ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

‘ফিউরিয়াস সেভেন’ দেখুন ঢাকায়ও!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫
‘ফিউরিয়াস সেভেন’ দেখুন ঢাকায়ও!

‘ফিউরিয়াস সেভেন’ বহুল প্রতীক্ষিত ছবি। এর অনেক কারণ আছে।

সবচেয়ে বড় কারণ পল ওয়াকারের আকস্মিক মৃত্যু। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ছবিটির কাজ করেছিলেন বিখ্যাত এই মার্কিন অভিনেতা। প্রায় অর্ধেক ছবির কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন তিনি। ব্রায়ান ও’কনোর চরিত্রের এই অভিনয়শিল্পীর মৃত্যুতে ছবির কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। স্থগিতও হয়ে যায়। শেষমেষ তা আর আটকে থাকেনি। জীবন এমনই! ছুটে চলাই যার অপর নাম। এই সিরিজের পরতে পরতেও আছে সেই বার্তা।  

পল ওয়াকারের অসমাপ্ত কাজ করেছেন তারই ছোট দুই ভাই ক্যালেব ওয়াকার ও কোডি ওয়াকার। ডাবিংও করেছেন তারা। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজ দিয়েই মূলত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পল। তার প্রস্থানে গোটা হলিউড শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি নেই, এটা মনে হলে এখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ভিন ডিজেল। তাই পলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি নিজের কন্যাসন্তানের নাম রেখেছেন পলিন। ছবিটির প্রিমিয়ারে বন্ধু ও সহশিল্পী সম্পর্কে বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে ৪০ বছর বয়সী ডিজেলের চোখ। তিনি বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনায় আমার সেরা বন্ধুকে হারিয়েছি, আমার এক ভাইকে হারিয়েছি। এই ছবি পাবলোর (পলকে আদর করে এই নামে ডাকতেন) জন্যই তৈরি করা। এটি ভালোবাসার পরিশ্রম। ’

পল ওয়াকারের মৃত্যুই শুধু নয়, ছবিটির জন্য ধাক্কা হয়ে এসেছিলো কলোরাডোতে দৃশ্যায়ন করতে যাওয়া। সেখানে দু’দিন কাজ করার পর ব্যয়বহুল সেট নষ্ট হয়ে যায় ভারি বর্ষণে। প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে সবাই কলোরাডো ছাড়তে বাধ্য হন। এ ছাড়া এবারই প্রথম এই সিরিজের কোনো ছবির দৃশ্যধারণ হলো কানাডায়। দৃশ্যধারণের কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি গাড়ির যন্ত্রাংশ দিয়েছে ম্যাকাফি রেসিং। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর আগের সব ছবির চেয়ে এর দৈর্ঘ্য বেশি- ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট।  

‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজ মানেই রুদ্ধশ্বাস এবং অকল্পনীয় সব মুহূর্ত। ‘টোকিও ড্রিফট’ থেকে ষষ্ঠ কিস্তি পর্যন্ত টানা পরিচালনা করেছেন জাস্টিন লিন। কিন্তু ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিক্স’ ছবির পোস্ট-প্রোডাকশন চলাকালেই তাকে সপ্তম কিস্তির প্রি-প্রোডাকশন শুরু করতে হতো। এতে মান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে ‘ফিউরিয়াস সেভেন’ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেমস ওয়ানকে। তিনি ক্যারিয়ারজুড়ে পরিচালনা করেছেন ভৌতিক ধাঁচের ছবি। ভূতের বাইরে মানুষ নিয়ে এটি তার দ্বিতীয় ছবি। আকিরা কুরোসাওয়ার ‘সেভেন সামুরাই’ ছবির নামের অনুপ্রেরণায় তিনি এই সিরিজের নতুন কিস্তির নাম রাখেন ‘ফিউরিয়াস সেভেন’।  

শুধু আমেরিকা নয়, সারাবিশ্বে একযোগে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে ছবিটি। ৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও ছবিটি মু্িক্ত দিচ্ছে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স। তাই ঢাকার দর্শকরাও দেখতে পারবেন ভিন ডিজেল ও পল ওয়াকারের দোস্তি। মজার বিষয় হলো, চতুর্থ কিস্তি ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল। লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে ও রাশিয়ায় এটি মুক্তি পাবে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে। এর আগে এই সিরিজের কোনো ছবি এই প্রযুক্তিতে আসেনি। ১৯ কোটি ডলার বাজেটে নির্মিত ছবিটির পরিবেশক ইউনিভার্সাল পিকচার্স।  

এবারের ছবিটি আগের ছবিগুলোর তুলনায় আরও দুর্ধর্ষ এবং ধুন্ধুমার অ্যাকশনে ভরপুর। এরই মধ্যে ট্রেলার সাড়া ফেলেছে। সম্প্রতি বর্ধিত আরেকটি ট্রেলার ক্লিপও প্রকাশিত হয়। ছবিটির বর্ধিত ট্রেলারে মুক্তি পাওয়া উড়ন্ত কার্গো বিমান থেকে গাড়ি নিয়ে লাফিয়ে পড়ার মতো দুরন্ত অ্যাকশন দৃশ্যে পল ওয়াকারের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন ভিন ডিজেল, ডোয়াইন দ্য রক জনসন, মিশেল রড্রিগেজ, জর্ডানা ব্রিউস্টার, টাইরিস গিবসন, লুডাক্রিস, এলজা প্যাটাকি ও লুকাস ব্ল্যাক। তাদের মধ্যে লুক হবস চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সাত মাস কঠোর নিয়মের মধ্যে ছিলেন রেসলিং তারকা দ্য রক। অবশ্য দৃশ্যধারণ না পেছালে তার কাজই করা হতো না। কারণ তখন তিনি ব্যস্ত ছিলেন ‘হারকিউলিস’ (২০১৪) নিয়ে।  

সপ্তম কিস্তিতে মন্দ মানুষ হয়েছেন ব্রিটিশ অভিনেতা জেসন স্ট্যাথাম। এতে তার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো অভিনয় করেছেন টাইরিস গিবসন। মজার বিষয় হলো, তাদের অভিনীত ‘ডেথ রেস’ (২০০৮) ছবিটিও ছিলো গাড়ি তাড়াকেন্দ্রিক। মার্কিন অভিনেত্রী রন্ডা জিয়ান রুসির এটি দ্বিতীয় ছবি। তার প্রথম ছবি ‘দ্য এক্সপেন্ডেবলস থ্রি’তেও (২০১৪) ছিলেন স্টেথাম। তিনি বলেছেন, ‘এ ছবির কাজ করা ছিলো খুব কঠিন। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বাস্তবসম্মত করতে যতোটা সম্ভব ঝুঁকি নেওয়া হয়েছে। সেগুলো অবিশ্বাস্য। ’

এবারই প্রথম সিরিজটিতে কোনো অস্কার মনোনীত অভিনেতাকে দেখা যাবে। তিনি হলেন ডিমন হানসাউ। ‘ইন আমেরিকা’ (২০০২) এবং ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ (২০০৬) ছবি দুটির জন্য সেরা সহ-অভিনেতার বিভাগে মনোনয়ন পান তিনি। এ ছাড়া বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন সময় ফাঁকা না থাকায় কাজ না করলেও বলিউড অভিনেতা আলি ফজলকে দেখা যাবে স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রে। অস্ট্রেলিয়ান গায়িকা ইজি অ্যাজালিয়ার অভিনয়ে অভিষেক হলো এ ছবি দিয়ে। তিনি অভিনয় করেছেন স্বল্প উপস্থিতির নারী কার-রেসারের ভূমিকায়। অভিনয়ে অভিষেক হয়েছে মার্কিন সংগীতশিল্পী রোমিও সান্টোসেরও। থাই অভিনেতা টনি জা এবারই প্রথম ইংরেজি ভাষার ছবিতে কাজ করলেন। তবে ৩৮ বছর বয়সী এই থাই তারকার সঙ্গে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভঙ্গের কারণে থাইল্যান্ডের একটি আদালত গত ২৭ মার্চ এক রায়ে ‘ফিউরিয়াস সেভেন’-এর প্রদর্শনীর ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তবে তা কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।  

এই সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’ মুক্তি পায় ২০০১ সালে। সাড়ে ১৪ কোটি ডলার আয় করার ঠিক দুই বছর পর ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘টু ফাস্ট টু ফিউরিয়াস’ আয় করে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এমনকি ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘টোকিও ড্রিফট’কে সরাসরি হোম ভিডিওতে পাঠানোর কথাও ভাবা হয়েছিলো। তবে এই ফ্রাঞ্চাইজিকে পুনরুজ্জীবিত করেন ভিন ডিজেল। তৃতীয় ছবির পরে সাফল্য পুনরুদ্ধারে প্রযোজনা সংস্থা ইউনিভার্সেল পিকচার্স ফিরে যায় সিরিজের প্রথম ছবির তারকা ভিন ডিজেলের কাছে। ‘টোকিও ড্রিফট’-এ ভিন ডিজেলের ফিরে আসা ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ জাগালেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। মাত্র ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করে ‘টোকিও ড্রিফট’। ২০০৯-এ সিরিজের চতুর্থ ছবি সাড়ে ১৫ কোটি ডলার, ২০১১ সালে পঞ্চম কিস্তি ‘ফাস্ট ফাইভ’ ২১ কোটি ডলার এবং ২০১৩ সালে ষষ্ঠ ছবিটি আয় করে ৭৮ কোটি ডলার।  

আগের ছয়টির মতো ‘ফিউরিয়াস সেভেন’ও যে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে, তা সহজেই অনুমেয়। ট্রেলারের দর্শকসংখ্যঠন বলছে, এটি দেখতে কতটা মুখিয়ে আছেন সবাই। ব্যবসার মাঠে ছক্কা হাকিয়ে এটি চলতি বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে হলিউড টপচার্টে জায়গা করে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। নামের সঙ্গে মিল রেখেই থাকবে আয়ের গতি, এমনটাই মনে করছেন হলিউড বিশ্লেষকরা। ভিন ডিজেল তো আরেকধাপ এগিয়ে মন্তব্য করে ফেলেছেন, এটি আগামী বছরের অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতবে! পল ওয়াকারের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে এটা হতেই পারে বলে মনে করছেন ৪৭ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেতা।  

 

বাংলাদেশ সময় : ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ