ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

ইদানীং কালের গান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না: অমিত কুমার

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
ইদানীং কালের গান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না: অমিত কুমার অমিত কুমার- ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: অমিত কুমার কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমারের সুযোগ্য পুত্র। অমিত গানের জগতে নিজের স্পষ্ট ছাপ রেখেছেন, নিজের পরিচয় তিনি নিজেই। আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানেই বেশি পাওয়া যেতো অমিত কুমারকে। তবে কিছুদিন ধরে তাকে পাওয়া যাচ্ছে রবীন্দ্রগানে। দ্বিতীয় রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবামের জন্য অমিত কুমার এসেছিলেন কলকাতায়। সেখানেই বাংলানিউজের সামনে খুললেন তার প্যান্ডোরা বাক্স, বেরিয়ে এলো অনেক অজানা কথা। পড়ুন অমিত কুমারের সাক্ষাৎকার—

বাংলানিউজ: একটা সময় আপনি রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার ভয়ে স্কুলে ঢুকতেন না। এবার সেই পাঠভবনেই (কলকাতার  এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন অমিত কুমার) আপনার রবীন্দ্রসংগীতের  অ্যালবাম প্রকাশ হলো...
অমিত কুমার: আসলে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার ভয়ে পালাতাম, কথাটা ঠিক নয়।

স্কুলে প্রার্থনাসংগীত ছিলো ‘সারা জীবন দিলো আলো সূর্য গ্রহ চাঁদ’ এই গানটা। এক গান রোজ গাইতে কারও ভালো লাগে? প্রতিদিন সকালে এই গানটা গাইতে গাইতে এতো বোর (বিরক্ত) হয়ে যেতাম যে গানটা কিছুতেই আর গাইতে ইচ্ছে করতো না।

বাংলানিউজ: আর তাই পরিত্রাণের পথ খুঁজতে সত্যজিৎ রায়ের ছেলেকে বাছলেন?
অমিত কুমার:
হা, হা। আমি আর বাবু (সন্দীপ রায়) দুজনে মিলে ঠিক করলাম প্রতিদিন প্রার্থনার পর স্কুলে ঢুকবো। সেই অনুযায়ী বাবু একটা গাড়িতে চড়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। আমি একটা গলির মধ্যে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
প্রার্থনা শেষ হয়েছে বুঝলেই দু’জনে গুটিসুটি স্কুলে ঢুকতাম। কিন্তু ধরা পড়ে গেলাম একদিন। কান ধরে দাঁড়াতে হলো। কিন্তু আমরা শুধরোলে তো! প্রার্থনা করতে দাঁড়াতাম, কিন্তু অন্যদের সঙ্গে গলা মেলাতাম না। সিনেমার নায়কদের মতো লিপ দিতাম। একদিন সেটাও ধরে ফেললেন এক টিচার। আবার দাঁড় করিয়ে দিলেন কান ধরে। আমার মা রুমা গুহঠাকুরতাকে সবাই চেনেন। ছোটবেলায় মানুষ হয়েছি কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসে। কাজেই সেই ছেলেবেলা থেকেই তো রবীন্দ্রসংগীত শুনে আসছি।

বাংলানিউজ: গৌরীকুঞ্জে (কিশোর কুমারের বাড়ি) এখন কে কে থাকেন?
অমিত কুমার:
আমি, আমার স্ত্রী রিমা, মেয়ে মুক্তিকা আরেক মেয়ে বৃন্দা। মা (রুমা গুহঠাকুরতা) এখন আমার কাছে থাকেন। আরেক মা লীনা চন্দ্রভারকর আর ভাই সুমিত গাঙ্গুলিও এই বাড়িতে থাকেন। সকলে মিলে হইহই করে সময় কাটে। অমিত কুমার

বাংলানিউজ: আবার রবীন্দ্রসংগীতে ফিরি। আপনার বাবা কিশোর কুমারও তো দুটো রবীন্দ্র সংগীতের অ্যালবাম করেছিলেন।
অমিত কুমার: হ্যাঁ।
প্রথমটার সংগীত তত্ত্বাবধানে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর দ্বিতীয়টা পরিচালনা করেছিলেন বাবলু চক্রবর্তী। বাবাই প্রথম দেখালেন যে, খোলা গলাতেও রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া যায়, ঠোঁট চেপে না গাইলেও চলে।

বাংলানিউজ: সে তো ‘চারুলতা’ আর ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে সত্যজিৎ রায়ই প্রমাণ করে দিয়েছেন কিশোর কুমারকে দিয়ে গান গাইয়ে।
অমিত কুমার:
হ্যাঁ। এখন একটা কথা মনে হয় যে, দাদু অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়ের তত্ত্বাবধানে যদি কিশোর কুমারের রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম বের হতো তাহলে কত ভালো হতো!

বাংলানিউজ: আপনার প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কে?
অমিত কুমার:
না, আমার প্রিয় শিল্পী হিসেবে কোনও নির্দিষ্ট একজনের নাম বলতে পারবো না। আমি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান শুনেছি, জর্জদা অর্থাৎ দেবব্রত বিশ্বাসের গান শুনেছি, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান
শুনেছি, ঋতু গুহর গান শুনেছি, গীতা ঘটকের গান শুনেছি। আমি পঙ্কজ মল্লিক এমনকি কুন্দনলাল সায়গলের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতও শুনেছি। এঁরা সবাই আমার প্রিয় শিল্পী। এঁদের মধ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের স্টাইলটা ছিলো অত্যন্ত সহজ সরল। একটা সম্মোহনী ক্ষমতা ছিলো। মাস আপিল যাকে বলে।

বাংলানিউজ: বিশ্বভারতীর নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ার পর  অনেকেই রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আপনার কী মনে হয়?
অমিত কুমার:
একজন শ্রোতা হিসেবে আমার মনে হয় এসব করা একদমই ঠিক নয়। গায়ক হিসেবেও আমি কিন্তু কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটিনি। যেমন হওয়া উচিত তেমনই করেছি। যন্ত্রানুসঙ্গ পরিচালনা করেছেন দেবজিৎ রায়। এই রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবামটা অবশ্য বের করেছে অমিত কুমার ফ্যান ক্লাব।

বাংলানিউজ: বাংলায় ইদানীং আপনার অধিকাংশ কাজই তো দেবজিতের সঙ্গে।
অমিত কুমার:
  হ্যাঁ। ওর সঙ্গে তালমিলটা ভালো। আমার দুর্বলতা বলুন বা প্লাস পয়েন্ট ও খুব ভালো বোঝে। রাহুলদেব বর্মণের সঙ্গেও আমার ঠিক এই তালমিলটাই ছিলো। আগামী পুজোয় আমি একটা বাংলা পুজোর গানের অ্যালবাম করবো বলে ঠিক করে রেখেছি। সেটাও দেবজিতের সঙ্গে। অ্যালবামটা প্রডিউস করবে ‘কুমার ব্রাদার্স মিউজিক’ (কেবিএম)। আমার নিজস্ব লেবেল। আর মার্কেটিং করবে সোনি ডিআরডিসি।

বাংলানিউজ:  কিশোর কুমার আর আর ডি বর্মণ ছাড়া আর কার সুরে গান গাইতে ভালো লাগতো?
অমিত কুমার: 
বাবার ক্যাম্পের বাইরে স্বপন জগমোহনের কাছে প্রথম গান। এরপর শংকর জয়কিষেণ থেকে শুরু করে আজকের প্রীতম চক্রবর্তী, জিৎ গাঙ্গুলি সকলের সঙ্গেই কাজ করেছি। আনন্দ পেয়েছি।

বাংলানিউজ: বাবার হাত ধরেই তো আপনার গানের জগতে আসা?
অমিত কুমার:
একেবারেই। শুধু গান কেন, অভিনয় জগতে আসাও বাবার হাত ধরে। ‘দূর কা রাহি’ বলে বাবা একটা ছবি করেছিলেন। সেই ছবিতে বাবা, দাদামণি আর আমি অভিনয় করেছিলাম। ছবিতে একটা গানও গেয়েছিলাম। ‘ম্যায় এক পঞ্ছি মতওগালা রে’। তখন আমার বয়স কতো হবে, ১৩ বছর! ওটাই আমার প্রথম রেকর্ডেড গান।

অমিত কুমারবাংলানিউজ: ইদানীং কালের বাংলা গান নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
অমিত কুমার:
প্লিজ ইদানীং কালের গান নিয়ে কোনও প্রশ্ন করবেন না আমাকে। আমি শুনি না। কোনও গানই শুনি না। হিন্দি, বাংলা কোনও গান না।

বাংলানিউজ: হিন্দি বেসিক গানের একটা অ্যালবাম করেছেন তো, ‘জিন্দা হুঁ ম্যায়’?
অমিত কুমার:
ওটা  একমাস আগে বাজারে এলেও এবার কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এই অ্যালবামটায় ৮টি গান আছে। লীনাজির কথায় আমার সুর করা। গেয়েছিও আমি।

বাংলানিউজ: পুরনো গান শোনেন?
অমিত কুমার:
না। একসময় খুব শুনেছি। মান্না, রফি, কিশোর কুমার, হেমন্ত, আর ডি, শচীন, সায়গল সবার গান শুনতাম। এখন আর শুনতে ইচ্ছে করে না। এখন ভারতীয় মার্গ সংগীত আমাকে টানে। যেমন আমির খাঁ সাহেবের গান শুনছি। তারপর হয়তো ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল শুনবো। বাখ বা বিটোফেন। কাজেই আজকালকার গান সম্পর্কে আমার ধারণা একেবারে নেই। আমি এখন নিজে সুর করছি। নিজের সৃষ্টি, নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
ভিএস/এস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ