ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সিঙ্গাপুর

ব্যাঙ হয়ে গেলো পুলাউ বিন দ্বীপ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭
ব্যাঙ হয়ে গেলো পুলাউ বিন দ্বীপ! পুলাউ বিন দ্বীপ। ছবি: বাংলানিউজ

সিঙ্গাপুর থেকে: সে অনেক দিন আগের কথা। সিঙ্গাপুর থেকে এক হাতি, একটি শুকর ছানা আর একটি ব্যাঙ যাত্রা শুরু করে। একজন আরেকজনকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ে। কে সাঁতরে পৌঁছুতে পারে মালয়েশিয়ার সাগর ঘেঁষা শহর জোহরবাহরু। সাঁতরে সাঁতরে এগোতে থাকে তারা। তবে শেষ পর্যন্ত কেউই পৌঁছুতে পারেনি। বরং ব্যাঙটি রুপান্তরিত হয় দ্বীপে। আর এই দ্বীপেই অবস্থান করতে থাকে বন্ধু হাতি এবং শূকর ছানা।

এই সবই রুপকথা। সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ-পূর্বের একটি দ্বীপ এই পুলাউ বিন।

গেলো বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭) এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপ টিমের যাত্রা পুলাউ বিনে। সিঙ্গাপুরে খুব বেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নেই। তবে যেটুকু আছে তার যে ষোল আনা উসুল করছে দেশটি তা বোঝা যায় পুলাউ বিনে গেলেই।

পুলাউ বিন দ্বীপের জেটিতে সাইকেল স্ট্যান্ড।  ছবি: বাংলানিউজচাঙ্গি এয়ারপোর্টের পেছনেই ফেরি ঘাট। এখান থেকে প্রতিজন ৩ ডলারে (১৮৭ টাকা) বোটে করে নেয়া হয় পুলাউ বিন দ্বীপে। তবে কোন নৌকাতেই ১২ জনের বেশি ওঠা যাবে না। এই সংখ্যার নিয়ম এখানে খুবই শক্তভাবে মেনে চলা হয়।

নাহ দ্বীপটি খুব বেশি দূরে নয়। এই পাড় থেকেই দেখা যায়। সাগরের বুকে ঢেউ আছড়ে মিনিট পনেরোর মধ্যেই পুলাউ বিন ঘাটে ভেড়ে ইঞ্জিনের আধুনিক নৌকা। ছোট ফেরি ঘাট। সেখানে অপেক্ষা করছে কয়েকজন পারাপারের জন্যে। কাঠের পাটাতন পাড়িয়ে মূল দ্বীপে প্রবেশ।

পুলাউ বিন দ্বীপের প্রকৃতি ও পথ।  ছবি: বাংলানিউজআমাদের ১৪ জনের দলে তিনজন সাইকেল চালাতে পারেন না। এখানে মাইক্রোর মতো কিছু গাড়ি রয়েছে। পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখা যায় এসব গাড়িতে। আর ১১ জন ঠিক করলাম সাইক্লিং করবো। জেটি থেকে সাগরের পাড় ধরে একেবারে পশ্চিমে চলে যাবো। সেখানে একটি টাওয়ার করা হয়েছে। টাওয়ার থেকে শুধু পুরো দ্বীপ নয়, সিঙ্গাপুর শহরের দৃশ্যটাও সুন্দর দেখায়।  

২ ঘণ্টায় ৩ ডলারের সাইকেল ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে ছুটে চললাম আমরা। সবার সামনে থাকবে মুম্বাইয়ের চৈতণ্য এবং সবার শেষে আমি। যেন দল ছাড়া হতে না হয়।

পুলাউ বিন দ্বীপে বৃষ্টি।  ছবি: বাংলানিউজব্যাঙের দ্বীপ শুধুই রুপকথা। উনিশশ’ ষাট সাল থেকে এখানে মানুষের বসতি শুরু হয়। তবে এখন বাস করা মানুষের সংখ্যা মাত্র ১০০। এখানকার গ্রামটি সিঙ্গাপুরের শেষ গ্রাম বলেই পরিচিত।

এই দ্বীপটি সবুজে ঘেরা। সাগর পাড়ে পাথরের ওপর আছড়ে পড়ে সবুজ ঢেউ। সাগরের পাড় ধরে আবার কখনো পাখির কলকাকলিতে বনের মাঝ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যেতে থাকি আমরা।

রংবেরংয়ের পাখি ছাড়াও এই দ্বীপটি গ্রানাইটের জন্য বিখ্যাত। তবে এখন আর গ্রানাইট উত্তোলন হয় না। পথে পড়ে বেশ কয়েকটি দোকান। সেগুলোতে তেমন কিছু নেই। ঘরের সঙ্গে দোকান। বললে খাবার বানিয়ে দেয়। এভাবেই এখানকার পর্যটনকে গোছানো হয়েছে। বাড়তি কোন রেস্টুরেন্ট বসানো হয়নি।

পুলাউ বিন দ্বীপে আমরা।  ছবি: বাংলানিউজপ্রায় ৪০ মিনিট পথ চলার পর দেখি সামনে আর পথ নেই। এরই মধ্যে বৃষ্টি এসে গেলো। যারপরনাই সাইকেল নিয়ে ছুট। এখানে একটি বৌদ্ধ মন্দির। ভেতরে ধুপকাঠি জ্বলছে। বৃষ্টিতে আশ্রয় নিলাম আমরা মন্দিরের ছাউনিতে।

এই দ্বীপে অনেকেই দল বেঁধে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। এমন একটি দল আমাদের পাশে এসে অবস্থান নিলো।

তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং গুগল ম্যাপ ঘেঁটে আমরা আবিষ্কার করলাম ১১ জনের এই সাংবাদিক দলটি প্রথম থেকেই ভুল করেছে। দ্বীপের পূর্ব প্রান্তের বদলে পশ্চিম প্রান্তের দিকে রওনা হয়েছে।

বৃষ্টি ঝরে অনেকক্ষণ। সাগরের পানিতে বৃষ্টির রুপালি ফোটা নৃত্যের তাল তোলে। খুব ভিজতে ইচ্ছে হয় আমার। গুগলে রেইন অ্যাট সিঙ্গাপুর লিখে সার্চ দেই। একটাও বৃষ্টিতে ভেজার ছবি পেলাম না। বুঝলাম এরা বৃষ্টিকে ভালবাসতে পারেনি। সবসময়ই আপদ হিসেবেই গণ্য করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সিঙ্গাপুর এর সর্বশেষ