ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

লোপামুদ্রা মিত্রের সঙ্গে কিছুক্ষণ

ফেরার আগে দশ মিনিটের আলাপ

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৫
ফেরার আগে দশ মিনিটের আলাপ লোপামুদ্রা মিত্র / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাতে একদমই সময় নেই। ঢাকা ছাড়বেন, ফিরবেন কলকাতা।

বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ফ্লাইট। শুক্রবার (২৪ জুলাই)। ঘড়ি কাঁটায় আড়াইটার ঘর পেরিয়েছে। শেষ মুহূর্তের গোছগাছ সেরে নিচ্ছেন লোপামুদ্রা মিত্র। চেক-আউটের প্রক্রিয়া চলছে। নিচে বিমানবন্দরগামী গাড়ি প্রস্তুত। ওই সময়ে গুলশান ক্লাবে ঢুকে পড়ি আমরা। দশটা মিনিট সময় পাওয়া গেলেও হবে। লোপা রাজি হলেন।

ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘খুব ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশের কিছু সুতির শাড়ি দেখবো। কিন্তু সময় পেলাম কই! পরেরবার আসলে দেখা যাবে। ’ সুতি শাড়ি কিনতে না পারার জন্য তার এই যে আফসোস, সেটা কিন্তু লোপা নিজে পরবেন বলে নয়। ক্রেতাদের জন্য। ক্রেতা! লোপা কাপড়ের দোকান খুলে বসেছেন নাকি?

ব্যাপারটা তেমন নয়, আবার অনেকটা ওই রকমই! খোলাসা করা যাক। বুটিক দিয়েছেন তিনি। নাম ‘প্রথা’। মূলত রূপা, সেমি-প্রেশাস স্টোনের ফিউশন গয়না আর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী শাড়িই পাওয়া যাচ্ছে তার ‘প্রথা’য়। গোটা ভারত চষে, অথবা ভারতের বাইরেও, যেখানেই গান করতে যাচ্ছেন; একনজর দেখে নিচ্ছেন সেখানকার সনাতনী পণ্যগুলো। সাক্ষাতের শুরুতেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়, বুটিক দিয়েছেন কবে? শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকেন। বোঝাই যাচ্ছে, হালকা কৌতূহল, বিস্ময়ও- কীভাবে জানাজানি হলো?

যদিও তার প্রশ্নটা অব্যক্তই থাকে! কিন্ত আমাদের উত্তর ঠিকই বেরিয়ে যায়, ‘রূপঙ্কর দা (সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর) বলেছেন। তার জিজ্ঞাসা, ‘রূপঙ্কর বলেছে যে লোপাদি বুটিক করেছে?’ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তালাশ মিডিয়ার হীরক দাশগুপ্ত। তার দিকে ঘুরে বলেলেন, ‘দেখেছো হীরক, রূপঙ্কর বলে দিয়েছে!’

অবস্থাটা এখন এমন, একজন শিল্পীকে পুরোপুরি শিল্পী হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে অভিনয় হোক, গান, চিত্রকলা, আর্টের যে কোনো ফর্ম। গানে তো ভয়াবহ অবস্থা চলছে। পাইরেসি, কপিরাইটস নিয়ে ঝামেলা, ভিনদেশি গানের রমরমা বাজার; বাংলা গানে সমস্যার শেষ নেই। সমস্যাটা দুই বাংলাতে মোটামুটি একই। বেঁচে থাকার জন্য একজন শিল্পীকে তাই গানের পাশাপাশি অন্যকিছু ভাবতেই হচ্ছে। লোপামুদ্রার বুটিক খোলার শানে-নুযুলও কি এটাই?

লোপা যে উত্তরটা দিলেন, সেটা সরাসরি এমন সমস্যার ফল নয়; কিন্তু একটু ঘুরিয়ে ধরলে ওই একই কথা। তিনি বললেন, ‘গান নিয়ে তো সারাটা জীবন এভাবে পারফর্ম করে বেড়াতে পারবো না। বয়স বাড়ার সঙ্গে মাসে ২০-২৫টা বা তারও বেশি শো; যেমনটা এখন করি, সেটা পারবো না। রিটায়ার একটা সময়ের পর তো সব শিল্পীকেই করতে হয়। আমার সমস্যা হলো অলস হয়ে বসে থাকতে পারি না। একটা না একটা কিছু আমাকে করতেই হবে! তাই এই পুরনো শখে ফেরা। ’

ওদিকে ফেরার গাড়ি বারবার তাগাদা দিচ্ছে, ‘দেরি হয়ে যাচ্ছে দিদি। ’ কিন্তু দিদি তখন আলাপে মশগুল। ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ‘এই হয়ে গেছে। আর একটু। ’ বলছেন তাদের সঙ্গীত শিল্পের সমস্যা-সংকটের কথা, ‘আমাদের আরও বাজে অবস্থা। বাংলাদেশে যেহেতু পুরো ভাষাটা বাংলা, আমাদের ওখানে তো ভাষাটাও বাংলা নয়, আর হিন্দি তো চলেই। আমাদের ওখানে রয়্যালিটি-টয়্যালিটির কোনো গল্প নেই। সিডিও বিক্রি হয় না। অনলাইনে কি হচ্ছে, সেটারও কোনো খবর নেই। খুবই বাজে অবস্থা। আমার দশ বছরের কাজের জন্য সারেগামা থেকে কিছু রয়্যালিটি পাই, সে আর কদিন পাবো!’

কিন্তু তারপরও সমকালীন আধুনিক বাংলা গানে কলকাতা এখন বেশ এগিয়ে। এতো সমস্যার ভেতর দিয়েও ভালো গান বের হচ্ছে। বাংলাদেশে বরাবরই কলকাতার বাংলা গানের শ্রোতা ছিলো; এখনও আছে। এখন আরও বেড়েছে বোধহয়। প্রসঙ্গ ওঠালে লোপামুদ্রার ঠোঁটে ভেসে ওঠে হালকা হাসি, ‘আমাদের ওখানে কিন্তু আবার এখানকার গান বেশ শোনে। যেমন আমি বলছি, প্রচুর লোক অর্ণবের গান শোনে। অর্ণব খুব জনপ্রিয় ওখানে। আবার নতুন প্রজন্ম আনুশেহর গান শুনতে পছন্দ করে। আমার তো সুমির গান (চিরকুট ব্যান্ডের) খুব ভালো লাগে। সায়ানের গানও ভালোবাসি। ’

গানের পৃষ্ঠপোষকতার প্রসঙ্গ এলে লোপামুদ্রা কলকাতার চেয়ে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখতে চান, ‘মুশকিল হচ্ছে ওই জায়গাটায়, আমাদের ওখানে গান শোনানোর, চালানোর জায়গা কমে গেছে। যা শুনি সেটা ইউটিউব থেকে ম্যাক্সিমাম। কিন্তু এখানে যে এফএম চলে, এতোগুলো চ্যানেলে বাংলা গান হয়; আমাদের ওখানে কিন্তু সেটা নেই। আমরা অত্যন্ত বিরক্ত। নানান রকম সিরিয়াল চলে, কিন্তু বাংলা গানের জন্য আলাদা করে কোনো কিছু নেই। ’

অথচ কুড়িটা বছর। গানে গানে লোপামুদ্রার দুই দশক পূর্ণ গেলো এ বছর। এতোদিন পরে এসেও, শ্রোতাদের কান পর্যন্ত গান পৌঁছে দেওয়ার সংগ্রামটা তাকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে। লোপামুদ্রা রবীন্দ্রসংগীতেই বেশি পরিচিত। অথচ গত ২০ বছরের একটি দিনও তার কণ্ঠ শুধু রবীন্দ্রসংগীতেই আটকে ছিলো না, আরও অনেক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মতো। লোপা প্রচুর সিনেমার গান গেয়েছেন। তার কণ্ঠে কবিতা গান হয়ে উঠেছে। এখন ফোক নিয়েও বেশ মেতেছেন।

আর সময় পাওয়া যাবে না। আলাপ শেষ করতেই হবে। গাড়িতে উঠে গেলেন লোপামুদ্রা মিত্র। জানালেন, সামনের মাসেই আবার আসছেন এ দেশে।

বাংলাদেশ সময় : ১৪২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ