসার সব ফর্মূলা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

একফ্রেমে মাদারশিপের কর্মকর্তারা 

মারতিনো জানান, মানুষ সিরিয়াস রিপোর্ট থেকে মুক্তি চায় মাঝে মাঝে। এমনকি স্ট্রেইট টাইমসের চেয়েও এখন মানুষ মাদারশিপে বেশি ভিজিট করে। এর ফলে ম্যাকডোনাল্ড বা গিনেস বিয়ারের মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো মাদারশিপের মাধ্যমে প্রচারণামূলক ভিডিও তৈরি করে। যা মাদারশিপ তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।  

মাদারশিপের বিস্তারিত শোনার পর ঘুরে অফিস দেখার পালা। সঙ্গে আরো রয়েছেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও ডাইরেক্টর অব প্রজেক্টস চান চিও পং। এটা মাত্র ২৯ জনের অফিস। এর মধ্যে ১২ জনই সম্পাদকীয় পদে। বাকিরা টেকনিক্যাল। তবে সবাই কনটেন্ট তৈরির কাজ করেন।  

দু’টি তলা মিলে অফিস। নিচতলা থেকেই ওপরের তলায় ওঠার সিঁড়ি ঠিক যেন কোনো বাসা। প্রায় প্রতিটি টেবিলেই রয়েছে শূকর ছানার পুতুল। কয়েকজনকে দেখলাম পুতুল কোলে নিয়ে কাজ করছেন। টেবিল ভর্তি পুতুল আর বিভিন্ন স্যুভিনিয়র। এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে আরো বিভিন্ন ধরনের পুতুল।

কর্মব্যস্ত মাদারশিপের কর্মকর্তারাহঠাৎ চোখ যায় পাশের একটি খাঁচায়। দু’টি ইঁদুর মনের সুখে কাগজ কাটছে। অনেককেই শখ করে অফিসের সৌন্দর্যবর্ধন অ্যাকুরিয়াম রাখতে দেখেছি। আর এটা যেন ইঁদুরের অ্যাকুরিয়াম।  

চিউ ফং বলেন, ইঁদুরদের একটির নাম পিটার আরেকটির নাম পিঙ্ক। দু’টিই পুরুষ। হাতে নিয়ে আদরও করা যায়। ইঁদুরের পিচ্ছিল শরীর হাত গলে বেরিয়ে পড়তে চায়। খুব সাবধানে ধরতে হয়। কাঁধে আর হাতে হেঁটে বেড়ায় ইঁদুর।  

সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠলে দেখা মেলে আরেকটি খাঁচার। এখানে প্রধান সম্পাদক বসেন। আর তার টেবিলের পাশেও একটি ইঁদুরের খাঁচা। এটি সাদা রংয়ের। একটি টিস্যু পেপারের রোল মনের আনন্দে কেটে যাচ্ছেন ইঁদুর মহাশয়।  

এছাড়াও অ্যাকুরিয়াম ভর্তি কুচি কুচি কাগজ। জানতে চাইলাম সব কাগজই কি ইঁদুর কেটেছে। হেসে চিও ফাং জবাব দিলেন, না। আমরা কেটে কেটে এখানে রাখি। মাইকেল সেগুলোকে আরো কাটে। জানা গেলো এই ইঁদুরের নাম মাইকেল।  

এই অফিসে প্রবেশের সময় জুতা খুলে ঢুকতে হয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শুধু কম্পিউটারের জন্যে নয়। এখানে অনেক পুতুল রয়েছে। আর পুতুল এবং ইঁদুর দু’টোর জন্যেই ধুলাকণা ক্ষতিকর। সবকিছু মিলে অফিসকে ধুলামুক্ত রাখতে চাই। আর এখানে কোনো স্টাফ নেই পরিষ্কারের। আমরা নিজেরাই সব পরিষ্কার করি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৭
এমএন/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সিঙ্গাপুর এর সর্বশেষ