ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

১ম শিরোনাম: ‘অনেকে প্রশ্ন করে, একুশে পদক পাইছেন?’

২য় শিরোনাম: প্রকৃতিই আমার গুরু, বললেন গফুর হালী

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
২য় শিরোনাম: প্রকৃতিই আমার গুরু, বললেন গফুর হালী আবদুল গফুর হালী / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মোটাদাগে বলতে গেলে, ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা, ‘পাঞ্জাবীওয়ালা রে পাঞ্জাবীওয়ালা’, ‘দেখে যারে মাইজভান্ডারী হইতাছে নূরের খেলা’, ‘মনের বাগানে ফুটিলো ফুল রে’- প্রভৃতি গানের স্রষ্টা আবদুল গফুর হালী। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে তার পরিচয় অন্যকিছু।



আবদুল গফুর হালী কে? তিনি কী শুধুই একজন গীতিকার? লোককবি নন? বা লোকসাহিত্যিক? কে না জানে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও ভান্ডারী গানের পুরোধা ব্যক্তিত্ব গফুর হালী। ‘আমি আমার আল্লাহ রাসূল/ আমি আমার জ্ঞাতি/ লালনের যেই জাত ছিলো/ আমারও সেই জাতই…’ এই লাইনগুলোতেই আবদুল গফুর হালীর পরিচয় দেওয়া আছে। এটা তার কিছুদিন আগের লেখা গান, অপ্রকাশিত।

নব্বই ছুঁই ছুঁই গফুর এখন অনেকটা নিভৃতবাস করছেন। তবে কাজ থেকে দূরে নন তিনি। ক’বছর আগেও চট্টগ্রাম শহরেই থাকতেন। বয়স একটু বিপত্তি বাঁধালো বলে বন্দরনগরীর পটিয়ার এলাহাবাদ গ্রামে নিজের বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি। নিয়মিত লিখছেন, বাজার সদাই করছেন, ভক্তদের সঙ্গে আসর মাতাচ্ছেন। তিনি এখনও মোটামুটি রোগমুক্ত বলেই মনে করেন।

জার্মানির হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষ বিষয়ক দর্শন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক হানস হার্ডার ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরে শিল্পী কল্যাণী ঘোষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে। তার জীবন ও গান নিয়ে ২০০৪ সালে ‘ডার ফেরুকটে গফুর, স্প্রিখট’ (পাগলা গফুর, বলে) নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে হালীর ৭৬টি গান অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলোকে আবদুল গফুর হালী রচিত পূর্ববাংলার মরমি গান বলে উল্লেখ করেছেন হানস হার্ডার।

প্রতি বাংলা মাসের ২২ তারিখ গফুর হালীর বাড়িতে ভক্তের মেলা বসে। গত ১০ বছর ধরে এমনটা চলছে। কথাবার্তা, জিকির, মাইজভান্ডারের গান- সবই হয়। গত ১০ জানুয়ারি বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে নিজের বাড়ির উঠোনে বসে দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছেন গফুর হালী। মোটামুটি প্রমিত ভাষায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গফুর হালী। কখনও কখনও প্রয়োজনে আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছেন। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে জ্ঞানী-গুণী এই মানুষটির অনেক অজানা তথ্য।

বাংলানিউজ: মানুষের কতো কী হওয়ার থাকে। আপনি গীতিকার হলেন, কেনো?
গফুর হালী: যারা গান লেখেন, যারা কবিতা লেখেন তাদের কোনো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় নাই। এটা একটা ভাবের জিনিস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো গুরু ছিলেন না। তবে তিনি লালনকে অনুসরণ করতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বাদেও, পরে যারা আছেন, আমার মতো ছোটখাটো, তাদের কোনো গুরু নাই। তবে সংগীতের গুরু আছে। যারা গান গাইতে চান। এটা গুরুমুখী বিদ্যা। আপনি ইচ্ছা করলেই গান-কবিতা লিখতে পারবেন না। এটা খোদা প্রদত্ত। আল্লাহর রাসূলের কাছে ওহী আসতো না? জিবরাইল ফেরেস্তার মাধ্যমে ওহী আসতো। যারা আধ্যাত্মিক মানুষ, সবার কথা বলতে পারবো না, যারা গানের মাধ্যমে আল্লাহকে পাইতে চায়, যারা তাদের মুরশিদকে পাইতে চায়, আল্লাহর রাসূলকে পাইতে চায়- তাদের কাছেও একইভাবে লেখা আসে...এটাকে বলে, কী যেন বলে! এখন ভুলে গেছি।

(পরে তিনি মনে করতে পেরেছিলেন। সেই শব্দটা হলো ‘এলহাম’। এর অর্থ প্রেরিত, যা প্রেরণ করা হয়। )

বাংলানিউজ: শুরু থেকেই তো আপনার লেখা গান সুপারহিট হতে শুরু করে…
গফুর হালী: ষাটের দশকে, ততদিনে আমি হাজার খানেক গান লিখে ফেলেছি। নিজের গান নিজেই গাই বিভিন্ন মঞ্চে। ওই সময়ে শ্যামসুন্দর বৈঞ্চব আমার বন্ধু মানুষ ছিলেন। শেফালী ঘোষও আমার কাছের মানুষ ছিলেন। শুরুতে তারাই আমার গান গেয়েছেন। এই জুটি খুব জনপ্রিয় ছিলো তখন। শুরুর দিকে ‘ন যাইয়ো ন যাইয়ো…’ গানটা তখন রেডিওতে দারুণ হিট করলো। এই দু’জন আমার বেশিরভাগ গান করেছেন। আমার আগে তারা মলয় ঘোষের গান গাইতেন। শেফালী ঘোষ আমার আশিভাগ গান গেয়েছেন। গানের পাশাপাশি আমি নাটকও লিখেছি। আমিই প্রথম চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাটক লিখেছি। রেডিও আর টেলিভিশনে নাটকগুলো প্রচারিত হয়েছে।
 
বাংলানিউজ: আপনার লেখালেখির শুরুটা কখন, কীভাবে?
গফুর হালী: ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কারণে লেখাপড়ায় আমি এগোতে পারি নাই। ওই সময়টাতে আমার ভাবনা বদলে গেলো। চোখের সামনে মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। সে সময় জাপান-জার্মানির যুদ্ধ চলছে। এ ছাড়া আমার দেশের প্রকৃতি আমাকে লেখক বানিয়েছে। প্রকৃতিই আমার গুরু। জানেন তো, অনেক জিনিস নিয়ে ভাববার আছে। যদি কেউ ভাবতে চায়। এই যে গাছ, নদী, আসমান… সবকিছু নিয়ে ভাবা যায়।
 
বাংলানিউজ: আপনি কী কণ্ঠশিল্পী হতে চেয়েছিলেন?
গফুর হালী: না না। আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি উকিল হবো। কিন্তু হয়ে গেলাম শিল্পী। ইচ্ছে করলেই তো সব হয় না। উপরওয়ালার ইশারা থাকতে হয়। মাইজভান্ডার দরগা শরীফ গেছেন কখনও? ফটিকছড়ি? বিরাট মাজার। সেখানে গেলাম, মাইজভান্ডার বাবাজান আমাকে শিল্পীই করে দিলেন।
 
বাংলানিউজ: আপনি তার শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন?
গফুর হালী: হ্যাঁ। সেটা ষাটের দশকের কথা। ওখান থেকে আসার পর আমি মাইজভান্ডারী গান লেখালেখি শুরু করি। এখনও সেই পথেই আছি।
 
বাংলানিউজ: সেখান থেকে আসার পর, তার মানে, আপনার জীবনযাপনে, চিন্তাধারায় নতুন কিছু যোগ হয়েছিলো?
গফুর হালী: অনেক অনেক। কী বলবো আর! আগে ছিলাম ডইল্যা (মানুষের মতো দেখতে)। এখন, ইনশাল্লাহ আমার বাবাজান আমাকে সম্পূর্ণ মানুষ করে রেখে গেছেন। আমার বাবাজানের নাম গাউসুল আজম শাহ শফীউল বাশার আলহাজ হালী মাইজভান্ডারী। উনি বাবা ভান্ডারীর শেষ ছেলে। ছোট মিয়া বলা হয় তাকে।
 
বাংলানিউজ: বাউলদের সঙ্গে আপনাদের মিল রয়েছে?
গফুর হালী: প্রায় একই জিনিস, একই তরিকা। বাউলরা সংসার করে না, মাইজভান্ডারেও সংসার করে না অনেকে। তবে মাইজভান্ডারের বেশিরভাগ মানুষ সংসারে বন্দি থেকেই তারা নিজেকে চেনার কাজটি করেন। তুমি তোমাকে চেনো তোমার আল্লাহকে চিনবে- এটা হলো মাইজভান্ডার তরিকার নিয়ম নীতি। আত্মা না চিনলে আত্মার উদ্ধার হবে না। নিজেকে চেনো। নিজেকে চেনার জন্যই লোকে মাইজভান্ডারে যায়। মাইজভান্ডারে হি্ন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান বলে কিছু নাই। যার তকদিরে আছে সে নিজেকে চিনতে পারে।
 
বাংলানিউজ: এতদিন ধরে আপনি মাইজভান্ডারের পথে আছেন। আপনার কী মনে হয়, নিজেকে কতটুকু চিনতে পেরেছেন?
গফুর হালী: এটা কিচ্ছু না। এই সময়টা কিচ্ছু না। আরও অসংখ্যবার জন্ম নিলেও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবো? আমি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার গানেও বলেছি, নিজেকে চেনো। এই যে আপনারা ঢাকা থেকে ক্যামেরা নিয়ে এসেছেন, আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, এটা জীবন না। জীবন আরেকটা আছে। সেটা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। সেটাই আসল জীবন। সেই জীবন সবাই পায় না। সমস্ত পৃথিবীটাই আছে কিসের ওপর জানেন? প্রেমের ওপর। প্রেম না হলে সব ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। এটা নারী-পুরুষের মধ্যেই শুধু হয়? প্রেম একটা বিরাটের চেয়ে বিরাট ব্যাপার।
 
বাংলানিউজ: এই যে ‘বিরাটের চেয়ে বিরাট প্রেম’-এর কথা বলছেন। আপনি সেটা কীভাবে পেলেন, আবিষ্কার করলেন কীভাবে?
গফুল হালী: এটা আবিষ্কৃত করা যায় না। এটা আবিষ্কৃত হয়। আমি আবিষ্কার করার কে? এটা তোমার ওপর যদি আল্লাহ ও রাসূলের দয়া থাকে, তাহলেই সম্ভব।

(তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গফুর হালী নাতনি সায়মাকে ডাকলেন, চায়ের প্রয়োজনে। চা শেষ হলে তিনি নিজে থেকেই শুরু করলেন কথা বলা। )
 
গফুর হালী: এখন আর ভাল্লাগে না। আমি বাঁচতে চাই না, এরকম বললে তো গুনাহ হবে। গুনাহ হবে না? এরকমও বলি না। মনে হয় আগে ভালো ছিলাম।

বাংলানিউজ: এটা কী বার্ধক্যজনিত?
গফুর হালী: না, এটা বার্ধক্যজনিত না। এটা…একটা বিষয় কী জানেন? সাগর যখন উত্তপ্ত থাকে, তখন ছোট ছোট নদীও উত্তপ্ত হয়। জোয়ার তো আগে সাগরে হয়, তারপর নদীতে আসে। সাগরের পানি যদি দূষিত হয়ে যায়, নদীর পানি ভালো থাকবে? দেশের অবস্থা যখন ভালো না। তখন আমরা যারা সংস্কৃতি নিয়ে যারা নাড়াচাড়া করি, তারা ভালো থাকার কথা না।  
 
বাংলানিউজ: দেশের অনেক বিষয় নিয়ে আপনি চিন্তিত?
গফুর হালী: আমার নাতি আছে, নাম জুয়েল। এমবিএ শেষ করেছে, চাকরি করে। এই তো দশদিন আগে সে ঘরে তালা লাগাচ্ছিলো। আমি বললাম, কী তালা দিতেছো কেনো? আমি তো তালা দিতে দিবো না। সে বলে, তালা দিতে হবে। ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। আমি বলি, আমাকে মারবে কেনো? আমার কী অপরাধ? সে বলে, অপরাধ-টপরাধ কিছু না। দেশের অবস্থা ভালো না।

বাংলানিউজ: ওরা কারা?
গফুর হালী: সন্ত্রাসী হবে। টাকা-পয়সা লুটের জন্য আমাকে মারবে না। আমি তো লেখালেখি করি। আমার সব লেখা তাদের পছন্দ না। তাদের চিন্তার সাথে মেলে না। আমাকে লেখার মধ্যে সত্যিটা বলতেই হবে। ওরা সত্যি দেখতে চায় না। ওরা চায় গানে ওদের কথা লিখতে। বেশ আগে আমাকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিলো। চিঠিতে বলা হয়েছিলো, আমি যেন মাইজভান্ডারী গান ছেড়ে ইসলামী গান লিখি।

বাংলানিউজ: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার ভূমিকা কী ছিলো?
গফুর হালী: আমি মুক্তিযুদ্ধের গান করেছি ঢাকায় গিয়ে। তবে বন্দুক নিয়ে ‍যুদ্ধ করি নাই। আমি লেখা দিয়ে, গান দিয়ে যুদ্ধ করেছি। ওই সময় ‘তোর লয় আঁর লয় ন অইব অভাই/আঁই বাঙালি, তুই পাঠান/তোর দেশে আর আঁর দেশে/দুই হাজার মাইল ব্যবধান’- এই গানটি গাইতাম ঘুরে ঘুরে। মজার ব্যাপার কী জানেন? আমি বঙ্গবন্ধুর সামনেও গান করেছি। বঙ্গবন্ধুকে তরমুজ কিনে খাইয়েছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নাই আমার। কী হবে ওটা দিয়ে? অনেক সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করে, একুশে পদক পেয়েছেন? আমি বলি, ওটা কী?
 
বাংলানিউজ: আচ্ছা, আপনার নামের শেষে হালী এলো কীভাবে?
গফুর হালী: ‘হালী’ হলো আমার মুরশিদের দেওয়া টাইটেল। আমার নাম আবদুল গফুর। গভীরভাবে ভাবলে, নামদাম আসলে কিছু না। নাম দিয়ে কোনো কাজ নাই। আমার নাম আবদুল গফুর হালী না। তোমার যা নাম, সেটাও তোমার না। তুমি তো তুমি না। যে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে সেটাই হলো তুমি। জন্মের কিছুদিন পরে মানুষের নাম রাখা হয়। নাম রাখার আগেও তো আমি আমিই ছিলাম। তুমি তুমি ছিলে, ছিলে না? তখন কী ছিলাম? নবজাতক? এখনও নবজাতক হয়েই আছি।
 
বাংলানিউজ: বাউল সাধক শাহ আবদুল করিম ও আপনি প্রায় একই সময়ের লেখক। তার সঙ্গে কিংবা তার গানের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ ছিলো?
গফুর হালী: উনার গানগুলো অনেক পরে মানুষের কাছে আসলো। তার আগেই আমার গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। তার গান সবাই যখন শুনলো, আমিও সে সময় শুনেছি। উনি বেশ সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। উনি সিলেটে থাকতেন, আমি চট্টগ্রাম। কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। আমি এমনিতেই কোথাও যেতাম না।
 
বাংলানিউজ: আপনার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গানের সংখ্যা কতো?
গফুর হালী: সব মিলিয়ে দুই হাজার হবে। আমার অধিকাংশ গানের সুরকার আমি। গানগুলোর স্বরলিপিসহ বইও করেছি।
 
বাংলানিউজ: আপনার গাওয়া গানের ক্যাসেট বের হয়েছিলো তো?
গফুর হালী: গ্রামোফোন রেকর্ড ছিলো একটি গান। এ ছাড়া একটি অডিও ক্যাসেট বের হয়েছিলো ১৯৮০ সালে। ওটার নাম ছিলো ‘জীবন তরী’। ১২টি গান ছিলো সেখানে। লেখার চাপে আর গাওয়া হয়নি।
 
বাংলানিউজ: গান লেখার জন্য পারিশ্রমিক নিতেন না?
গফুর হালী: শুরুতে নিতাম না। বিনা টাকায় তাৎক্ষণিক গান লিখে দিতাম। শ্যামসুন্দর বৈঞ্চব, শেফালী ঘোষ, কল্যাণী ঘোষের কাছে কোনো টাকা নিই নাই। টাকা নিলে তারা এতদূর আসতো না। যদি আমি টাকা নিতাম তাহলে চট্টগ্রামের সংস্কৃতির এতো প্রসার হতো না। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমি গানের জন্য টাকা নেওয়া শুরু করি। তখন একটা গানের জন্য নিতাম ৫০০ টাকা। এরপর করলাম ১০০০ টাকা, এরপর ২০০০ টাকা। এখন ৫০০০ টাকা নিই।  

বাংলানিউজ: আপনার মৃত্যুচিন্তা হয়?
গফুর হালী: (হেসে) আমি তো মরা। মরা মানুষের মৃ্ত্যুচিন্তা হয় নাকি? কয়বার মরে মানুষ?

বাংলানিউজ: আগে কবে মরেছেন?
গফুর হালী: মাইজভান্ডারের দরবার শরীফ যখন গেছি তখনই মরে গেছি! এখন আর মরণের ভয় নাই।

বাংলানিউজ: শেষ ইচ্ছা বলে কিছু আছে আপনার?
গফুর হালী: কোনো ইচ্ছা নাই। এখন শুধু কী করে, কীভাবে মাইজভান্ডারী হয়ে ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি, সেটাই ভাবি। আর আবার যদি আসি…
 
বাংলানিউজ: পুনর্জন্মের কথা বলছেন?
গফুর হালী: মানুষের তো মৃত্যু নাই।

বাংলানিউজ: একটু আগেই যে বললেন আপনি মৃত?
গফুর হালী: এটা তো পরিবর্তনশীল। আপনি ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন, তার মানে সেখানে আপনি নাই। ঢাকায় কী আপনি মরে গেছেন? এটাকে মরা বলে না। যদিও আমরা এটাকেই মৃত্যু বলি। কিন্তু মানুষের আরেকটা জগৎ আছে।
 
বাংলানিউজ: আপনার মধ্যে লালন বা অন্য কারও প্রভাব আছে বলে মনে করেন?
গফুর হালী: আসগর আলী পণ্ডিত। উনার প্রভাব আছে। যদিও উনি কখনও মাইজভান্ডারী গান লেখেননি। উনার লেখায় সংস্কৃত ভাবটা বেশি। উনার গান শুনে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আসগর আলী পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন, আর আমি এলাম।

বাংলানিউজ: আপনার অবর্তমানে আপনার গান গাইবে বাংলার শিল্পীরা। প্রজন্মের উদ্দেশে কিছু বলার আছে?
গফুর হালী: আমার পাশের বাড়িতে আমার গান করছিলেন ঢাকার এক শিল্পী। আমি ঘরে বসে শুনছিলাম। তিনি আমার নামটা উচ্চারণ করলেন না। এটা খুব দুঃখের কথা। ভাই, তোমার কী ক্ষতি? গীতিকার তো তোমার সঙ্গে যাচ্ছে না। গীতিকারের নামটা তোমাকেই বলতে হবে, তাই না? আমি যখন থাকবো না, যে কেউ আমার গান করতে পারবে। অসুবিধা নাই। গানগুলো প্রচার হলেই হলো। আমি স্বরলিপি করেছি। কথা ও সুর যেন কেউ বিকৃত না করে। এটা অনুরোধ থাকলো।
 


বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসও/জেএইচ

** নিজ সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছে আদিবাসী তরুণরা?
** সুখবর দিলেন চট্টগ্রামের নাট্যকর্মীরা
** নাম নয়, বদলে যাবে চেহারা
** চট্টগ্রামে চলে না আঞ্চলিক ও আধুনিক গান
** চট্টগ্রামে ব্যান্ডসংগীতের চিত্র আশা জাগানিয়া
** শেফালী ঘোষের ভিটেমাটি ঘুরে
** চট্টগ্রামে ভেঙে ফেলা হচ্ছে আরও দুটি প্রেক্ষাগৃহ
** বন্দরনগরীতে এখনও মুনমুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ