ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

শুভা মুডগালের সঙ্গে এক দুপুরে

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
শুভা মুডগালের সঙ্গে এক দুপুরে শুভা মুডগাল/ ছবি : নূর /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘তাহলে আমার ওজন অনেকখানি কমাতে হবে’- হাসতে হাসতে বললেন শুভা মুডগাল। তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই।

শাস্ত্রীয় সংগীত যারা শোনেন, খোঁজ রাখেন অল্প হলেও, শুভার নাম-পরিচিতি-ব্যপ্তি শোনা তো অবশ্যই, মুখস্ত হয়ে যাওয়ার কথা রীতিমতো। ভারতের এই বিদুষী ২৯ নভেম্বর দুপুরে শহর ঢাকায় বসে রসিকতার ঢংয়ে হোক, অথবা সিরিয়াসলি, যখন কথাটি বললেন, প্রসঙ্গ তখন গানকে পাশ কাটিয়ে কত্থকের আশপাশে ঘুরছে। এ তো হওয়ার কথা নয় সাধারণত! শুভা গানে মাতান পৃথিবী। তার সুর কিছুক্ষণ মাথার ওপরে উড়ে-ঘুরে, আয়েশে কানে ঢুকে; প্রথমে মস্তিষ্ক এবং আস্তে ধীরে পুরো শরীরে-রক্তকণিকায় বিশুদ্ধতার ঢেউ তোলে। পবিত্র করে।

তার সঙ্গে কেন নাচের আলাপ? উত্তর দিয়ে দেন তিনি। কবুল করে নেন, ‘হ্যাঁ, আমি ছোটোবেলায় বহুদিন কত্থকের তালিম নিয়েছি। ’ তো, সেই নৃত্যশিল্পীর সংগীতগুরু হয়ে ওঠার সিঁড়িগুলো-বাঁকগুলো বিস্ময়ের তো বটেই, প্রেরণারও। সে গল্প আপাতত তোলা থাক। শুভা মুডগালকে যখন বলা হলো, আবারও কত্থকে একটু হলেও, অল্প হলেও, তার দেখা মিলতে পারে কিনা! রসিকতা করে অমন উত্তরই দিলেন তিনি।

ওজন তার বেড়েছে সত্যি। বয়সও তো আর কম বাড়েনি। কিন্তু ফূর্তি-এনার্জি? তুলনাহীন। ইংরেজিতেই বলছিলেন সব। কিন্তু যখন স্মৃতি উল্টে চলে গেলেন ছোটবেলার কাছে, মায়ের কাছে, গুরুজীর কাছে; মাতৃভাষা হিন্দিই আশ্রয় হলো। যদিও আপাতদৃষ্টিতে ‘এর কোনো কারণ নেই’ বলা যেতে পারে, কিন্তু ‘আপাত’-ই তো আর সবকিছু নয়। অন্তর্গত বিষয়ও থাকে। যেভাবে শুভা বলে গেলেন, ‘আমার মা-বাবা দু’জনই ছিলেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ইংরেজির। তো, আগে আমি নাচ শিখতাম। মা পরামর্শ দিলেন গানেরও। তার কিন্তু কখনই এমন জোরালো ইচ্ছা ছিলো না যে, মেয়ে মঞ্চে নাচবে-গাইবে। তিনি আমাকে শিখতে বলতেন, শুনতে বলতেন, শুধু শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে। ’ কথাগুলোয় যে আবেগ, যে নষ্টালজিয়া, স্মৃতি-শ্রদ্ধার ফুলঝুরি- তা কি আর বিদেশী ভাষায় ফোটে ঠিকঠাক?

ঠিকঠাক ফোটে না শুধু খেয়ালে-ঠুমরিতে, শুভা মুডগালের প্রতিভা, নিজস্বতা। খেয়াল-ঠুমরি তার অনেক প্রিয় যদিও। কিন্তু তিনি তো এমন নয়, যেগুলো শিখেছেন, সেগুলোই ধুয়ে-মুছে পার করে দেবেন সারা জীবন। এমন তো অনেককেই দেখা যায়, যিনি রবীন্দ্রসংগীত করেন, অথবা নজরুল-লালন-ফোক; ঘরানার বাইরে পা-ই রাখেন না একেবারে। ও যেন পাপ! ছোঁয়াচে! অস্পৃশ্য!

শাস্ত্রীয় সংগীতের শুভা, খেয়াল-ঠুমরির শুভা, নব্বই দশকে এসে গান নিয়ে রীতিমতো এক্সপেরিমেন্টে নামলেন। পপ, ফিউশন তার কণ্ঠে পেলো অন্যমাত্রা। প্রশ্ন তাই জাগেই, ‘কোন চিন্তা থেকে এমন ভিন্ন চিন্তা?’ উত্তর জানার আগে কান সজাগ রাখতে হবে তার অন্য কথায়, ‘আমি বড় হয়েছি খুবই আধুনিক পরিবেশে। ’ যেখানে বাবা-মা দু’জনই, আশপাশের সবাই দারুণ শিল্পপ্রেমী। শুনতে উৎসাহিত করে গেছেন সারা পৃথিবীর গান, নানান ঘরানার গান। ছোটোবেলা থেকেই তিনি শুধু মন লাগিয়ে শুনে এসেছেন।

আড্ডায় তার কথার ফাঁকে ফাঁকে অন্যরা যখন ‘ইনসার্ট’ আকারে বলে উঠছিলেন এটা-সেটা, তিনি তালুতে মুখ রেখে কী রকম তন্ময় হলেন! তাকিয়ে থাকলেন একদৃষ্টিতে! মনোযোগি শ্রোতা বোধহয় একেই বলে! তো, যে কথা বলা হচ্ছিলো, আধুনিক পরিবেশে বড় হতে হতে, সারা পৃথিবীর সুর শুনতে শুনতে, শুভা মুডগাল হয়ে ওঠা তিনি বয়সকে হারিয়ে এখনও আধুনিক। নিজের ওয়েবসাইটে ব্লগআকারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখেন। আর ‘অনলাইনে শুনি। খোঁজ রাখি বৈশ্বিক শিল্পের’ বলে দেন শুভা।

কিন্তু এই বিদুষীও নাকি নার্ভাস! চিবুকে হাসি ঝুলিয়েই বলেন, ‘এখানে (ঢাকায়) শুনেছি, হাজার হাজার মানুষ রাত জেগে উচ্চাঙ্গ সংগীত শোনে। এতো দর্শকের সামনে কখনও গান করিনি। তাই খুশি তো লাগছেই। নার্ভাসনেসও। ’ স্নায়ুবিক দূর্বলতাকে দূরে সরিয়ে, শুভা মঞ্চে উঠলে, শহুরে রাতও কী রকম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে, সেটা তো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় দিনের লোকসমাগম দেখছেই।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
কেবিএন/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ