ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

নজরুলকে বুঝেছিলেন-মূল্যায়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
নজরুলকে বুঝেছিলেন-মূল্যায়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই

ঢাকা: ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সবসময়ই উপেক্ষিত ছিলেন। সবসময় তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। কবিকে নিয়ে অনেক রাজনীতিও হয়েছে। তবে কাজী নজরুল ইসলামকে চিনেছিলেন, বুঝেছিলেন এবং মূল্যায়ন করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি চ্যালেঞ্জ করে কবিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে এ দেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেন।’ কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তার প্রসঙ্গে এভাবেই কথা বলছিলেন নজরুলসংগীতশিল্পী সম্পা দাস।

নজরুলসংগীতশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ এবং ভারতে যে ক’জন শিল্পী আছেন, সম্পা দাস তাদের মধ্যে প্রথম সারির। তিনি শুধু সংগীতশিল্পী নন, পাশাপাশি একজন নজরুলগবেষকও।

কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার দু’টি গবেষণামূলক বই ‘একি মধু শ্যাম বিরহে’ ও ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ প্রকাশ হয়েছে। সেইসঙ্গে ‘কোথায় ঘনশ্যাম’ ও ‘আধারে বাঁধ অগ্নিসেতু’ নামে একক অ্যালবামও প্রকাশ হয়েছে। নজরুলকে নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রিকায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম বিষয়ে কাজ করাই সম্পা দাসের ধ্যান-জ্ঞান। ২৭ আগস্ট নজরুলের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সম্পা দাস কথা বলেন কবি, তার জীবন-কর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে।

বাংলানিউজ: কবে থেকে কীভাবে নজরুলসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হলেন?
সম্পা দাস:  খুব ছোট বেলায় নৃত্যশিল্পী নিপা আন্টি (শামীম আরা নিপা) আমাকে নাচ শেখাতেন। ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে, নাচিছে ঘূর্ণিবায়, জল তরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি, ঢেউ তুলে সে যায়’- নজরুলের এমন রিদমিক যে গান, সেগুলোর তালে তালে নাচতাম। এসব গানের কথা, সুর এবং ছন্দ আমার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। ঠিক সেই সময় থেকেই নজরুলের গানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই ভালোবাসা আরও গভীর হয়।  

বাংলানিউজ: কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মকে আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেন? 
সম্পা দাস: কাজী নজরুল ইসলাম বহুমাত্রিক সুরস্রষ্টা। তার কর্মজীবন ছিল মাত্র ২২ বছরের। তার মধ্যে আবার ১৩ বছর শতভাগ নিমগ্ন অবস্থায় সংগীতে পাই। ভারতবর্ষে যে কয়টি সংগীতের ধারা রয়েছে, তার সবক’টি ধারায় তিনি কাজ করেছেন। আবার তিনি নিজেও নিত্যনতুন ধারা, রাগ-রাগিণী এবং তাল সৃষ্টি করেছেন। মানুষের যত ধরনের অনুভূতি রয়েছে, নজরুল মানুষের সব অনুভূতি নিয়ে কাজ করেছেন এবং সেগুলোকে রূপায়ন করেছেন। তিনি সংগীতের সকল শাখায় কাজ করেছেন।

বাংলানিউজ: কবি নজরুল এবং তার গান বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।  
সম্পা দাস: শৈশব থেকেই তার গানের সঙ্গে সখ্য ও ভালোবাসা হওয়ার কারণে আমি যতটুকু বুঝি- নজরুলের একটি গানের একটি লাইন নিয়ে গবেষণা করা যায়। যেমন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, খুঁজি তারে আমি আপনায়, আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি আমারি তিয়াসী বাসনায়’ এটা ভজন অঙ্গের গান। অর্থাৎ মানুষের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে খোঁজার আকুলতা। নজরুলের প্রতিটা গান অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ঠুমরী, গজল, ভজন, শোকের গান, ধীবরের গান, মাঝির গান, মাল্লার গান, সাঁওতালের গান সহজ-সরলভাবে প্রকাশ করে মানবতার কথা বলেছেন তিনি।  
এই গানগুলো তিনি শুধু সৃষ্টিকর্ম সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করেননি। হৃদয় থেকে অনুভব করেছেন। এজন্যই তার মধ্যে এক ধরনের জ্বালা, বিদ্রোহ কাজ করতো যে, সমাজ থেকে নেতিবাচক সামাজিক প্রথা দূর হলেই ‘আমি সেই দিন হবো শান্ত’। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মায়া মমতা দরদই নজরুলের গানের প্রতীক। নজরুল আপাদমস্তক একজন যোদ্ধা সুরস্রষ্টা। নজরুলের যাপিত জীবনের যে কষ্ট এবং বেদনা, এগুলোই তার ঐশ্বর্য।

বাংলানিউজ: সংগীতশিল্পী এবং গবেষক হিসেবে নজরুলের সৃষ্টিকর্ম আরও বেশি গণমানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সম্পা দাস: এখনতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অভ্যাসও পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটা সময় গানের ক্যাসেট বের হতো, এখন আর হয় না। এখন বেশিরভাগ মানুষ অনলাইনে গান শোনে। পর্যায়ক্রমে নজরুলের সমস্ত গানের একটা আর্কাইভ করতে চেষ্টা করছি। এখন মানুষ টেলিভিশন দেখারও সময় পায় না। নাটক, সিনেমা, গান শোনে ইউটিউবে। তাই আমিও একটি ইউটিউব চ্যানেল করেছি গানের আর্কাইভ করার জন্য। নজরুলসংগীতের শ্রোতারা এতদিন শুধু নজরুলগীতি শুনেছেন, কিন্তু এগুলো রচনার প্রেক্ষাপটের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আমি গানটি রচনার পরিবেশ, পরিস্থিতি কী ছিল এই বিষয়গুলো নিয়েই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপর গল্পসহ সেই গান তুলে ধরছি শ্রোতাদের কাছে। শ্রোতারা গানটাও শুনতে পারবেন, গান রচনার গল্পটাও জানতে পারবেন।

বাংলানিউজ: একজন নজরুলপ্রেমী এবং গবেষক হিসেবে আপনার কি মনে হয় নজরুলকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না? 
সম্পা দাস: বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সবসময়ই উপেক্ষিত ছিলেন। সবসময় তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। কবিকে নিয়ে অনেক রাজনীতিও হয়েছে। তবে কাজী নজরুল ইসলামকে চিনেছিলেন, বুঝেছিলেন এবং মূল্যায়ন করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি চ্যালেঞ্জ করে কবিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে এ দেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। দু’জনেই বাংলাদেশ এবং বাঙালিকে ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধু যে সত্যিকারেই বাঙালি জাতির পিতা নজরুলকে ফিরিয়ে আনার ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে তা আরও বেশি স্পষ্ট হয়। তিনি একজন সত্যিকারের জাতির পিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলানিউজ: নজরুলের প্রয়াণ দিবসে নজরুলসংগীতের শ্রোতাদের উদ্দেশ্য কিছু বলবেন কী? 
সম্পা দাস: আমি সবাইকে অনুরোধ করে বলতে চাই, নজরুলকে জন্মদিন এবং মৃত্যুদিবসে আবদ্ধ না করে, আমাদের দৈনিন্দন যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ করে তুলুন। নজরুল আমাদের কবি। বাংলাদেশের কবি। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে মানবতার কথা বলেছেন তার সৃষ্টিতে, আমাদের হৃদয়ে তিনি প্রেম, ভালোবাসা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জাগাবার চেষ্টা করেছেন। নজরুল এবং তার সৃষ্টিকে আমরা যদি জানতে-বুঝতে পারি তাহলে বাঙালি হিসেবে আমরা নিজেরাই সমৃদ্ধ হবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ