ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

খেলা

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম সেমিফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশ মাঠে নামে বাহরাইনের বিপক্ষে। তবে, আলহুজির একমাত্র গোলে হেরে ফাইনালের আগেই বিদায় নিল স্বপ্ন দেখানো মারুফুল হকের বাংলাদেশ।

সাফের ব্যর্থতা মুছে দিতে মামুনুল ইসলামের নেতৃত্বে লাল-সবুজরা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা পাইয়ে দেওয়ার যে মিশনে নেমেছিল তা সেমিফাইনালের মঞ্চ থেকেই থেমে গেল।

স্বাগতিক গোলরক্ষক শহীদুল আলমের ব্যর্থতায় আর ডিফেন্ডারদের ভুলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে আলহুজির হেড থেকে করা গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাহরাইন। বিরতির পর আর কোনো গোল না হলে বাংলাদেশ ১-০ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

প্রথম দশ মিনিটে আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণে ম্যাচ গড়ায়। দুরন্ত গতিতে প্রতিপক্ষের জালের ঠিকানা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টায় মরিয়া থাকে দুই দল। এর মধ্যেই বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার মিঠুন চৌধুরি প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে আঘাত করায় হলুদ কার্ড দেখেন।

ম্যাচের ১৫তম মিনিটে পরপর তিনবার থ্রো লাভ করে মামুনুল ইসলামের দল। সেখানে থেকে কোনো সুবিধা আদায় করে নিতে না পারলেও কাউন্টার অ্যাটাকে মামুনুলের বাড়িয়ে দেওয়া বলে হেমন্ত ভিনসেন্ট শট নিলেও তা কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন বাহরাইনের ডিফেন্ডাররা। দুই মিনিট পরেই রায়হান-মামুনুল-হেমন্তের দারুণ একটি বোঝাপড়া দেখা যায় মাঝমাঠে।

ম্যাচের ২০তম মিনিটে হেমন্ত বাহরাইনের পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে দারুণ গতিতে বল নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলেও সে যাত্রায় দলকে গোল পাইয়ে দিতে পারেননি।

মাঝমাঠে বলের দখল ধরে রেখে দুর্দান্ত খেলতে থাকেন মারুফুল হকের শিষ্যরা। হেমন্ত-শাখাওয়াত রনির একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাহরাইন। প্রথম ৩০ মিনিটে স্বাগতিকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে দেখা যায়। গোলের দেখা না পেলেও বাংলাদেশ ৩০তম মিনিটে আরেকটি সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। লম্বা থ্রো থেকে বাহরাইনের ডি-বক্সে বল পান ইয়ামিন। তার হেডটি গোলবারের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যায়।

৩৫তম মিনিটে রায়হানের লম্বা থ্রো বাহরাইনের গোলরক্ষক সরাসরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। মারজান ঈদের শিষ্যরা কিছুটা খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, বাংলাদেশের ডি-বক্সে বল নিয়ে প্রবেশের আগেই তাদের আক্রমণগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে। স্বাগতিক রক্ষণভাগের ফুটবলাররা দারুণভাবে রুখে দিতে থাকেন বাহরাইনের স্ট্রাইকারদের।

ম্যাচের ৩৯তম মিনিটে ইয়াসিন প্রতিপক্ষের এক ফুটবলারকে নিজেদের ডি-বক্সের ঠিক বাইরে ফেলে দিলে ফি-কিক আদায় করে বাহরাইন। জোরালো কিক নিলেও বাহরাইনের শটটি দারুণ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন শহীদুল আলম।

প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে গোল করে বাহরাইন। বাংলাদেশের গোলবারের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে উঠে আসা বল স্বাগতিক গোলরক্ষক শহীদুল আলম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন। ফলে, ফিরতি বলে হেড করেন আলহুজি। তাতেই বাংলাদেশের জালে বল জড়িয়ে যায়। বাহরাইন এগিয়ে যায় ১-০ গোলের ব্যবধানে।

ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায়।

বিরতির পর ম্যাচের ৫০তম মিনিটে রনির একটি দারুণ পাসে বল পান হেমন্ত। এ যাত্রায় গোলের সম্ভাবনা জেগে উঠলেও স্বাগতিকদের নিরাশ করেন বাহরাইন গোলরক্ষক। পরের মিনিটে মামুনুলের একটি দূরপাল্লার ফ্রি-কিক নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। তবে এক মিনিট পরেই রনির ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ একটি হেড নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন বাহরাইন গোলরক্ষক। বল গিয়ে লাগে গোলবারে। হতাশ হতে হয় মারুফুল হকের শিষ্যদের।

ম্যাচের ৫৯ মিনিটের মাথায় মামুনুলকে তুলে নেন কোচ মুরুফুল হক। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন সোহেল রানা। বাহরাইনের গোলরক্ষককে আঘাত করায় ৬০ মিনিটে ইয়াসিন খান হলুদ কার্ড দেখেন। ৬৪ মিনিটে তপু বর্মন মাঠে প্রবেশ করেন মিঠুন চৌধুরির বদলি হিসেবে।

৭১ মিনিটে রনির কোনাকুনি শট রুখে দেন বাহরাইন গোলরক্ষক মাহবুব। ৭৫ মিনিটে মোনায়েম রাজুর বদলি হিসেবে মাঠে প্রবেশ করেন জুয়েল রানা।

৭৯ মিনিটের মাথায় বাহরাইনের ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন শাখাওয়াত রনি। রায়হানের বাড়ানো বলে তিনি যে শটটি নিয়েছিলেন তা গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। অথচ এই শটটি কিছুটা সময় নিয়ে করলে নিশ্চিত গোলের দেখা পেতে পারতো বাংলাদেশ। এ সময় বেশ হতাশ হয়ে পড়েন রনি।

ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে বাংলাদেশকে ১-০ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এবারের আসরের শুরুটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় দিয়ে হলেও শেষের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ততটা চমকপ্রদ ছিলনা। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার ক্লাব পর্যায়ের দলের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র’র পর শেষ ম্যাচে নেপালের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে গোলশূণ্য ড্র করেও ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে নিশ্চিত করে শেষ চার। আর শেষ চার থেকেই বিদায় নিতে হলো স্বাগতিক লাল-সবুজের জার্সিধারীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬
এইচএল/এমআর

** প্রথমার্ধে পিছিয়ে বাংলাদেশ
** ফাইনালের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।