ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

অলটাইম দৌড়ের ওপর তৌসিফ-শবনম ফারিয়া!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
অলটাইম দৌড়ের ওপর তৌসিফ-শবনম ফারিয়া! তৌসিফ ও শবনম ফারিয়া/ছবি: নূর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বানরের ব্যবসা দেখে ভাবনাটা মাথায় এলো! বানরের ব্যবসা মানে ‘মাংকি বিজনেস’। এয়ারটেলের এই টেলিছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও শবনম ফারিয়া।

এর আগেও একসঙ্গে দেখা গেছে তাদেরকে। সামনে আবার দেখা যাবে। ভাবনাটা দু’জনকে নিয়ে আড্ডা দেওয়ার। তারা এলেন। ছবি তুললেন, আড্ডা দিলেন বাংলানিউজে বসে।  

তৌসিফ আর শবনম ফারিয়া প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেন ‘অ্যাট এইটিন-অলটাইম দৌড়ের ওপর’ টেলিছবিতে। ওটাও এয়ারটেলের টেলিছবি। এর মাধ্যমে দু’জনেরই অভিষেক হয় অভিনয়ে। তার আগে রাঁধুনী গুড়া মশলার বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হলেও এটাই ছিলো শ.ফারিয়ার টার্নিং পয়েন্ট। তৌসিফ বললেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমার প্রথম কাজটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেছে। ’

‘অ্যাট এইটিন-অলটাইম দৌড়ের ওপর’-এর কাজ করতে সিলেটে গিয়েছিলেন তারা। স্বাভাবিকভাবেই অনেক মজা হয়েছে। এরপর সেন্টমার্টিন আর টাঙ্গাইলেও একসঙ্গে কাজ করতে গেছেন। তবে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পথে রাস্তা নাজুক থাকায় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মজার বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত নাটক-টেলিছবির কাজে শবনম ফারিয়া চারবার ঢাকার বাইরে গেছেন, চারবারই তার সহশিল্পী ছিলেন তৌসিফ! ‘সাধারণত আম্মু আমাকে শুটিং করতে ঢাকার বাইরে যেতে দিতে চান না। কিন্তু তৌসিফ ভাইয়া থাকলেই তিনি অনুমতি দেন। তিনি তৌসিফ ভাইয়াকে অনেক স্নেহ করেন। ’ তার কথা শেষ হতেই তৌসিফ বললেন, ‘আন্টি যদি নিজে যেতে না পারেন, তাহলে আমাকে ওর অভিভাবক বানিয়ে দেন। নিজেকে তখন বড় বড় লাগে!’

‘অ্যাট এইটিন-অলটাইম দৌড়ের ওপর’-এর পর তৌসিফ ও শবনম ফারিয়া একসঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন। সর্বশেষ প্রচারিত হলো ‘মাংকি বিজনেস’। তবে এতে তৌসিফ ছিলেন অতিথি শিল্পী হিসেবে। শ.ফারিয়া বললেন, ‘এখানে আমার চরিত্রটা অন্যরকম ছিলো। সবচেয়ে কঠিন ছিলো তারিক আনাম খানের মতো গুণী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করা। কিন্তু দর্শক এতোটা ইতিবাচকভাবে নেবে বুঝিনি। সবাই আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। তাই খুব ভালো লেগেছে। ’

তৌসিফ-শবনম ফারিয়া জুটির তিনটি ধারাবাহিক সামনে আসবে। এর মধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনে শুরু হচ্ছে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘দোস্ত দুশমন’। এতে শবনম ফারিয়াকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখা যাবে। তার নাম অরপা। মফস্বল থেকে পড়াশোনা করতে রাজধানীতে এসেছে সে। মেয়েটা ভদ্র, লাজুক, বিনয়ী, মেধাবী ছাত্রী। সাধারণভাবে থাকে। খুব একটা সাজগোজ করে না। এ কারণে ওভার স্মার্ট মেয়েরা তাকে নিয়ে উপহাস করে। এক সহপাঠীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে ভাড়া থাকে মেয়েটি। তাদের ৬-৭ জনের একটা দল থাকে ক্যাম্পাসে। তাদের মধ্যে একজনকে আলাদাভাবে পছন্দ করেন অরপা।

সেই একজনটা কি তৌসিফ? ‘হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে এবার তৌসিফ বললেন, ‘আমার চরিত্রের নাম রাফসান। সে বড়লোকের ছেলে। তার মা বেঁচে নেই। আছে বাবা আর সৎ মা। রাফসানকে গর্ভে না ধরলেও সৎ মা নিজের ছেলের মতোই মনে করে তাকে। কিন্তু রাফসান মানসিকভাবে ধরেই নেয়, সৎ মা ভালো হয় না। তাই দূরত্ব বজায় রেখে চলে। বাবার টাকা আছে বলে দু'হাতে ওড়ায় সে। ক্লাস ছাড়া পড়াশোনা খুব একটা করে না। সারাদিন গিটার বাজিয়ে রাফ অ্যান্ড টাফ গেটআপ নিয়ে চলে। সে নিজেকে প্লেবয় মনে করে। এমন ভাব দেখায় যেন, ক্যাম্পাসের সব মেয়ে তার জন্য পাগল! আসলে চিত্রটা উল্টো।   রাফসান মনে মনে পছন্দ করে অরপাকে। ’

‘দোস্ত দুশমন’-এর পাশাপাশি রেদওয়ান রনির ‘ঝালমুড়ি’ এবং কচি খন্দকারের আসিতেছে দুটি মন দুটি আশা’ ধারাবাহিক দুটিতেও দেখা যাবে এই জুটিকে। এ ছাড়া এখন হিমেল আশরাফের ‘একদিন ছুটি হবে’ (এনটিভি) ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন শবনম ফারিয়া। তিনি জানালেন, এখন শুধু একটাই প্রচারিত হচ্ছে, সামনে আরও চারটা আসবে একসঙ্গে।

ওদিকে কয়েকদিন আগে চ্যানেল নাইনে শেষ হয়েছে তৌসিফের ‘রাব্বু ভাইয়ের বউ’। এনটিভিতে এখন চলছে ‘ফ্যামিলি প্যাক’। সামনে আসবে গোলাম রাব্বানীর রচনা ও জয়ন্ত রোজারিওর পরিচালনায় ‘থ্রিজি’।

এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে যাওয়া যাক। শবনম ফারিয়াকে দেখলেই টমবয় মনে হয়। মন্তব্যটা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি একটু টমবয় হা হা হা। ’ তার ছোটবেলা কেটেছে মফস্বলে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। বাবার যেখানে পোস্টিং হতো সেখানেই থাকতেন তারা। বাবা অবসর গ্রহণের পর ঢাকায় স্থায়ী হয়েছেন। অভিনয়ের বাইরে ছোটবেলায় গান শিখতেন শবনম ফারিয়া। এইচএসসি পর্যন্ত গান করতেন। তার আর কী কী গুণ আছে? ‘অভিনয় ছাড়া এখন আর কোনো গুণ নাই বোধহয়! আচ্ছা আমি তো একটা লক্ষ্মী মেয়ে, এটাই আমার গুণ। আব্বু-আম্মুর সব কথা শুনি, ঠিক সময়ে শুটিংয়ে যাই হা হা হা। ’ এখন তার পড়াশোনায় বিরতি চলছে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। মাস্টার্স শুরু করবেন খুব তাড়াতাড়ি। পড়াশোনা শেষ হলে কোনো পত্রিকায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা আছে। কেনো? শবনম ফারিয়া বললেন, ‘ছোটবেলায় আমি সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম। এখনও ইচ্ছা আছে। ’

তৌসিফের স্বপ্ন ছিলো ফুটবলার হওয়া। ওটাই ভালো খেলতেন। এআইইউবি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের সময় ফুটবলার দলের অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু একটা সময় তিনি বুঝতে পারলেন তার ফুটবলার হওয়া হবে না। ‘ফুটবলার হতে গেলে ১২-১৩ বছরে শুরু করা উচিত। কিন্তু আমার শুরুটা হয়েছিলো ১৯-২০ বছরে। এ কারণে নিজে থেকেই আর এ নিয়ে পড়ে থাকিনি। ’

শুরু থেকেই ঢাকার বাসিন্দা তৌসিফ। ব্যবসায়ী বাবা, গৃহিণী মা আর ছোট ভাই আসিফকে নিয়েই তার পরিবার। তিনিও গান-বাজনা করেন। এখনও গিটার বাজান। এ ছাড়া পুল খেলতে পারেন ভালো। পুল খেলে কয়েকটা টুর্নামেন্টও জিতেছেন। জাতীয় পর্যায়েও খেলেছেন। ২০১১ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তৌসিফ। তিনি কেমন ছেলে? ‘আমি আসলে প্র্যাকটিক্যাল, রিয়েলিস্টিক। আর আমাকে জেন্টেল রোমিও বলতে পারেন। ’

ছোট পর্দার গন্ডি পেরিয়ে তারা চলচ্চিত্রেও কাজ করবেন, ভক্তরা এমনটা চাইতেই পারে। তৌসিফ জানিয়ে রাখলেন, ভবিষ্যতের কথা আগেভাগে না বলাই ভালো। ব্যাটে-বলে সব মিলে গেলে বড় পর্দার তাকে দেখা যেতেও পারে। আর শ.ফারিয়ার কথা হলো, ‘ছবি করাটা হলো অভিনয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা। অবশ্যই কাজ করতে চাই। কিন্তু ভালো গল্প হতে হবে অবশ্যই। আমি নাটকের সময় গল্প-চরিত্র নিয়ে অনেক সচেতন থাকি। ছবির ক্ষেত্রে তো আরও বেশি থাকবো। ’

ছবি তোলার জন্য আলোকচিত্রীর সামনে পোজ দেওয়া শেষে গাড়িতে উঠলেন দু’জনে। তারা বিয়ে করবেন কবে, এ প্রশ্নটা না করলেই নয়! শবনম ফারিয়ার সহজ কথা, ‘বিয়ে তো আমার হাতে নাই, আল্লাহর হাতে। কাল হতে পারে, আবার পাঁচ বছর পরেও হতে পারে। কিন্তু বাসা থেকে ছেলে দেখা হচ্ছে। আমাকেও বলেছে দেখতে। কাউকে পছন্দ হলে জানাতে। আমিও মনে মনে খুঁজছি। হা হা হা। ’ আর তৌসিফ? ‘যখন শবনম ফারিয়ার বাচ্চার বয়স হবে আট বছর!’

বাংলাদেশ সময় : ২২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ