ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

পীযূষের বিদায় বিষয়ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
পীযূষের বিদায় বিষয়ক পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়

- ও ভাই, বেঁচে আছে?
- না। মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে।


লোক দু’টির কথা শুনে এগিয়ে এলো আরও একটি কণ্ঠ, ‘বেঁচে আছে, বেঁচে আছে। ’ মোবাইলের ক্যামেরাটা একটি গাড়ির দিকে তাক করা। দুমড়ে মুচড়ে গেছে গাড়ি। অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে চেষ্টা করছে ড্রাইভিং সিটে বসা ব্যক্তিটিকে বের করে আনার। সহজে পারা যাচ্ছে না। গাড়ির সামনের অংশটা ভেঙেচুরে ভেতরে ঢুকে গেছে একেবারে। চাপা পড়েছে পীষূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ। তিনি অজ্ঞান, রক্তাক্ত। পরনের সাদা শার্টটি রক্তে ভিজে একাকার।

পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় তখনও বেঁচে ছিলেন। আরও চারদিন যুদ্ধ করেছেন মৃত্যুর সঙ্গে। সেদিন সপ্তমী। বিকেলে হাওড়ার দিকে ফিরছিলেন কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। গাড়িটা তিনিই চালাচ্ছিলেন। পাশের সিটে নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেন। সাঁতরাগাছি সেতুতে আসতেই ঘটনাটা। লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ। তারপর নার্সিংহোম, ভেন্টিলেশন, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা পেরিয়ে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় এখন কেবলই স্মৃতি। বিকেলের দিকে যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেখানকার লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় তাকে। সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও এখন ভেসে বেড়াচ্ছে ইউটিউবে।

পীযূষের মৃত্যুর পর ওপারের বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশক দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘ওর অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে পুজোটাও আমাদের এলোমেলো কেটেছিলো। ’ কার এলোমেলো কাটেনি! কলকাতার মঞ্চ-টিভি-সিনেমাপাড়া পীযূষ চলে যাওয়ার খবরে নিথর। মৃত্যুর চারদিন পার হতে চলেছে, তবু এখনও। তিন দশক ধরে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন, আবেগ ঢেলে দিয়েছেন টিভি সিরিয়ালে, অনবদ্য হয়ে থেকেছেন চলচ্চিত্রেও। হাসিখুশি-ছেলেমানুষি, ফলে অনুরাগী বেড়েছে দিনে দিনে। অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাই পীযূষের মৃত্যুর পর বললেন, ‘একটাই দুঃখ, ছেলেটা এটা বুঝতে পারলো না যে, ওর শরীরের একটা পাঁজর ভাঙলে কতোজন নাটক-প্রিয় মানুষের শরীরের কতোগুলো হাড় ভেঙে যায়!’

সৃজিত মুখার্জির প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’-এর প্রথম দৃশ্যটাই শুরু পীযূষকে দিয়ে। ওইভাবে ধরলে, পীযূষ একটা ভিত্তি। তার ওপর একটা ভবনের মতো করে বেড়ে উঠেছে সৃজিতের ক্যারিয়ার। বলছেন, ‘পীযূষদা আমার কাছে বাড়ির বড়দাদার মতো ছিলেন। নিয়মিত আড্ডাও হতো। ‘অটোগ্রাফ’-এর পর তার সঙ্গে আমার আর দ্বিতীয় ছবি হচ্ছে না বলে অনুযোগও করেছিলেন। ভেবেছিলাম পরের ছবিতে ওকে নেবো। হলো না!’ অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’তে ছিলেন পীযূষ। তার মৃত্যুর আগে অরিন্দম গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। ওখানে বসেই শুনেছেন দুর্ঘটনা, মৃত্যুসংবাদ। সৃজিতের মতো তিনিও ভেবে রেখেছিলেন, ‘আমার আগামী ছবিতে ওকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরেই ওকে সে কথা জানাবো। কিন্তু জানানো হলো না!’

আরও অনেকের মতো ব্যাংকে কলম ঘষার চাকরি দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পীযূষ। অভিনয়ের ঘোর নিয়ে যুক্ত হলেন মঞ্চে। ব্রাত্য বসু, বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখার্জি, রমাপ্রসাদ বণিক- এদের সঙ্গে মঞ্চে উঠেছেন, কাঁপিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অঞ্জন দত্ত, কৌশিক গাঙ্গুলি, অপর্ণা সেন- এদের হাত ধরে শুরু করেন টিভি নাটকে অভিনয়। তারপর চলচ্চিত্র। ১৯৯৪-এ ‘অমোদিনী’ দিয়ে শুরু, একে একে ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘ল্যাপটপ’, ‘আবর্ত’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘গয়নার বাক্স’, ‘চার’- সবই দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র।

ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পীযূষের নামের আগে ২৫ অক্টোবর থেকে শোভা পাচ্ছে ‘রিমেম্বারিং’। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘স্মরণীয়’। সবকিছুকে স্মৃতি করে দিয়ে পীযূষ চলে গেলেন। রেখে গেলেন একগুচ্ছ চরিত্র। এক পীযূষ বহুচরিত্র হয়ে ফিরে ফিরে আসবেন প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ