ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

ঈদ আয়োজন

মঞ্চের মানুষ দেশদ্রোহী হতে পারে না: নূনা আফরোজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
মঞ্চের মানুষ দেশদ্রোহী হতে পারে না: নূনা আফরোজ নূনা আফরোজ। ছবি: রাজীন চৌধুরী

সাহিত্য ঋষি, দার্শনিক, গবেষক, বাউল, সাধক- কী এমন উপমা নেই, যা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে যায় না! জানি, রবীন্দ্রনাথে খানিক ডুব দিলেই এমন জিজ্ঞাসা জাগে। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম এই কাণ্ডারিকে নিয়েই যত ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা গুণী অভিনেত্রী, নাট্যকার, নির্দেশক নূনা আফরোজের। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তার চিন্তার যথাযথ প্রকাশ ঘটাতেই নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’ গড়ে তোলেন ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’খ্যাত দাপুটে এই মঞ্চাভিনেত্রী। সংস্কৃতি অঙ্গনে তার শুরুটা হয়েছিল আবৃতি দিয়ে, বরিশাল শহরে। আবৃত্তি থেকেই অভিনয়ের সঙ্গ সম্পৃক্ত হন তিনি। ঢাকায় এসে কাজ শুরু করেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে। এই নাট্যদলটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার পর প্রতিষ্ঠা করেন নিজের নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’। রবীন্দ্র চেতনাকে সকলের কাছে পৌছে দেওয়াই নাট্যদলটির লক্ষ। অভিনয়, রবীন্দ্রনাথ, নাট্যভাবনা’সহ বিভিন্ন বিষয়ে নূনা আফরোজের সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলানিউজের। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: ঈদ মোবারক।
নূনা আফরোজ: আপনি’সহ বাংলানিউজ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা।

বাংলানিউজ: ঈদ কেমন কাটলো, কোথায় ঈদ করলেন, কী কোরবানি দিলেন?
নূনা আফরোজ: বড় হয়ে গেলে কী আর ঈদের আনন্দ থাকে! তারপরও ভালোই কেটেছে। আর প্রতি ঈদেই বাড়ি (বরিশাল) যাওয়া হয়। কিন্তু এবার কাজের চাপে যেতে পারিনি। তবে বাড়িতে গরু কোরবানি দিয়েছি। আর কোরবানিটা মূলত গরীব-অসহায় মানুষের জন্যই দেওয়া হয়।

বাংলানিউজ: ঈদে কাকে কী উপহার দিলেন, কী উপহার পেলেন?
নূনা আফরোজ: উপহার পাইনি। দিতে হয়েছে। উপহার দেওয়ার মধ্যেই আনন্দ। মা-খালা’সহ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে উপহার দিয়েছি। এছাড়া গৃহকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, আমাদের সেবায় নিয়োজিত ফ্ল্যাটের সবাইকে উপহার দিয়েছি। অবশ্য বরাবরই আমি এই কাজটি করি। কারণ বছরে দু’একবার উপহার পাওয়ার এই দাবিটা তারা রাখে।

বাংলানিউজ:  ঈদ আয়োজনে আপনাদের (প্রাঙ্গণেমোর) কোনো নাটক মঞ্চায়িত হচ্ছে কী?
নূনা আফরোজ: হ্যাঁ, আমাদের দুটি নাটক মঞ্চায়িত হবে। এর মধ্যে অনন্ত হীরার নির্দেশনায় শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় হবে নাটক ‘হাছনজানের রাজা’র ১৯তম মঞ্চায়ন । আর আমার নির্দেশনায় ২৪ আগস্ট মহিলা সমিতির মঞ্চে হবে ‘রক্ত করবী’র ৪৫তম প্রদর্শনী। সবাইকে নাটক দুটি দেখার আমন্ত্রণ রইলো।

নূনা আফরোজ।  ছবি: রাজীন চৌধুরীবাংলানিউজ: দাঁড়াতে পারছে না মঞ্চনাটক, দর্শকবিমুখ হয়ে পড়েছে মঞ্চনাটক, নাট্যকারের অভাব, মানসম্মত নতুন গল্প দাঁড় হচ্ছে না- মঞ্চ নাটক নিয়ে এমন আরও অনেক হতাশার কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এই বিষয়গুলোতে আপনার মতামত কিংবা দ্বিমত আছে কি না, জানতে চাই- 

নূনা আফরোজ: আসলে পুরো শিল্প-সংস্কৃতি জুড়েই একটা অস্থিরতা যাচ্ছে। সেই তুলনায় আমার কাছে মনে হয়, মঞ্চনাটকের অবস্থা ভালো। সমস্যা তো থাকবেই। তবে মঞ্চনাটক দর্শকবিমুখ নয়। প্রচুর দর্শক নাটক দেখতে আসে। আমাদের দুর্ভাগ্য- আমরা দর্শকের জন্য পরিবেশটা তৈরি করতে পারছি না। দর্শক তৈরির পরিবেশটা তৈরি করতে হবে। তবে আমি আশাবাদী মানুষ- মঞ্চনাটকের সম্ভবনা অনেক বেশি ইতিবাচক।

বাংলানিউজ: মঞ্চনাটক’কে আশানুরূপ জায়গা নিয়ে যাওয়ার জন্য তথা দর্শক তৈরির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?
নূনা আফরোজ: এককথায় বলতে গেলে, সরকারকে নজর দিতে হবে। যে দেশ শিল্প-সংস্কৃতিতে যতো সমৃদ্ধ, সে দেশ ততো উন্নত। সংস্কৃতিখাতে এবারের বাজেট আমাদের হতাশ করেছে। যেখানে জীবনধারন করার মতো উপায় থাকে না, সেখানে শিল্পী তৈরি হবে কী করে! শিল্পী তৈরির সুযোগ করে দিতে হবে। একটা কথা না বললেই নয়, একজন শিল্পী বিশেষ করে একজন মঞ্চের মানুষ কখনো ধর্ষক হতে পারে না, ইভটিজিং করতে পারে না, অসভ্য হতে পারে না, দেশদ্রোহী হতে পারে না, রাজাকার হতে পারে, খুন করতে পারে না, মানুষের অকল্যাণ করতে পারে না। অথচ তারাই যদি সুবিধাবঞ্চিত হয়, শিল্পের উন্নতি হবে কীভাবে? দেশের উন্নতি হবে কীভাবে?

বাংলানিউজ: সরকারের পাশাপাশি নাট্যদলগুলোকেও দর্শক তৈরি কিংবা মঞ্চনাটকের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে প্রাঙ্গণেমোর’র বিশেষ কোনো পদক্ষেপ আছে?

নূনা আফরোজ: হ্যাঁ, আমরা এরইমধ্যে একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বছরমেয়াদী ‘প্রাঙ্গণেমোর বন্ধু সদস্য’ তৈরি করছি। বন্ধু সদস্য হওয়ার জন্য এক হাজার টাকা জমা দিতে হয়। তারপর আমরা একটা আইডি কার্ড দেই। কার্ডটির মাধ্যমে আমাদের এক বছরের সবগুলো প্রদর্শনী দেখতে পারেন বন্ধুরা। এর মাধ্যমে অনলাইনেও আমাদের প্রদর্শনীর টিকিট সংগ্রহ করা যায়। আমাদের এই উদ্যোগটি এরইমধ্যে সফল। কারণ নাটক আসলে কেউ একা দেখতে আসে না। সঙ্গে কাউকে না কাউকে নিয়ে দেখতে আসে। তাই একজন বন্ধু সদস্য কিন্তু আরেকজন সদস্য তৈরি করছে, তার সঙ্গতার জন্য। বলে রাখি, ‘প্রাঙ্গণেমোর’ বন্ধু সদস্যরা শুধু আমাদের নাটক নয়, বছরব্যাপী সব ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে পারেন।

বাংলানিউজ: প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত নাটকের সংখ্যা কত? এর মধ্যে আপনার নির্দেশিত কয়টি?
নূনা আফরোজ: প্রাঙ্গনেমোর এখনো পর্যন্ত ১৩টি নাটক প্রযোজনা করেছে। এরমধ্যে আমার নির্দেশিত নাটক চারটি। এগুলো হচ্ছে- ‘স্বদেশী’, ‘রক্ত করবী’, ‘শেষের কবিতা’ ও ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। আমার নির্দেশনার যাত্রাটা  শুরু হয়েছিল প্রাঙ্গণেমোর’র প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘স্বদেশী’ নাটকের মাধ্যমে।

বাংলানিউজ: রবীন্দ্রনাথ’কে নিয়ে আপনার চিন্তা-চেতনার যথাযথ বিকাশ ঘটাতেই প্রতিষ্ঠা করলেন ‘প্রাঙ্গণেমোর’। আর রবীন্দ্রনাথই আপনার স্বপ্নের পুরুষ। তো কবিগুরুকে নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা আছে?
নূনা আফরোজ: মঞ্চটা আমার প্রাণের জায়গা। সিনেমাটা আমাকে খুব একটা টানে না। তবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছে আছে।

বাংলানিউজ: আপনার ভাবনার ফল তথা নির্দেশিত নাটক ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ দেশ-বিদেশে অধিক প্রশংসিত হয়েছে। নতুন গল্প-ভাবনা কী নিয়ে?
নূনা আফরোজ: নতুন গল্প নিয়ে ভাবছি। এখনো চূড়ান্ত করিনি। কী গল্প দাঁড় করারো, আপাতত এই ভাবনায় আছি। তবে এটা নিশ্চিত আগামী বছর নতুন ভাবনার নাটকটি মঞ্চে তুলবো।

বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নূনা আফরোজ: আপনাকেও ধন্যবাদ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। সবার ঈদযাত্রা শুভ হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ