ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

ষোল বছর পর ‘অ্যালোন’ বিপাশা বসু

বৃষ্টি শেখ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
ষোল বছর পর ‘অ্যালোন’ বিপাশা বসু বিপাশা বসু

ষোল বছর বয়স থেকে কোনো জন্মদিনেই প্রেমিকহীন থাকেননি বিপাশা বসু। শুধু এবারের জন্মদিনেই তিনি ‘অ্যালোন’! বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিন কাটাতে পারেননি নিজের নতুন ছবি ‘অ্যালোন’-এর প্রচারে ব্যস্ত থাকায়।

ছবিটির কলাকুশলীদের সঙ্গে বিশাল কেক কেটে রাতে এলাহি খাওয়া-দাওয়া করেছেন। উপহারও পেয়েছেন প্রচুর। তার কাছে জন্মদিনে এটাই আসল ব্যাপার! তাই বললেন, ‘উপহার পেতে দারুণ লাগে! মা-বাবা-বোন যা দেয় সবই স্পেশাল। এখন প্রেমিক নেই। তাই সেই উপহারও নেই। ’

মনের মানুষ আপাতত না থাকলেও নিজেকে নিজে ভালোবাসেন বিপাশা। এজন্য জন্মদিনে নতুন আইফোন কিনেছেন। বয়সের কোঠা পয়ত্রিশ পেরিয়ে গেলেও চিন্তিত নন বিপাশা। উল্টো বললেন, ‘আমি এখনও তরুণ আর যৌন আবেদনময়ী। বয়স নিয়ে আমার ছুঁৎমার্গ নেই। মেয়েদের বয়স লুকানোর প্রবণতা সবচেয়ে খারাপ। বয়স জানাতে গিয়ে অস্বস্তিবোধ করার কিছু নেই। মন ভালো থাকলে, বয়স বাড়ার সঙ্গে মেয়েরা আরও ঝলমলে হয়ে ওঠেন। তাই বয়স বাড়লেও আমার কপালে ভাঁজ পড়ে না। ’

‘অ্যালোন’ মুক্তি পেলো গত ১৬ জানুয়ারি। এর গল্পে সানজানা আর অঞ্জনা যমজ বোন। একজনের শরীরের সঙ্গে অন্যজনের শরীর জোড়া লাগানো। অস্ত্রোপচারের সময় তাদের আলাদা করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়। মৃত বোনের অশরীরী আত্মা তাড়া করে বেঁচে থাকা বোনকে। ‘অ্যালোন’ ছবিতে বিপাশা বসু ‘অ্যালোন’ নন, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে এখন একা। এটা তার ভালোও লাগছে না। কারণ ‘অ্যালোন’ থাকতে পছন্দ করেন না তিনি। তবে তার ভাষ্য, ‘প্রেম না থাকলেই আমি একা হয়ে যাবো, এরকম নই আমি। আমার পরিবার আছে, বন্ধুরা আছে। চিকু আছে (পোষা কুকুর)। সুতরাং একা থাকার প্রশ্নই নেই। ’

গত বছর হারমান বাওয়েজার সঙ্গে সাত-আট মাসের প্রেম ভেঙে গেছে তার। আগে তো জন অ্যাব্রাহামের সঙ্গে ৯ বছরের বন্ধনের ইতি টেনেছেন। এসবের কারণ খোলাসা না করলেও কথায় কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন  ‘এখনকার ছেলেরা বড্ড ভীতু। কলকাতায় থাকতে মনে হতো, বাঙালি ছেলেরাই বুঝি মায়ের আঁচলে লুকিয়ে থাকে। পরে দেখলাম, সব ছেলেরাই এক। একটা সম্পর্ক মানে প্রেমিকাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। আমি পারব না! আমি কারও মা হতে পারব না। তাই এ ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পছন্দ করি না। ’

বিপাশা বসুর অভিনীত ছবির তালিকা দেখলে তাকে ভূত পাগল মনে হতে পারে। ব্যক্তিজীবনে  ভূতে খুব বিশ্বাস করেন তিনি। ছোটবেলায় ঠাকুমা যখন গল্প বলতেন, তখন থেকেই রাক্ষস-খোক্কস,  ভূত-পেতনিতে তার ঘোর বিশ্বাস। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর একা ঘুমাতে পারতেন না অনেক বছর। মনে হতো, রাত হলেই ঠাকুমা ফিরে আসবে তার কাছে। ছোটবেলায়  ভূতের বইয়ের সংকলন বের হলে বাবা কিনে দিতেন। মা অবশ্য রাগ করতেন খুব। বাবাকে বলতেন, ‘তুমি মেয়ের মাথা খাচ্ছো!’ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, লীলা মজুমদারের  ভূতের গল্প আর ‘ঠাকুমার ঝুলি’ বেশি প্রিয় বিপাশার। এখনও সময় পেলে পড়েন। বাস্তবে কি কোনোদিন  ভূত দেখেছেন? তার উত্তর, ‘আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, জীবনে একবার তো দেখবোই। ছোটবেলায় প্ল্যানচেট করার শখ ছিল। মা একদিন জানতে পারায় কানমলা হজম করতে হলো বন্ধুদের সামনে। তারপর থেকে আর ওই পথে যাইনি। মুম্বাইয়ে আসার পর একা থেকে ভাবলাম এবার আমাকে কে পায়!’ ভূতে ভয় পেলেও এখন আর রাতে একা ঘুমাতে ভয় লাগে না বিপাশার। উল্টো রসিকতা করে বললেন, ভূত এলে আমি নিজেই এত লাফালাফি করব যে,  ভূতই পালিয়ে যেতে পারে!’

‘অ্যালোন’-এর আগের ছবি ‘ক্রিয়েচার’-এ অভিনয়ের সময় রোজ রাতে ব্রক্ষরাক্ষসের স্বপ্ন দেখতেন বিপাশা। তখন তার ঘুমালেই মনে হতো, এই বুঝি গলা চেপে ধরলো! এ কারণে মাঝরাতে উঠে পড়তন। দক্ষিণ ভারতে আবার ব্রক্ষরাক্ষস একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। এ কারণে মন্দিরে গিয়ে পূজা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, ভয় পাওয়ার পরও একই পথে হাঁটলেন তিনি। অর্থাৎ আবার  ভূতের ছবিতে কাজ করলেন। তার ভাষ্য, ‘গোটা ব্যাপারটাই আমাকে খুব টানে। নিষিদ্ধ ব্যাপারের দিকে অবচেতনে যাওয়ার ইচ্ছা সবারই থাকে। যেটাতে কোনো সমস্যা বা ভয় থাকে, সেটাই বারবার দেখতে বা করতে ইচ্ছে হয়। এটাও একটা সাইকোলজি। আর  ভূতের অভিনয় করতে সাহস লাগে না। চারদিকে গাদা-গাদা লোক। চিত্রগ্রাহক, পরিচালক, ইউনিটের লোকজন থাকে। সাহসের দরকার কী?’

তাই বলিউডে এখন  ভূতের ছবি তৈরি হওয়ার কথা কানে এলে প্রথমে সবার মনে পড়ে বিপাশা বসুর কথা। সেই ২০০২ সালে ‘রাজ’ দিয়ে শুরু। এরপর ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’ (২০০৬), ‘রাজ থ্রি’ (২০১২), ‘আত্মা’ (২০১৩), ‘ক্রিয়েচার থ্রিডি’ (২০১৪) এবং সর্বশেষ ‘অ্যালোন’ ছবিগুলোর সুবাদে এই তকমা পেয়েছেন তিনি। তার  ভূত-পিপাসা বেশ লক্ষণীয়। এজন্য মজা করে ৩৬ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী বলে ফেললেন, ‘ভাবছি, ভবিষ্যতে ভূত বাঁচাও কমিটি খুলবো! আর আমি হবো ব্র্যান্ড অ্যাম্বাডর। ’

‘রাজ’, ‘আত্মা’, ‘ক্রিয়েচার’-এর মতো ছবিগুলোতে একের পর এক কাজ করে যাওয়ায় ভৌতিক ছবির নায়িকা তকমাটা লেগে গেছে তার নামের সঙ্গে। এতে মোটেই অখুশি নন তিনি। কারণটা শুনুন তার মুখেই, ‘আমার শেষ কথা, আনন্দ দিতে পারা। সেটা আমি পারছি কি-না, সেটা দেখতে হবে। নিজের ইচ্ছায় বা সচেতনভাবে ওই তকমাটা গায়ে টেনে নেইনি। আমাকে এই ঘরানায় আমাকে মানাচ্ছে বলে করে যাচ্ছি এমন কোনো পরিকল্পনা কিন্তু করিনি। বলিউডের নির্মাতারা ব্যবসা ভালো বোঝেন। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আরও অনেক ছবিতে কাজ করতে চাই। সেদিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখবেন সালমান খান কিংবা অক্ষয় কুমারের মতো তারকারা একই ঘরানার ছবি বারবার করে যান এবং সফলও হন। কই তাদের বেলায় তো একই ঘরানায় বন্দি হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। বরং তাদেরকে ওইরকম ভাবমূর্তিতেই বারবার দেখতে ভালো লাগে দর্শকের। ’

ভূতের ছবিতে টানা কাজ করলেও বিপাশার ভাবমূর্তি কিন্তু বরাবরই যৌন আবেদনময়ী। এ নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। এজন্য ফিটনেস নিয়ে সারাক্ষণই মাথা ঘামান বিপাশা। শরীরচর্চা না হলে তার দিনই শুরু হয় না। খাওয়ার ব্যাপারেও নিয়ম মেনে চলেন। জন্মদিনে অবশ্য অনেক বিরিয়ানি খেয়েছেন। ’

বলিউড বিপাশা বসু পা রেখেছেন তা-ও ১৫ বছর হয়ে গেলো। কিন্তু আবেদনে, সৌন্দর্যে এখনও তিনি কম যান না। ‘অ্যালোন’ ছবিতেও তাকে মোহময়ী লেগেছে। এ ছবিতে বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়ক করণ সিং গ্রোভারকে কয়েকবার চুমু দিতে দেখা গেছে তাকে। এগুলো রীতিমতো ঝড় তুলেছে। যদিও এসব দৃশ্যধারণের সময় বেশ নার্ভাস ছিলেন করণ। বলিউডের এই বাঙালি সুন্দরীর মন্তব্য, ‘বাস্তবে চুমু দিতে পারদর্শীরাই পর্দায়ও ভালো করে থাকেন। যে ভালোভাবে চুমু দিতে পারে না, মনের মানুষের কাছে সে অপরাধীর সমতুল্য! এই একটি কথায় কাজ হয়েছে। করণকে বলেছিলাম চুম্বন দৃশ্য যেন সত্যিকারের মতো দেখায়। আর অনেকেরই মনে হবে করণ এক সময় টিভি অভিনেতা ছিলো বলে বড় পর্দার ব্যাপারে কিছুই জানে না। এটা ভুল। ও পুরোপুরি সচেতন আর পাকাপোক্ত অভিনেতা। ’

চুম্বন দৃশ্য আর মধুর রসায়নের কারণে করণ সিং গ্রোভারের সঙ্গে বিপাশার প্রেম হয়ে গেছে কি-না তা নিয়ে জল্পনা চলছে। অবশ্য প্রতিবারই নায়কদের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে মুখরোচক খবর বের হয়। ‘দম মারো দম’ ছবিতে কাজ করার সময় রানা দাগ্গুবাতিকেও তার প্রেমের হাবুডুবু খেতে শোনা গেছে। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। করণের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিপাশার ভাষ্য, ‘করণ এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ। হাবাগোবা নয়। দুম করে প্রেমে পড়ে যাওয়ার ছেলে নয় ও। করণ আমার বন্ধু। ’

ভূষাণ প্যাটেল পরিচালিত ‘অ্যালোন’ ছবির পোস্টারে ভৌতিক আবহের পাশাপাশি বিপাশা বসুকে পুঁজি করে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যৌন আবেদনকে। কিন্তু ব্যবসাটা অবশ্য তেমন সুবিধার হয়নি। এখন পর্যন্ত এটি মাত্র সাড়ে ১১ কোটি রুপির ব্যবসা করতে পেরেছে। ফলে ডাবল বিপাশা বসুতেও ‘অ্যালোন’-এর একাকিত্ব ঘুচল না৷

যতোই করণ সিং গ্রোভার আর রানা দাগ্গুবাতির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে মুখরোচক খবর বের হোক, সত্যিটা হলো বিপাশা বসু এখন ‘অ্যালোন’। বিয়েটা হবে কবে? ‘জানি না। বিয়ে তো করবোই। কিন্তু কাকে করব, সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারবো না। ’

বাংলাদেশ সময় : ২০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ