ঢাকা: মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে ১১ দলের মধ্যে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে আছে ফরাশগঞ্জ। তার উপর পেশাদার লিগের ম্যাচে আপেশাদার আচরণ করে তার মাশুল দিতে হল পুরোনো ঢাকার দল ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবকে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গত ৩ আগস্ট শেখ রাসেলের বিপক্ষে ম্যাচ অসমাপ্ত রেখে মাঠ থেকে উঠে যাওয়ায় ফলে এই মৌসুম এবং আগামী মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে ফরাশগঞ্জ ক্লাব। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে তাদের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এরসাথে বাফুফে থেকে অংশগ্রহণ করার ১৩ লাখ টাকা ফেরতও দিতে নির্দেশ দিয়েছে লিগ ডিসিপ্লিনারি কমিটি। আর বাইলজ অনুযায়ী শেখ রাসেলকে ৩-০ গোলে বিজয়ী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় । অন্যদিকে ফরাশগঞ্জের পরবর্তী ম্যাচ গুলোর বিপক্ষ দলগুলোকেও ৩-০ গোলে বিজয়ী করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানালেন, ‘ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং লিগের বাইলজ ও রুলস এ্যান্ড রেগুলেশনের ভিত্তিতেই বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি পক্ষ থেকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে ফরাশগঞ্জকে। ’
তিনি আরও জানান, ‘দুই মৌসুম সাসপেন্ড হওয়াতে ফরাশগঞ্জ তৃতীয় মৌসুম থেকে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে খেলবে, নাকি অবনমিত হয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে পেশাদার লিগ কমিটির পরবর্তী সভায়। ’
বাফুফে সূত্রে আরও জানা গেছে, ৩ আগস্টের ওই ম্যাচে ফরাশগঞ্জের ক্লাবের দু’জন কর্মকর্তা মো: সেলিম খান চেয়ারম্যান ফরাশগঞ্জ ফুটবল কমিটি ও ক্লাবটির যুগ্ন আহ্বায়ক গাজী সরোয়ার বাবু চিহ্নিত করে কারণ দর্শানো পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
ওদিকে বুধবার বাফুফে ভবনে আসে ফরাশগঞ্জের ফুটবল কমিটির কর্তারা। তারা বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের সাথে দেখা করেন। ফরাশগঞ্জের ফুটবল কমিটির সম্পাদক মানস বোস বাবুরাম জানালেন, ‘আমাদের ক্লাবকে শাস্তির বিষয়টি ইতোমধ্যেই জেনেছি। আমরা শো-কজের জবাব নিয়ম অনুযায়ীই দেব। আজ আমরা বাফুফেকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। '
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে ‘রিফিউজ টু প্লে’ কারণে শাস্তি পেল ফরাশগঞ্জ, সেই বাফুফের বাইলজের আট নম্বর ধারাটি জানেনই না বাবুরাম। তিনি বলেন ‘এই নিয়ম সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না!’
উল্লেখ্য, ফরাশগঞ্জ-রাসেল ম্যাচটি প্রথমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত ৩১ জুলাই। কিন্তু ম্যাচ শুরুর ৪ মিনিটের মধ্যেই ভারী বর্ষণের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ম্যাচট বডিলি শিফট করে পরের দিনে। কিন্তু পরের দিন (১ আগস্ট) আবারও বৃষ্টির কারণে মাঠ খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে আরেক দফা পিছিয়ে ৩ আগস্ট গড়ায় ম্যাচটি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু ১৪ মিনিটে পেনাল্টি পায় রাসেল। মিডফিল্ডার ইকাঙ্গা পেনাল্টি শট নেন। বল জালেও ঢুকেছিল। কিন্তু বল গোললাইন অতিক্রম করার আগেই বক্সে ঢুকে পড়েন খেলোয়াড়রা। ফলে নিয়ম অনুযায়ী গোলটি বাতিল করেন রেফারি। ঠিক সে সময়ই রাসেলের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কিংসলে চিগুজি ফরাশগঞ্জের ডিফেন্ডার মাহফুজ বাবুকে সরাতে গেলে তিনি বক্সের মধ্যেই পড়ে যান। ফলে রেফারি হলুদ কার্ড দেখান কিংসলেকে।
কিন্তু রেফারির এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হয়নি ফরাশগঞ্জ। ক্লাবের চেয়ারম্যান সেলিম খানের দাবি, 'রেফারির উচিৎ ছিল তাকে লাল কার্ড দেখানো। ' আর রেফারি যদি লাল কার্ড না দেন তবে খেলোয়াড়রা মাঠে না ফেরার নির্দেশ দেন। এরপর প্রায় ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় বন্ধ থাকে ম্যাচ। রেফারি ফরাশগঞ্জের খেলোয়াড়দের মাঠে ডাকলেও তারা খেলতে না রাজি হওয়ায় ‘রিফিউজ টু প্লে’-এর নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচটি শেষ ঘোষণা করে রেফারি জসিম উদ্দিন। এরপর বাফুফে ডিসিপ্লিনারী কমিটির কাছে ম্যাচের রিপোর্ট জমা দেন ম্যাচ কমিশনার শেখ বদরউদ্দিন। তার ভিত্তিতেই শাস্তির খড়গ নেমে এলো দলটির উপর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
ইয়া/এমএমএস