ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরের চিঠি

আলাদা আসন নয়, নারীদের চিৎকার করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৭
আলাদা আসন নয়, নারীদের চিৎকার করতে হবে সিঙ্গাপুরে গণপরিবহনে দাঁড়িয়েই ভ্রমণ করেন যাত্রীরা। ছবি: মাজেদুল নয়ন

সিঙ্গাপুর থেকে: এ দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, সংস্কৃতি নিয়ে তর্ক চলতে পারে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান যানাদাস দেভান জানতে চাইলেন, 'সিঙ্গাপুরে রাতে ফেরার সময় কেউ নিজেকে অনিরাপদ মনে করেন কিনা? কেউই 'হ্যাঁ' উত্তর দিতে পারলেন না। কারণ সিঙ্গাপুরকে বিবেচনা করা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ শহর হিসেবে।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্টের প্রকাশিত তথ্যমতে, দুনিয়ার সেরা যোগাযোগ ব্যবস্থা সিঙ্গাপুরে। এখানে গণপরিবহন দুনিয়ার যে কোন শহরের তুলনায় সেরা।

গণপরিবহনে প্রবীণ ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের কামরা।  ছবি: মাজেদুল নয়নতবে কি সিঙ্গাপুরে বসবাসরত সব মানুষই দেবতা বনে গেলো! না, ঠিক তা নয়। এখানেও কেউ অপরাধ করেন, তবে মানুষ বিচারও পান। কারণ সুযোগ পেলেই অপরাধপ্রবণ মানুষ তা কাজে লাগান। তাই এখানে বাসে, এমআরটি'তে যে নারীদের হয়রানির উদাহরণ নেই, তা নয়। অফিস শুরু আর ছুটির সময় এখানকার বাস বা ট্রেনে যে ভিড় হয় তা আমাদের দেশের তুলনায় কোন অংশে কম বলা যাবে না। তবে স্বস্তি এটুকু যে, সব যানই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

ফেসবুক অফিসে একবেলা

সিঙ্গাপুরের বাস এবং এমআরটিতে সব প্রতিবন্ধী যাত্রীর জন্যই নিশ্চিত যাত্রার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নারীকে এখানে প্রতিবন্ধীদের মতো বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত যাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। বরং শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে কেউ ছুঁতে চাইলে নারীকে প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে। এখানে বাসে বা এমআরটি'তে একটি স্টিকার দেখা যায় খুব, যাতে লেখা রয়েছে. 'চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন। '

স্টপেজে প্রতীবন্ধী ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য নির্দেশনা।  ছবি: মাজেদুল নয়ন সিঙ্গাপুরের সব যানবাহনেই বিশেষ আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবীণ, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য রয়েছে সংরক্ষিত আসন। এমআরটি'তে এমন কিছু কামরা রয়েছে যেখানে শুধু ১২টি আসন রয়েছে এই ৪ শ্রেণির মানুষের বিশেষ সুবিধার জন্য। একই কামরায় প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটজন যাত্রী দাঁড়িয়ে যায়। কারণ কামরাগুলোতে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা নেই।

এখানে গণপরিহনগুলোতে বসার চেয়ে দাঁড়ানোর জায়গা বেশি থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যাত্রা করতে পারেন এরা। আবার দেখা যায়, আসন খালি থাকলেও প্রবীণ বা শিশুরা অন্যদের মতো দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতেই বেশি পছন্দ করেন। এমআরটি'র কামরায় সাধারণের জন্যে ১২ টি আসন থাকলে সমান সংখ্যক আসন বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য সংরক্ষিত।  

সংরক্ষিত আসনের যাত্রী নির্দেশনা।  ছবি: মাজেদুল নয়ন এখানে ট্রেন, বাস সব ধরনের যানেই স্ট্রেচার চালিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিজেই উঠে যেতে পারেন। আবার ফুটপাতের সঙ্গে বাসে ওঠার উচ্চতা এমন পর্যায়ে রাখা হয়েছে যেন শিশুদের ক্যারিয়ারের চাকা ঘুরিয়েই বাবা মা উঠিয়ে নিতে পারেন। এই স্ট্রেচার বা ক্যারিয়ার নিয়ে বাসে বা ট্রেনে নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়ানোর নির্দেশনাও রয়েছে।

স্টেশনগুলোতে যে লিফট রয়েছে তা শুধু প্রবীণ, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং গর্ভবতী নারীদের জন্যে।

রাস্তায় গণপরিবহন।  ছবি: মাজেদুল নয়ন মিডিয়াকর্পের সাংবাদিক লিন ফু চুয়ান নারী হিসেবে কখনো বাধা অনুভব করেননি সিঙ্গাপুরে। তিনি বলেন, নারীবাদী শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। কারণ নারী হিসেবে আলাদাভাবে সুযোগ দেয়া বা বৈষম্য করা কোনটাই সমাজে চোখে পড়েনি।

বাসে বা ট্রেনে নারীর ওপর যৌন হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, এটাকে অন্য অপরাধের মতোই বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের অপরাধ পুরুষের ওপরও সংঘটিত হতে পারে।

বাসে বা ট্রেনে নারীর আলাদা আসনের বিষয়ে তিনি বলেন, যে কারো ওপরই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে চুপ করে না থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। তাকে বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে। দূরে সরিয়ে রাখলে বা বিশেষ সুবিধা দিলে নারীকে বৈষম্যই করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সিঙ্গাপুর এর সর্বশেষ