ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

চট্টগ্রাম থেকে সোমেশ্বর অলি

নাম নয়, বদলে যাবে চেহারা

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
নাম নয়, বদলে যাবে চেহারা ছবি : নূর /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হয় ১৯৫৩ সালে। মুসলিম হল বলেও এটি খ্যাত।

১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের তৎপরতায় মুসলিম ইনস্টিটিউটকে সরকারি তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই চট্টগ্রামের সিংহভাগ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মুসলিম হলেই সম্পন্ন হয়ে আসছে। বর্তমানে এটি বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। অন্যদিকে সংকট উত্তরণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। মুসলিম ইনস্টিটিউটকে কালচারাল কমপ্লেক্সে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসঙ্গে এক হাজার ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে মুসলিম হলের প্রধান মিলনায়তনে। অন্য মিলনায়তনে স্বল্প পরিসরে হয়ে থাকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। সোমবার (১১ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে পুরো ভবন, মিলনায়তন ও আশেপাশের জায়গার ভগ্ন চিত্র।
 
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এখন যারা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেয়, তাদের শুধু মিলনায়তনটাই দেওয়া যায়। লাইট, সাউন্ডবক্স, জেনারেটরের ব্যবস্থা আয়োজকদেরই করতে হয়। ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল হওয়ার কারণে আজকাল কেউ এখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করার আগ্রহ দেখান না।

একতলা বিশিষ্ট ভবনটির দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে ভেতরের লোহার শিক দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের পাশাপাশি মিলনায়তনের মেঝেতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। মিলনায়তনে স্পটলাইটের অধিকাংশ নষ্ট। মঞ্চের জন্য হ্যালোজেন লাইটের অবস্থাও ভালো নয়। সাউন্ডবক্সও ঠিক মতো কাজ করে না। পুরো মিলনায়তনের মূল বৈদ্যুতিক লাইনও প্রায়ই নষ্ট থাকে। জেনারেটরের ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ। একাধিক সাজঘরে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা নেই।

কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্য হারিয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মিলনায়তন। জীর্ণদশা ও অন্যান্য সংকটের কারণে এখন ভালো মানের অনুষ্ঠান হয় না। এদিকে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুসলিম হল ভেঙে আধুনিক কালচারাল কমপ্লেক্স করার লিখিত নির্দেশনার পর প্রকল্প তৈরি হওয়া ও বাজেট বরাদ্ধের জন্য অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
ঐতিহ্যবাহী এ মিলনায়তনটি শেষবার সংস্কার করা হয়েছিলো ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংস্কারকৃত মিলনায়তনটির উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামের একসময়ের সুপরিচিত এই মিলনায়তন বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।

মুসলিম ইনস্টিটিউটের অফিস সেক্রেটারি মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানান, নতুন ভবন তৈরির কাগজপত্র গোছানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী অচিরেই পুরনো ভবন ভেঙে নতুন কমপ্লেক্সের কাজ শুরু হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ তাদের জানা নেই।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তীর্যক নাট্যগোষ্ঠীর চার দিনব্যাপী নাট্যমেলার উদ্বোধক হিসেবে চট্টগ্রামে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি প্রথমবার জানান, মুসলিম ইনস্টিটিউট ভেঙে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করার ব্যাপারে।

সে সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে ইনস্টিটিউটের সদস্য ও নগরের সংস্কৃতিকর্মীদের মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় মিলনায়তনের আর্থিক ও অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সব শুনে সংস্কৃতিমন্ত্রী মুসলিম হল ভেঙে একটি কালচারাল কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

চলতি বছরের শুরুতে স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম আসেন। তারা মুসলিম ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম গণগ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, থিয়েটার ইনস্টিটিউটসহ পুরো এলাকায় একটি ডিজিটাল সার্ভে করেন। সূত্র জানায়, ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম ইনস্টিটিউটের নাম বদল হবে না। অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনা হবে শুধু।

ধারণা করা হচ্ছে, নতুন ভবন হবে দশতলা বিশিষ্ট। সেটি তৈরি করা হবে শিল্পকলা একাডেমির আদলে, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও চলবে বহুমাত্রিক। সরকারি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চাটগাঁর সংস্কৃতিপ্রেমীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এসও/জেএইচ

** চট্টগ্রামে চলে না আঞ্চলিক ও আধুনিক গান
** চট্টগ্রামে ব্যান্ডসংগীতের চিত্র আশা জাগানিয়া
** শেফালী ঘোষের ভিটেমাটি ঘুরে
** চট্টগ্রামে ভেঙে ফেলা হচ্ছে আরও দুটি প্রেক্ষাগৃহ
** বন্দরনগরীতে এখনও মুনমুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ