ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র

চার তরুণ নির্মাতার অভিজ্ঞতা

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
চার তরুণ নির্মাতার অভিজ্ঞতা

এখন যারা বয়সে তরুণ, সিনেমা বানাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কারও সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে তাদেরকে, তাদের সৃষ্টিকে।

তাই এগিয়ে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে। তবে কাজটি যে খুব সহজে করতে পেরেছেন, তা কিন্তু নয়। প্রতিবন্ধকতা আছে, প্রতিকূল পরিস্থিতি। আছে ‘ব্যবসা হবে কি-না’ এ রকম সংশয়ের তুফান। নির্মাতারা বাংলানিউজকে বললেন, ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা।

ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের ছাড়া আর কোনো ছবি চলবে না
মানিক মানবিক [শোভনের স্বাধীনতা]
মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একজন পরিচালকের বা সৃজনশীল ব্যক্তির কাছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করা ভাগ্যের ব্যাপার। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমি কেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করবো না? মুক্তিযুদ্ধ থেকেই তো আমাদের এই বাংলাদেশ। এই যে আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন বা আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি কিংবা আমরা আজকে ছবি করি, সবই তো মুক্তিযুদ্ধের কারণে। দেশটা হয়েছে বলেই তো আমরা এগুলো করতে পারছি।

মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, যে গল্প, যে ঐতিহ্য, সেটা আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর যে এতোগুলো জানালা আছে! অনেকগুলো জানালা, মুক্তিযুদ্ধের পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধের মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক, কতো রকমের গল্প আছে! তো, সব লেখক বা পরিচালক, তারা চেষ্টা করেন- আমাদের কোন জানালাটা দেখানো হয়নি! যদি ওইটাকে নিয়ে কাজ করা যায়! সফলতা-বিফলতা অনেক পরের ব্যাপার। যারা এ কাজটা করতে যায়, তাদেরকে আমরা স্যালুট করতে চাই। ইচ্ছা করলেই নাচাগানামার্কা একটা ছবি করা যেতো, সেটা বরং অনেক সহজ।

মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক সিনেমা বানানো অনেক কঠিন। কারণ, পর্দায় এটা কীভাবে আসবে, দর্শক কীভাবে নেবে- এটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। দর্শক এখন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কী দেখতে চায়- এ অনুসন্ধান আমরাও করি। দর্শক কি ডকুমেন্টেশন দেখতে চায়, নাকি ফিকশন! এই জার্নিটাও কিন্তু একজন পরিচালকের থাকে। তো, এসব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আবেগের ব্যাপার। আবেগের কারণে হোক, ভালোবাসার কারণে হোক। ভালোবাসা বলতে কী, আমার পরিবারে যেমন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আমার মামা একাত্তরে মিরপুরে নিখোঁজ হয়েছেন। এটাকে ঘিরে কিন্তু আমাদের পারিবারিক আবেগের ব্যাপারও আছে। আমার বাবার একজন চাচাতো ভাই নিখোঁজ হয়ে গেছেন। তো, যদি কখনও সুযোগ থাকে আমি একটা মুক্তিযুদ্ধের ছবি করতেই চাইবো। পেয়েও গেলাম। আমি একটা চিত্রনাট্য দিলাম, সরকার অনুদান দিলেন। ছবিটা করলাম।

আর প্রতিবন্ধকতা যেটা, ছবি করার প্রতিবন্ধকতা অনেক রকম। ঘটনাটা তো পঁয়তাল্লিশ বছর আগের। পঁয়তাল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ আর সেখানে নেই। এখনকার রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা সব পাল্টে গেছে। দৃশ্যধারণ করতে গেলে হয় স্টুডিওতে যেতে হবে, নয়তো খুঁজে খুঁজে পুরনো ওই চিত্র কোথায় আছে- বের করতে হবে। এছাড়াও আছে ধরেন, তখন যে চুলের স্টাইল, তখনকার ফ্যাশনটা কী ছিলো- সেটা কিন্তু আমার নিজে চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমি দেখতে পাবো সিনেমাতে, দেখতে পাবো স্টিল ফটোগ্রাফিতে। সেক্ষেত্রে আমি কী করেছি, ওই সময়ে যে সব চলচ্চিত্রগুলো হয়েছে বাংলাদেশে, ওগুলো দেখেছি। ‘মুক্তির গান’-এ তারা কী ধরণের পোশাক পরেছে, সেটা দেখে আমি ওই রকম করে পোশাক তৈরি করেছি।

প্রপসের একটা বড় সমস্যা আছে। ওই সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণী কীসে ভাত খেতো! সেটা কি চিনামাটির প্লেটে, নাকি টিনের থালায়, না কাসার থালায়! আমি গেলাম ওই সময়ে যারা ছিলেন তাদের কাছে, বললেন, ওই সময়ে কাসার থালায় ভাত খেতো। তো, ওই কাসার থালা আপনি এখন পাবেন কোথায়? এখন যে থালা এনে সেটে ফেলবেন, দেখলেই মনে হবে, নতুন একটা কাসার থালা। ওই লুকটা নেই, বিশেষ করে ডিজাইনটা নেই। কাঁচের জিনিসের যে ডিজাইন সেটা নেই।

আমি চকবাজার থেকে খুঁজে খুঁজে, কোনো ডিজাইন ছাড়া, কোনো ফুল নেই, পাতা নেই, এই ধরণের গ্লাস-মগ-জগ-থালা খুঁজে বের করেছি। এগুলো চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। একদম নিখুঁত না হলে, তখন আপনিই বলবেন, ভাই এটা কী বানালেন! প্রপস আপনি কী দেবেন, আপনি কী ফুল দেবেন? আমাদের দেশে এখন হাইব্রিড যে গোলাপটা আছে, এটা একাত্তরে ছিলো না। রজনীগন্ধা ছিলো না। আপনি টেবিলে যদি একটা গাঁদা অথবা জবা ফুল দেন, সুন্দর লাগবে না দেখতে।

পঁয়তাল্লিশ বছরের আগের রেডিও আপনি এখন পাবেন কোথায়? আমি একটা রেডিও মোহাম্মদপুরে পেলাম, সেটার দৈনিক ভাড়া চায় তিন হাজার টাকা! তারপর আমি সারা বাংলাদেশে যতো আত্মীয়-স্বজন যেখানে যারা আছে, তাদেরকে বললাম। এই ছবিতে আটটি রেডিও ব্যবহার করা হয়েছে। আমার সংগ্রহে তখন পনেরোটার মতো রেডিও চলে এলো। এর বাইরে আছে অস্ত্রের ব্যাপারটা। তখন বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল এবং চাইনিজ রাইফেল ব্যবহার করতেন। সেগুলো এখন পুলিশের কাছেও নেই, আনসারের কাছেও নেই। আর্কাইভে চলে গেছে। আর্কাইভ থেকে আনা, সেটাও প্রসেসের ব্যাপার। দেশে যখন এ রকম অবস্থা, তখন সরকারও আপনাকে এ অস্ত্র দিতে ভয় পাবে। এ রকম অনেক প্রতিবন্ধকতাই আছে।

আর যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে ব্যবসায়িক কোনো ফিডব্যাক নেই, প্রযোজকরা কেউ টাকা দিতে চায় না। আমি ‘শোভনের স্বাধীনতা’ বানাতে গিয়ে গত তিন বছরে একজন সহ-প্রযোজক খুঁজে পাইনি! এমনকি পোস্টার করার জন্য টাইটেল স্পন্সর, প্রচার-প্রচারণার জন্য, খুব কম টাকা, পাঁচ লাখ টাকা হলেই দিয়ে দেবো টাইটেল স্পন্সরটি, এ রকম কাউকেই পাইনি খুঁজে। সরকার আমাকে চব্বিশ লাখ টাকা দিয়েছে, ছবি করতে খরচ হয়েছে ষাট লাখেরও বেশি। আমার হাউস পেমেন্ট, মিউজিক, এডিটিং, ব্যাকগ্রাউন্ড পেমেন্ট বাকি আছে। বন্ধুদের কাছ থেকে লোন করেছি, আর্টিস্ট পেমেন্ট অনেক বাকি। এখন এটা করার পর ভবিষ্যতে হয়তো এ ধরনের ছবি আমি আর করতে চাইবো না!

আমি চাইবো, আচ্ছা এ ধরণের কোনো ছবি করি, যেটা করলে স্পন্সর মিলবে। কারণ আপনি টাকা না পেলে ছবি করবেন কীভাবে? আরেকটা ব্যাপার, দেশপ্রেম-দেশপ্রেম করে আমরা সবাই রাস্তায় খুব গলা ফাটাতে পারি। এই যে ধরণের ছবিগুলো আমরা করছি, এগুলো ছড়িয়ে দেয়া দরকার। কীভাবে? সিনেমা হল তো নেয় না। তাহলে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে- ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি চলবে, আর কোনো ছবি চলবে না।

হল মালিকরা সারাবছর ঝাকানাকা ছবি চালাক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রত্যেকটি সিনেমা হলে চলবে। সরকার যখন এ রকম নিয়ম করবে, দর্শকও কিন্তু ছবিগুলো তখন দেখবে। আরেকটা নিয়ম সরকার করতে পারে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যতো সরকারি বেসরকারি স্কুল-কলেজ আছে, সরকার একটা পরিপত্র জারি করতে পারে, বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হবে। তাহলে তরুণ প্রজন্ম ছবিগুলো দেখতে পাবে।

আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি
মাসুদ আখন্দ [পিতা]
২০১০ সালে আমার বাবা মারা যান সুইডেনে। ওইদিন আমি প্রথম নাটকটি পরিচালনা করছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পরে, আমি তখন বাংলাদেশে, এখান থেকে ছুটে যাই। আগেই বলে রেখেছিলেন যে, উনি পৃথিবীর যে দেশেই মারা যান, কবর যেন বাংলার মাটিতে হয়। আমরা পুরো পরিবার সুইডেনেই থাকি। ওখান থেকে বাবাকে দেশে আনতে আমি বড় একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই। পরে যখন বাবাকে কবর দিয়ে আসলাম, ভাবনা হলো, বাবাকে নিয়ে কিছু করবো। যেহেতু আমি ফিল্মমেকার, সিদ্ধান্ত নিই, বাবাকে নিয়ে সিনেমা বানাবো। ছবিটার নাম ছিলো প্রথমে ‘বাবা’, পরে হয় ‘পিতা’।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি আমার পরিবারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ আমার ছবিতে এসেছে প্রেক্ষাপট হিসেবে। আমি যখন গল্পটি লিখি। চারটি চরিত্র তৈরি করি- ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবার যে চারটি অধ্যায় দেখেছি, ওই চারটি অধ্যায়ের। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করবো এমনটা আমার ভাবনায় ছিলো না। ভাবনায় ছিলন বাবা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেছে। আমি যদি প্রথম ছবিটি বানাই, যদি বাবা দেখতেন, তবে তিনি কোন বিষয়টিতে সন্তুষ্ট হতেন- এসবগুলো জিনিসের কারণেই আমি মুক্তিযুদ্ধকে বেছে নিই। আমার জন্ম কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দুই বছর পরে। ফলে যুদ্ধ দেখিনি। আমার সমস্ত জ্ঞান হয়তো পড়ে, নয়তো আরেকজনের কাছ থেকে শুনে। ওই জায়গা থেকেই, আমি আমার বাবার চরিত্রটিকে, চারটি বাবার চরিত্র- একটা আমি করি, একটা করে কল্যাণ, একটা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, আরেকটা করে রফিক ভাই। এই চারটি চরিত্রটিকে দেখাতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আসি এবং ছবিটি বানাই।

আর যে সমস্যার কথা বললেন, তার কোনো অন্ত নেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বানিয়েছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি কোম্পানি। কিন্তু কেউ প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করে না যে, মুক্তিযুদ্ধের ছবি বাংলাদেশে চলবে।

এই ছবিটি করতে আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। আমার প্রযোজকের পক্ষ থেকে একজনও কেউ কোনোদিন সেটে যায়নি, কোনো ধরণের সাহায্য কারও কাছ থেকে পাইনি। অস্ত্র লাগবে; আমি আর্মির কাছে, পুলিশের কাছে, সবার কাছে গিয়েছি, এমন কেউ নেই যার কাছে যাইনি। এমনকি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে গবেষণা কেন্দ্র আছে, ওইখানে গিয়ে মেজর সাহেবের সঙ্গে মিটিং করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, গল্পটা কী? আমি বললাম, গল্পটি আমার বানানো। তিনি বললেন, না, আমি তো কোনো বানানো গল্পে সহযোগিতা করবো না। এসব যুক্তি দিয়ে তিনি সহযোগিতা করলেন না।

পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে বড় একটি সহযোগিতা পেয়েছি। আর আমার গুরু হুমায়ূন আহমেদ আমাকে পুরো নুহাশ পল্লী ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই দু’টো সহযোগিতা না পেলে ‘পিতা’ হতোই না। তারপরও শুটিং বন্ধ ছিলো ছয় মাস। আমার সঙ্গে বহু ঝগড়া-ঝাটি অনেক কিছুই হয়েছে। অনেক বেইজ্জতি হয়েছি। অভিজ্ঞতা খুব বাজে।

আমি যেটা ভেবে চিত্রনাট্য লিখেছিলাম, যেটা বানাতে চেয়েছিলাম, সেটা বানাতে পারিনি। ‘পিতা’ ছবিটি নিয়ে মানুষ খুব প্রশংসা করে এখন, অনেক কিছু বলে, আমি চুপ থাকি। কারণ আমার রাগ লাগে তখন। কারণ, আমি যেটা দেখাতে চেয়েছিলাম, সেটার মাত্র দশ ভাগ দেখাতে পেরেছি।

নিজের টাকায় ছবিটি বানিয়েছি
রিয়াজুল রিজু [বাপজানের বায়োস্কোপ]
আমি একটা ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ নির্মাণ করলাম। এটা গ্রাম-বাংলার ছবি। ফলে আমার চেতনাগত জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বলার চেষ্টা করেছি। ছবিটি দেখে মনে হবে, পুরোটাই গ্রাম-বাংলার ছবি। কিন্তু যখন দর্শক চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক জায়গা, দার্শনিক জায়গা, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খুঁজতে যাবেন, তখন মুক্তিযুদ্ধকে পাবেন তারা। ১৯৫২, ১৯৭১ এবং ২০১৫ দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। লবনকে দেখানো হয়েছে বায়ান্নোর প্রতীকী হিসেবে, একাত্তর এসেছে বায়োস্কোপ দেখানোর স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।

ছবিটি বানাতে গিয়ে খুব ভয়ংকর রকম প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। যেহেতু এটা অনুদানের ছবি না। ব্যক্তিগত ইচ্ছা, ব্যক্তিগত ভালোলাগা-সদিচ্ছা থেকে কাজটি করা। আমি বিশ্বাস করি, একটা মানুষের মাথা, মন এবং মুখ যদি স্বচ্ছ থাকে, তাহলে পৃথিবীর কেউ তাকে আটকাতে পারে না।   সবচেয়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিলো, টাকার। নিজেদের অর্থে ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ বানানো।

মুক্তিযুদ্ধের কাজ দর্শকরা ভালোভাবেই গ্রহণ করে
সুমন ধর [অমি ও আইসক্রিমওয়ালা]
মুক্তিযুদ্ধের ছবি কেন বানালাম? এ প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেওয়া যায়, ছোট-বড় সব গল্পই পড়ি, সুযোগ পেলেই পড়ি, পত্র-পত্রিকায়, যখন যেখানে পাই। তো, ‘অমি ও আইসক্রিমওয়ালা’ গল্পটি যখন পড়লাম, মনে হলো, এটি আমার বানানো উচিত। আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, এটি সেরকম। এই গল্পের সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, আমার ছোটবেলার যেরকম জীবন ছিলো, অনুভূতি, ঘুরে বেড়ানো, চরিত্রটির ভেতরে ওই রকম কিছু পেয়েছি নিজের মতো করে।

যে কারণে চিত্রনাট্যটি লিখতে পেরেছি, না হলে পারতাম না। আর মুক্তিযুদ্ধ তো আমরা দেখিনি, মায়ের মুখে যতোটুকু শোনা। মা-ও তখন ছোট ছিলেন। তো, ওই জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বানানোর জন্য সাহসও দরকার। পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়ে বানানো দরকার, যেহেতু এটা আমাদের গৌরবের বিষয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই ছবির ভেতরে ছোট্ট একটি বার্তা আছে- আমি যদি নিজের মতো করে দিতে পারি, তবে নিজের কাছেই ভালো লাগবে। ওই জায়গা থেকে ছবিটি বানানো। আর কিছুই না।

‘অমি ও আইসক্রিমওয়ালা’ কলকাতা ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলো। ওইখানকার দর্শকরা আমাকে বলেছে, ‘দাদা, আপনাদের দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। আপনারা এখনও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন!’ আমার কাছে ব্যাপারটি ভালো লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করলে, আমাদের দর্শকরা খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করে। আপনি যদি নাসিরউদ্দিন ইউসুফের ‘গেরিলা’ দেখে থাকেন, ওই ছবিটা অনেক দর্শক দেখেছে। আর শুটিং তো অনেক জায়গাতেই করেছিলাম আমরা ঢাকায়, মানিকগঞ্জে, ধামরাইয়ে- যারা শুটিং দেখতে পারেনি, তারা আফসোস করেছে। এখনও মানুষ দেখতে চায় কেন, যারা আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মতো বয়সী ছিলো, যুবক ছিলো, তারা কিন্তু এখনও বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে আছে। তো, তাদের পরিবারেরই তো আমরা কেউ আসলে। তাদের মহল্লারই আমরা কেউ।

আমার কাছে মনে হয়, কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে চায় না আসলে, ব্যবসা করা যাবে না, এটা হবে না সেটা হবে না- এসব ভেবে। তো, ওসব না ভেবে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের কাজ সাড়া জাগাতে পারে। প্রতি বছর উদ্যোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কিছু কাজ করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
কেবিএন/এসও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ