ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

বাবা হিসেবে আজ তাদের প্রথম বাবা দিবস

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
বাবা হিসেবে আজ তাদের প্রথম বাবা দিবস (বাঁ থেকে) রিয়াজ, অপূর্ব, রওনক হাসান ও আফরান নিশো

বৃষ্টির দিন। দমকা হাওয়া দিচ্ছে।

মাঝে মধ্যে প্রবল শব্দে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে বজ্রপাত। বেলকনিতে অপূর্ব বসে আছেন গিটার হাতে। পাশের নিচু আকৃতির টুলটা ছেলে আয়াশের। অপূর্ব গান গাইছেন। ছেলে বাবাকে ধরে ধরে ওঠার চেষ্টা করছে। অর্থহীন সব শব্দ দিয়ে গলা মেলাচ্ছে। গত রাতে মোবাইলে এমনই একটি ভিডিও দেখাচ্ছিলেন অপূর্ব।

জুনের ২৭ তারিখ এলেই আয়াশের বয়স এক বছর পূর্ণ হবে। এদিন অপূর্বরও জন্মদিন। বহু বছর ধরে নিজের জন্মদিনটাকে নিয়ে ভেবেছেন, উদযাপন করেছেন। দিনটা একই আছে; কিন্তু এখন সমস্ত উদযাপন-আনন্দ-উল্লাস আছড়ে পড়েছে আয়াশের ছোট্ট-নরম পায়ের কাছে। এখন ছেলেই প্রধান মুখ্য, অপূর্ব গৌণ। প্রতিটি বাবার এখানেই তো স্বার্থকতা!

অপূর্ব শোনাচ্ছিলেন, এই বয়সেই ছেলে তার কতো সাবধানী! গভীর রাতে শেষ কলিংবেলটা যখন বাজে, ছেলে তার কিভাবে ওৎ পেতে থাকে বাবার কোলে আসার জন্য! ছেলের সঙ্গে এমনই অসংখ্য মুহূর্ত, যা লিখে ঠিক বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না, ওগুলোই অপূর্বকে জীবনের নতুন অর্থ শিখিয়েছে।

আমেরার বয়স এখনও এক মাসও হয়নি। ৩০ মে দুপুরে ওর জন্ম। শক্ত-সামর্থ্য হাতে রিয়াজ যখন সন্তানকে ধরে তুলে নিলেন অনভ্যস্ত কোলে, সেই সময়টি ছিলো নিশ্চয়ই স্মরণীয়। আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন। সন্তানকে কোলে তুলে চিরকাল ‘বাস্তববাদী’ ঢংয়ে চলা একজন পুরুষ যখন কাঁদে, পৃথিবীর যাবতীয় আবেগ অর্থহীন হয়ে পড়ে এ দৃশ্যের কাছে। রিয়াজ-তিনা সংসার শুরু করেছেন, আট বছর হয়ে গেছে। এতোদিনের সংসারে আমেরাই প্রথম সন্তান। তাদের মেয়ে। তাদের মা। আমেরাতেই তাদের পৃথিবী।

আফরান নিশোর মুখ থেকে এখন একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘ছেলে হয়েছে না!’ প্রসঙ্গটা অর্থকড়ি হোক, কিংবা গভীর রাতে আড্ডার প্রলোভন। মুখটা হালকা শুকনো করে নিশো যখন কথাটি বলেন, খুব করুণ শোনায়। ছেলের জন্য তার বড্ড মায়া! অথচ নির্ভানের জন্মের আগে এই নিশো একেবারেই অন্য রকম ছিলেন। মধ্যরাত ছিলো তার কাছে দুপুরের মতো। ইচ্ছেমতো আড্ডা, ঘোরাঘুরি, উত্তাল উচ্ছাস। এখন একটু আগেভাগে বাড়ি ফিরতে চান। সন্তানের হাসিমুখটা দেখে ঘুমাতে যাওয়া কি যে আনন্দ!

সাত মাসের রণজয় এরই মধ্যে শিখে নিয়েছে সকালবেলা কোনোভাবেই মাকে বিরক্ত করা চলবে না। প্রশস্ত বিছানায় তাই সে হাতে-পায়ে ভর দিয়ে, খুব সাবধানে, বাবা রওনক হাসানের দিকে এগিয়ে যায়। পাশে বসে। রওনকের তখনও ঘুম ভাঙেনি। ছেলে মুখে-গলায়-পেটে তার নরম-ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে গুঁতো দেয়।

সারাদিন রণ বাবাকে দেখে না। রাতেও না। রওনক যখন কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরেন মধ্যরাতে, রণো তখন ঘুমের রাজ্যে। সকালবেলা তাই হয়তো বাবাকে ঘুমাতে দেখে তার ভালো লাগে না। রওনক বলছেন, ‘প্রতিদিন সকালে ওর হাতের ছোঁয়াতেই আমার ঘুম ভাঙে। চোখ খুলে যখন ওর দিকে তাকাই, ও যে হাসিটা দেয়; আমি কি করে বোঝাবো যে আমার কেমন লাগে! আমার পাগল পাগল লাগে। পৃথিবীতে এর চেয়ে শান্তি আর নেই। ’

এতোদিন তারা সবাই এই দিনে সন্তান হয়েই ছিলেন। বাবা হিসেবে আজ তাদের প্রথম বাবা দিবস। শুভেচ্ছা তাদেরকে।

বাংলাদেশ সময় : ১২০০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ