ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

যে মুহূর্ত চিরকুট ভুলবে না কোনোদিন

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪
যে মুহূর্ত চিরকুট ভুলবে না কোনোদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতের মৃগয়া, পাকিস্তানের দুই শিল্পী জেব ও হানিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চিরকুট

‘এটাই আমাদের সবচেয়ে স্মরণীয় ও ঘটনাবহুল মুহূর্ত। এমন একটি সুযোগ পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তা ও ভক্তদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ’- দিল্লি সফর নিয়ে বলছিলেন চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা।

এই উচ্ছ্বাসের কারণ আছে।

গত ৫ নভেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে সংগীত পরিবেশন করেছে চিরকুট। এই অভিজ্ঞতা নিয়েই তাদের যত উন্মাদনা। ওইদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি ভবন মিলনায়তনে শুরু হওয়া প্রেসিডেন্ট হাউস কনসার্টে ভারতের মৃগয়া ব্যান্ড আর পাকিস্তানের দুই সংগীতশিল্পী জেব এবং হানিয়ার পরিবেশনাও ছিল।

পরদিন নয়াদিল্লির পুরান‍া কেল্লায় চিরকুট গান করেছে দক্ষিণ এশিয়া ব্যান্ড উৎসবে। সব মিলিয়ে দিল্লি সফরটা তাদের কাছে ছিল জাদুময়! রাইসিনা হিলসে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশ-বিদেশের অতিথিদের গান শুনিয়ে দুর্লভ ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ব্যান্ডটি। কারণ রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙিনায় গানবাজনার আসরে রক-ব্যান্ডের পরিবেশনা কালেভদ্রে হয়ে থাকে। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় হালকা মেজাজের গানবাজনার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে ব্যান্ডসংগীতের আসরও আয়োজন করছেন।

দিল্লি সফরে রাষ্ট্রপতি ভবনের অতিথিশালায় পাঁচ দিন ছিলেন চিরকুটের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের আগে তারা মহড়া দিয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন আর দক্ষিণ এশিয়া ব্যান্ড উৎসবে গান গাওয়ার জন্য চিরকুটকে আমন্ত্রণ জানায় ভারত সরকারের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স, ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস। গত বছর রাষ্ট্রপতি ভবনে এলআরবি বাংলা গান গেয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। এবার চিরকুট যুক্ত হলো সেই ইতিহাসের পাতায়। এক ঝলকে চিরকুটের দিল্লি সফরে চোখ বুলানো যাক।  

৩ নভেম্বর ২০১৪

অষ্টম দক্ষিণ এশিয়া ব্যান্ড উৎসব ও রাষ্ট্রপতি ভবনে সংগীত পরিবেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন চিরকুটের সদস্যরা। বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে থাকেন তারা। চিরকুটের সুমী (কণ্ঠ), পিন্টু (কণ্ঠ, বেহালা, বাঁশি), ইমন (লিড গিটার), পাভেল (ড্রামস), তমাল (রিদম গিটার) ও দিদার (বেজ গিটার)। সবাই বললেন, ‘এত আদর, সম্মান, আন্তরিকতা আগে দেখিনি। এ অনুভূতি এক কথায় অবিশ্বাস্য, চমৎকার। ’ 

৪ নভেম্বর ২০১৪

সকালে রাজকীয় নাস্তা সেরে রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙিনায় চিরকুটের সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। এরপরই মহড়ায় ডুবে যান তারা। তাদের কথায়, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি যে ভালোবাসা ও সম্মান দেখালেন আমাদের, সে স্মৃতি ভোলার নয়। ’

৫ নভেম্বর ২০১৪

এদিনই ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে সংগীত পরিবেশন করে চিরকুট। বাংলাদেশের এই ব্যান্ডের পাশাপাশি এখানে ভারতের মৃগয়া আর পাকিস্তানের জেব ও হানিয়ার পরিবেশনা উপভোগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, তার পরিবারের সদস্য, আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক আর রাষ্ট্রপতি ভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রতিটি ব্যান্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ মিনিট। এই সময়ে চিরকুট পরিবেশন করে ডিএল রায়ের ‘ধন্যধান্য পুষ্পভরা’ এবং তাদের দুই জনপ্রিয় গান ‘খাজনা’ ও ‘কানামাছি’।

চিরকুটের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘খুব ভালো হয়েছে। খুব সুন্দর হয়েছে। খুব খুশি হয়েছি। ’ এরপর তিনি সবার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন। চিরকুট বললো, ‘সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা! অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তিনি মঞ্চে এলেন। সবার সঙ্গে ছবি তুললেন। সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন। উপহার দিলেন। সম্মান জানালেন। আমাদের সঙ্গে কথা বললেন বাংলায়। তার কথায় ছিল উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। ’

৭ নভেম্বর ২০১৪

দিল্লির পুরানা কেল্লায় দক্ষিণ এশিয়া ব্যান্ড উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য বিকেল থেকে মহড়া করেন চিরকুটের সদস্যরা। ওইদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় তাদের সংগীত পরিবেশনা। উৎসবে আরও অংশ নিয়েছে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও নেপালের জনপ্রিয় ব্যান্ড। চিরকুটের সদস্যরা বলেন, ‘এখানে আমরা সাতটি গান গেয়েছি। অনুষ্ঠানের পর দর্শকদের চোখেমুখে মুগ্ধতার ছোঁয়া দেখে ভালো লেগেছে। এবারের দিল্লি সফরটি আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ’

ভারতে চিরকুট নতুন কোনো গানের দল নয়, দেশটির সংগীতনির্ভর টিভি চ্যানেল এমটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘এমটিভি রুটস’-এ প্রচার হয়েছে চিরকুটের ‘কাটাকুটি’ ও ‘খাজনা’ গানের ভিডিও। দুই বছর আগে ভারতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া মিউজিক উইকে দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে সংগীত পরিবেশন করেছে চিরকুট। তাদের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারলে আমাদের বরাবরই ভালো লাগে। ’

দিন যত গড়ায় চিরকুটকে ঘিরে শ্রোতাদের উন্মাদনা যেন ততোই বাড়ছে। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে একের পর এক কীর্তি গড়ে কেটে গেছে ব্যান্ডটির এক যুগ। দেশীয় সংগীতাঙ্গনে চিরকুটের নামটা আলাদা করা সহজেই। সেটা গানের কথা, সুর, বাদ্যযন্ত্র, পরিবেশনা সবদিক দিয়েই। ব্যান্ডসংগীতের সঙ্গে অন্য ধারার শিল্পীদের যে দূরত্ব ছিল, তা অনেকাংশে ঘোচাতে পারছে চিরকুট। এরই মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে চিরকুটের জনপ্রিয়তা। দেশীয় ব্যান্ডসঙ্গীতের আকাশে তারা যে আলো ছড়িয়েছে, তা আলোকিত করছে অন্য দেশকেও! আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চিরকুটের অর্জনটা ক্রমেই বড় হচ্ছে। সেটা আরও বড় হোক। চিরকুটের বিশ্বজয় অব্যাহত থাকুক। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো চিরকুটের জন্য।  

* দক্ষিণ এশিয়া ব্যান্ড উৎসবে চিরকুটের ছবিগুলো তুলেছেন শোভিত খাত্তার

বাংলাদেশ সময় : ২০৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ