ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

শাহরুখই শাহরুখের ভক্ত নন!

বৃষ্টি শেখ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
শাহরুখই শাহরুখের ভক্ত নন!

শাহরুখ খানের ‘ফ্যান’ দেখে সবচেয়ে বেশি লাফালাফি করেছে যে তার বয়স মাত্র তিন বছর। নাম আবরাম খান।

বোঝা যাচ্ছে সে শাহরুখের কনিষ্ঠ পুত্র। এ-ও বোঝা যাচ্ছে বাবার অভিনয়ের বিন্দুবিসর্গ কিছুই বোঝেনি ছেলে! সে দেখেছে পর্দাজুড়ে খালি ‘পাপা’ আর ‘পাপা’! একসঙ্গে এতোগুলো ‘পাপা’ দেখে সে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত।  

আবরামের কীর্তিকলাপের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন শাহরুখ। আবরাম পুরো ছবিটা দেখেছে, তাই খুশি তিনি। জ্যেষ্ঠ পুত্রও বাবার ‘ফ্যান’ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তাই ‘জাবরা ফ্যান’ গানটির সুর গিটারে বাজিয়েছেন আরিয়ান খান। তার গিটার বাজানো দেখে ৫০ বছর বয়সী এই অভিনেতা টুইটারে লিখেছেন, ‘আমার জন্য বাজিয়েছে ও। আমিও যদি বাজাতে পারতাম!’

‘ফ্যান’ ছবিতে জ্যেষ্ঠ পুত্রের নামের এক সুপারস্টার (আরিয়ান খান্না) আর তার অন্ধভক্ত গৌরবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাহরুখ। এর আগে ‘ডুপ্লিকেট’ (১৯৯৮) আর ‘ডন’ (২০০৬) ছবিতেও দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। খানদের মধ্যে সালমান খান ‘জড়ুয়া’ (১৯৯৭) ও ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ (২০১৫), আমির খান ‘ধুম থ্রি’ (২০১৪) ছবিতে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।  

তবে ‘ফ্যান’-এ অভিনয়ের দিক দিয়ে অন্য দুই খানকে তো বটেই, নিজেকেও ছাড়িয়ে গেছেন শাহরুখ। এর প্রথম ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই কৌতূহলের পারদ ক্রমে উঁচুতে উঠেছে। ‘ফ্যান’-এর জন্য ফের চারদিকে শাহরুখ-ম্যানিয়া। অভিনয়ের গুণে এই ছবিতে বাজিমাত করেছেন তিনি। ‘ফ্যান’ দেখে মুগ্ধ সবাই। অনেকের মতে, এটাই শাহরুখের সেরা ছবি।  

চলতি বছরে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সর্বাধিক আয় (৫২ কোটি ৩৫ লাখ রুপি) করা ছবি এখন ‘ফ্যান’। অক্ষয় কুমারের ‘এয়ারলিফট’ প্রথম সাতদিনে ঘরে তুলেছিলো ৪৪ কোটি ৩ লাখ রুপি। শাহরুখের ক্যারিয়ারে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবির তালিকায় এর অবস্থান ষষ্ঠ। বিদেশে বলিউডের ইতিহাসে মুক্তির প্রথম সাতদিনে বেশি আয় করা ছবির তালিকায় এটি আছে সাত নম্বরে। ভারতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ‘ফ্যান’ আয় করেছে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ রুপি। আর বহির্বিশ্বে এখন অবধি ছবিটির ঘরে এসেছে ৪০ কোটি রুপি। প্রচারণাসহ এটি বানাতে খরচ হয়েছে ১০৫ কোটি রুপি।  

মনীষ শর্মা পরিচালিত ছবিটিতে দেখানো হয়েছে স্বপ্নের তারকার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হলে অন্ধভক্তের কী হতে পারে। গল্পের একদিকে দিল্লির সাদামাটা জীবনযাপন করা বছর পঁচিশের ছেলে গৌরব। অন্যদিকে তারকাখ্যাতির শীর্ষে থাকা আরিয়ান খান্না। গৌরব ছোটবেলা থেকেই আরিয়ানকে নিয়ে ঘোরে থাকে। গৌরব দেখতে আরিয়ানের মতো। এলাকায় ছোটখাটো চেহারার দাঁত-উঁচু ছেলেটার নাম ‘ফটোকপি’। প্রিয় তারকার তার ঘোর একসময় চলে যায় পাগলামির পর্যায়ে। গৌরবের ভক্তি-পাগলামো শুরু আরিয়ানের সঙ্গে মোলাকাতের পর থেকে।  

গৌরব খানিকটা ‘উগ্রবাদী’। সে আরিয়ানের জন্য আরেক তারকা সিড কাপুরকে নাস্তানাবুদ করে। কিন্তু আরিয়ানই এটাকে সমর্থন করে না। গৌরবের ভক্তিকে সে নস্যাৎ করে দেয়। অগত্যা ভক্ত বনাম তারকার শক্তিপরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। ভক্তের জন্য তারকার অস্তিত্ব, নাকি উল্টোটা? গৌরব চায় আরিয়ান ‘সরি’ বলুক। সেই দাবি থেকেই আরিয়ানের সাম্রাজ্য ধ্বংসের জিহাদ ঘোষণা করে সে। যে জিহাদ আরিয়ানকে বাধ্য করে গৌরবের পিছনে ছুটতে। গৌরব আর আরিয়ানের চেহারায় মিল রয়েছে। গৌরব সেই সুযোগটা নেয়।  

‘ফ্যান’-এর এই গল্প হলিউড তারকা রবার্ট ডি নিরোর ‘দ্য ফ্যান’ (১৯৯৬) ছবির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে দুটির মধ্যে মিল নেই। বিশ্বজুড়ে ভক্তদের পাগলামির অজস্র উদাহরণ আছে। যে পাগলামি কখনও ক্ষতিকারক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ভক্তেরও রকমফের আছে। কেউ ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে, কেউ পাগলামি করে হাত কাটে, কেউ ঘরে পোস্টার টানায়।  

শাহরুখের জন্যই তো কতোজন কতো কিছু করেছে। পরমবীর কৌর সুপ্রা নামের এক তরুণী তার পিঠে শাহরুখের ছবি উল্কি করিয়েছেন। লক্ষ্মৌর বিশাল সিং তার গাড়ি-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শাহরুখের নাম ও ছবি দিয়ে ছেয়ে রেখেছেন। এ কারণে তার নাম হয়ে গেছে বিশাহরুখ! আরেক ভক্ত সাঁতার কাটতে শাহরুখের বাড়ি মান্নতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলো। শিবানি নামের এক তরুণী ফটোশপে শাহরুখের নায়িকাদের জায়গায় নিজের মুখ বসিয়ে কোলাজ করে টুইটারে ছেড়েছেন। নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিসের এক ভিএফএক্স কর্মচারি তথা ভক্ত শাহরুখের আকৃতির একটি ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছে।  

এমন আরেকজন ভক্তের কথা শাহরুখ নিজেই জানিয়েছেন। ‘ফ্যান’-এর গৌরব হতে গিয়ে তাকে অনুসরণ করেছেন বলিউড বাদশা। ভক্তের নাম দীপক কালরা। শাহরুখ বলেন, ‘দীপক একবার আমার সামনে একটি সংলাপ বলেছিলো। ওকে বেশ পছন্দ হয়েছিলো আমার। গৌরবের চরিত্রে অভিনয় করার সময় দীপকের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করেছিলাম। বিশেষ করে সংলাপের শেষে যেভাবে মুখে বোতল খোলা এবং চুমুর শব্দ করেছিলো ও, সেটা আমার ভালো লেগেছিলো।  ও আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করেছে। ’

গত কয়েক বছরে শাহরুখকে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘দিলওয়ালে’র মতো চেনা মসলাদার ছবিতেই দেখেছে দর্শক। ‘ফ্যান’ তাদের বদহজম কাটিয়েছে বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি ভক্তদের আবার নিজের লীগে সামিল করাতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে এ যেন শাহরুখের প্রত্যাবর্তন।

চলচ্চিত্রপ্রেমী ও ভক্তদের মতো পরিবারের সবাই শাহরুখের অভিনয়ের বিশাল ভক্ত। শাহরুখ কখনও ভাবেননি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ তাকে পছন্দ করবে। মজার ব্যাপার হলো, বাস্তব জীবনে তিনি নিজেই নিজের ভক্ত নন! তার কথায়, ‘আমি নিজের অনুরাগী নই। নিজেকে খুব একটা পছন্দ করি না আমি। ’ পছন্দ না করার পেছনে কারণ আছে। সেটা জানিয়ে তিনি বললেন, ‘যদি আমি নিজের ভক্ত হতাম তাহলে যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছি তা পারতাম না। তখন নিজেকেই উপস্থাপন করতাম। মানুষ আমাকে যেভাবে দেখে আমি নিজেকে সেভাবে দেখি না। ’

এমনকি নিজের ছবিও দেখেন না শাহরুখ! ‘কারিগরি পর্যায়ে থাকাকালেই কেবল আমি নিজের কাজ দেখি। যেমন ‘ফ্যান’ দেখেছি। নিজের ছবি পর্দায় কিংবা টেলিভিশনে দেখি না। আমার এমন অনেক ছবি আছে যা এখনও দেখিনি। আমি নিজের ভক্ত নই। ’

‘ফ্যান’ ছবিতে অভিনয় করলেও এ শব্দটাই শাহরুখের পছন্দ নয়। তার ভাষ্য, ‘এ শব্দটা অন্ধবিশ্বাস আর গোঁড়ামি তৈরি করে। মাঝে মধ্যে এটা নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। আমাকে যারা পছন্দ করেন, ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে তাদেরকে কখনও ফ্যান বলিনি। তারা আমার প্রশংসা করেন, তারা আমার ভক্ত। এখন হয়তো প্রচারণার জন্য ‘ফ্যান’ শব্দটা ব্যবহার করছি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এ শব্দকে আমার বেয়াদব মনে হয়। ’

‘ফ্যান’ সমগ্র
* শাহরুখ খানকে যেন ‍২০ বছরের যুবকের মতো দেখায়, সেই কাজটি করেছেন অস্কারজয়ী রূপসজ্জাকর গ্রেগ ক্যানম।  
* ‘ফ্যান’-এর জন্য নিজের ডিজিটাল থ্রিডি মুখ স্ক্যানিংয়ের জন্য শাহরুখকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হয়েছিলো।
* ছবিটির ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের কাজ হয়েছে শাহরুখের নিজের প্রতিষ্ঠান রেড চিলিজের ভিএফএক্স বিভাগে। তার মতে, এ ধরনের ভিএফএক্স গোটা বিশ্বেই আর হয়নি।
* ছবিটির ভাবনা শাহরুখকে ২০০৬ সালে প্রথম বলেন যশ চোপড়া। কিন্তু কেনো যেন ছবিটা হয়ে উঠলো না।  
* ছবির টাইটেলে শাহরুখের ‘দিওয়ানা’, ‘বাজিগর’-এর ক্লিপিং কিংবা তার পুরনো সাক্ষাৎকারের ফুটেজ রয়েছে।  
* গত বছরেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো ‘ফ্যান’। কিন্তু দৃশ্যধারণের সময় হাঁটুতে চোট পান শাহরুখ খান। এ কারণে কাজ পিছিয়ে দিতে হয়। তাছাড়া ছবিতে ব্যবহৃত ভিএফএক্স পছন্দ হচ্ছিলো না বলিউড বাদশার।  
* ‘ফ্যান’-এর লোগো তৈরিতে দেরি ব্যবহৃত হয়েছে শাহরুখের বাস্তব জীবনের ভক্তদের ছবি। এজন্য ভক্তদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়। সেখান থেকে ১০০ জন ভক্তকে বেছে নেওয়া হয়। পরে তাদের প্রোফাইল পিকচারের কোলাজে তৈরি করা হয় লোগো।
* ৮ বছর আগে ‘ফ্যান’ তৈরির পরিকল্পনা করেন ‘রব নে বানা দি জোড়ি’র সহকারী পরিচালক মনীষ শর্মা। তখনই শাহরুখের সঙ্গে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয় তার।  
* মুম্বাই, দিল্লি, ক্রোয়েশিয়া ও লন্ডনসহ দেশ-বিদেশের একাধিক জায়গায় ‘ফ্যান’-এর দৃশ্যধারণ হয়েছে।  
* ‘ফ্যান’ই প্রথম বলিউডের ছবি, মাদাম তুসো জাদুঘরে যেটার দৃশ্যধারণ হয়েছে।
* ‘ফ্যান’-এর শুটিং নিয়ে গোপনীয়তা রাখা হয়েছিলো। কোনোভাবে শুটিংয়ের একটি ছবিও যেন বাইরে না যায়, সেজন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারে ছিলো নিষেধাজ্ঞা।
* ‘ফ্যান’-এ ভক্তদের উদ্দেশে শাহরুখের হাত নাড়ার দৃশ্যগুলো আসল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
বিএসকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ