ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

তবু কেনো জেমস হারিয়ে গেলেন না?

দেব জ্যোতি ভক্ত (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৫
তবু কেনো জেমস হারিয়ে গেলেন না? ছবি: নুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

স্নিগ্ধ অন্ধকার, নীল ঘোড়ার মায়াপথ, নিষিদ্ধ আত্মার বুকপকেট অথবা কিছু হলদে মনের বাহারি কল্পনা থেকে কেউ একজন আলো জ্বালিয়ে রাখে। বাতিঘর হয়ে থাকে।

অপেক্ষার একটা স্টেশন হয়ে থাকে। বিদঘুটে রাত্তিরে নির্জন কোলাহলের গল্প হয়ে থাকে। জেমস- এই নামটার সঙ্গে আমাদের বেড়ে ওঠার গল্প জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছে কৈশোরের মাটি, মধুমতি নদী, হারিকেন আলোয় ভিজে যাওয়া সন্ধ্যা, মায়ের শাড়ির গন্ধ আর কোনো এক বালিকার চুল ওড়া বিকেলের হাওয়া।

আমার মতো অনেকের কাছেই জেমস এক বিস্ময়। বাড়িতে পড়ার ঘরের বেড়ায় তিনজনকে পাশাপাশি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। বাঁ-পাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাঝে জেমস আর ডান দিকে কাজী নজরুল ইসলাম। তখন কেবল হাইস্কুলে উঠেছি। কিছু রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছিলো একান্ত গোপনে, বয়সের দোষে, হাওয়ায় হাওয়ায়। বাড়িতে যে ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো সেটা সাইজে ছিলো বিশাল বড়, সব ধরণের গান বাজানো হতো।

সকালে মা ভক্তিগীতি শুনতেন, সন্ধ্যায় বাবা শুনতেন ভারতীয় বাংলা গান। মাঝে মধ্যে কীর্তনও বাজানো হতো। দুপুর গড়িয়ে যখন প্রায় বিকেল বিকেল ভাব তখন আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম। শিক্ষক মা-বাবা দু’জনই তখন তাদের স্কুলে। আমি ফিরেই জেমসকে শুনতাম। রোদ পড়া আলোয়- কিছুটা গরম, কিছুটা ক্লান্তি আর অদ্ভুত বাড়ন্ত মনের ব্যাকরণ আমাকে স্বস্তি দিতো। আমি জেমসের গানে খুঁজে পেতাম মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প অথবা কোনো দৃশ্যকল্প। গানের কথা, সুর, ইনস্ট্রুমেন্ট বা গাওয়ার ভঙ্গিতে বাংলা গানের যে ট্রান্সফর্মেশন জেমস ঘটিয়েছেন তা তো তুলনাহীন, বিশুদ্ধ সত্যের মতো।

এরপর কতো গল্প... গ্রাম থেকে ঢাকা আসা। ক্যাসেট প্লেয়ার বিলুপ্ত হলো, চিঠির যুগ শেষ হলো, হাতে হাতে মোবাইল চলে এলো, ফেসবুক মুখর হয়ে উঠলো সবাই। তবু জেমস কেনো হারিয়ে গেলেন না? কেনো তিনি আগের মতোই আছেন জনতার কোলাহলে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বাংলা গানের জলহাওয়া বোঝাটা জরুরি, জেমসের গান বোঝাটাও জরুরি।

জেমসের গান স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত। ক্রমাগত ক্ষরণের ভাষা তার গানে আছে, যা গণমানুষ ক্ষত হিসেবে বয়ে বেড়ায় দিনের পর দিন। তার উচ্চারণের পূর্ণ বিকাশ পূর্ণতা নিয়ে আসে। সৃষ্টি করে সম্ভাবনার রহস্যসাঁকো আর সীমাবদ্ধতার অনাসক্ত আড়াল। তাই তাকে এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। আর এই কঠিন কাজটা করার এতো দায় তো জনতার নেই। নাগরিক জীবন ঘুম ভেঙে দেখে অট্টালিকার মতো বিলবোর্ড। সেটার শরীর জুড়ে রগরগে চোখে তাকিয়ে বাণিজ্যিকীকরণ নয়, নরম ভালোবাসা। ভক্তের ভালোবাসা।

দীর্ঘ এক বিস্তৃত জীবনের অংশবিশেষ কেটে এনে গান আকারে জোড়া দিয়ে জেমস জনতার মাঝে পরিবেশন করেছেন, তা তো শুধুই অনিবার্য এক মায়াবী ফুলের পাঁপড়ি নয়, সংগীতের একটা আর্টফর্মও। এটা তিনি রপ্ত করেছেন বলেই তালিকার বাইরে উজ্জ্বল, সাফল্যের কাঠামোজনিত নক্ষত্র। গান গাইতে তো অনেকেই পারে, কিন্তু জেমসের মতো গান নির্মাণ করতে পারে ক’জন?

শুরু থেকেই গান ক্রমপ্রসারমাণ। গান দিয়ে গানের সীমারেখা ভেঙে ফেলার প্রবণতাযুক্ত জেমসকে আজ বলা প্রয়োজন- ‘শুভ জন্মদিন… আরও গান জন্ম দিন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ