ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

থাইল্যান্ড

যানজট থাকলেও ঢাকা থেকে আলাদা ব্যাংকক

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৬
যানজট থাকলেও ঢাকা থেকে আলাদা ব্যাংকক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্যাংকক থেকে: ট্রাফিক জ্যামে‍ দুই কিলোমিটার পথ যেতেই আধাঘণ্টা পার। যা ঢাকা থেকে খুব বেশি আলাদা নয় নয় বৈকি।

তবে যানজটের ধরণ দেখে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে ঢাকার মত জ্যামের শহর বললে ভ‍ুল হবে।

রাস্তার বিকল্প হিসেবে স্কাই ট্রেন ও নদীপথে নৌকা বা ওয়াটার বাস ঢাকা থেকে প্রায় ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিরাট শহরে আলাদা করে তুলেছে। যাতায়াতকে করেছে আরো সহজ। তাই রাস্তার যানজট এড়াতে বিকল্প হিসেবে কেউ এই দুটি মাধ্যমের যে কোনো একটি ব্যবহার করতে পারে। গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে কোনো ধরনের যানজট ছাড়াই।

ব্যাংকক শহরটি চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত। এই নদীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শহরটির ভেতর দিয়ে আরো অসংখ্য লেক তৈরি করা হয়েছে।   যা দিয়ে প্রতিদিন শত শত ওয়াটার বাস চলে। কিছুদূর পরপরই রয়েছে নৌকাগুলোর ঘাট। অপরিচিত যাত্রীদের জন্য ঘাটেই রয়েছে পুরো শহরের ম্যাপ। ব্যাংককে ঘোরাঘুরির জন্য নৌকায় যাতায়াত অত্যন্ত সাশ্রয়ী।

জানা যায়, চাও ফ্রায়া এক্সপ্রেস বোট নামে যে সার্ভিসটি চালু রয়েছে, সেটি রতি বুরানা থেকে নোনথাবুড়ি এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩৪টি ঘাটে থামে।

২-৫ মিনিট পরপরই এসব ঘাটে নৌকা আসে। নৌকার ভেতরে রয়েছে বেঞ্চের মত বসার জায়গা। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নৌকাগুলো ঘাটে থামার পর নৌকায় লাগানো দড়ি ধরে তাতে উঠতে হয়। গন্তব্য জিজ্ঞেস করে ভাড়া চাইবে নৌকার কর্মচারীরা। ভাড়া মেটানোর পর একটা টিকিটও ধরিয়ে দেবে তারা। সামান্য দূরত্বে চলাচলের মত লম্বা দূরত্বে চলাচলের জন্য নদী পথে ১৫টি রুট রয়েছে।

যাত্রীবাহী নৌকা ছাড়াও  চাও ফ্রায়া নদীতে ফেরি চলাচল ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাংকক, নোনথাবুড়ি ও সমুট প্রাকান এলাকার ভেতরে প্রায় ৩২টি ক্রসিংয়ে ফেরি চলাচল ঘাট রয়েছে। এসব নদী বা খালের পানি খুব বেশি স্বচ্ছ না এবং দুর্গন্ধও রয়েছে। তবে কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলানোর কারণে সেটা ব্যবহারযোগ্য। আর দ্রুত নৌকা চলাচলের কারণে অসহনীয়ও নয়। এই খাল বা নদীর দুপাশ দিয়ে নোনা ধরনের ফুল গাছ লাগানো রয়েছে। যা তৈরি হয়েছে এই মেট্রোরেলের যাতায়াত পথ। আর এ কারণে একে স্কাই ট্রেন নাম দেওয়া হয়েছে। এখানেও একইভাবে ম্যাপ দেখে গন্তব্য নির্ধারণ করে কয়েনের পরিবর্তের কার্ড নিতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অতিক্রম করে পৌছাঁতে হয় ট্রেন লাইনের কাছে।

ব্যাংকক শহরে দুটি লাইনে মোট ৩৪টি স্টেশনের মাধ্যমে স্কাইট্রেন অপারেট করা হয়। দুই লাইনের একটি সুকুম্ভিত লাইন অন্যটি সিলম লাইন। সোয়া ২২ কিলোমিটার লম্বার সুকুম্ভিত লাইটিতে ২২টি স্টেশন।   আর ১৪ দশমিক ২ কিলোমিটারের সিলম লাইনটিতে রয়েছে ১৩টি স্টেশন। এই স্কাইট্রেনগুলোও প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী পরিবহন করে।

যে রাস্তার বিকল্প নিয়ে এতো কথা, এবার জানা যাক সেই রাস্তার কি অবস্থা। রাস্তাগুলোতে ঢাকার মতই ট্যাক্সি, প্রাইভেট কারের দৌরাত্ম। বিভিন্ন রুটে প্রাইভেট কোম্পানির বাসের সঙ্গে রয়েছে ফ্রি সরকারি সার্ভিসও। কোম্পানিগুলো যাতে ইচ্ছেমত গাড়ি ভাড়া বাড়াতে না পারে সেজন্য সরকার ফ্রি কিছু বাস চালায়। দিন শেষে দরিদ্র মানুষদের একটা বিরাট অংশ ওই বাসে করেই ঘরে ফেরেন।

এছাড়া পর্যটকদের কাছে বিখ্যাত টুকটুক নামে একধরনের পরিবহনও চলে ব্যাংককে। বাংলাদেশের সিএনজি গুলোর মতই দেখতে তবে চারপাশটা খোলামেলা আর সাজানো হওয়ায় সেটি দেখতেও ভীষণ সুন্দর। এই টুকটুকের ভাড়াটা একটু বেশি। তবে যত গাড়িই রাস্তাতে থাক না কেন, কাউকেই রাস্তার নিয়ম অমান্য করতে দেখা যায়না।


এমনকি পাশে লেন খালি থাকলেও এক লেনের গাড়ি অন্য লেনে প্রবেশ করে না। জানতে চাইলে এখানকার চালকরা বলেন, এটা নিয়ম নেই। এছাড়া যানবাহন বেশি থাকলেও কোনো ধরনের হর্ণের শব্দও নেই। হর্ণ বাজালেই ৫শ বাথ জরিমানা গুনতে হয় তাদের। এছাড়া চালকরা নিজেরোও মনে করেন হর্ন বাজানোর অর্থ অন্যকে অপর ড্রাইভারকে গালি দেওয়া।

ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে মূলত: চারটার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। তাই এই সময়টাতে ট্যাক্সি চালকরা সাধারণের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করে।
এছাড়া রাস্তা দিয়ে দ্রুত চলাচলের জন্য রয়েছে মোটরবাইক ট্যাক্সি। মোটরসাইকেলগুলো যাত্রী পরিবহন করে। জ্যাম থাকলেও রাস্তার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে তারা যাত্রীকে দ্রুততার সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এদের খরচ কিছুটা বেশি। আর প্রত্যেকটি গাড়ি ট্রাফিক আইন মেনে চলায় রাস্তার প্রতি লেনের মাঝে মোটরসাইকেল চলার মত যথেষ্ট থাকা জায়গাও থাকে। রিকশাবিহীন শহরে তারা কিছুটা রিকশার কাজও করে থাকে।

“যানজট থাকলেও চলাচলের এই ভিন্ন ভিন্ন উপায় ব্যাংকককে আরো সহজ করে তুলেছে। যেখানে ঢাকায় আমরা রাস্তাতেই বন্দি। ” বলছিলেন রিনা আক্তার নামে একজন বাংলাদেশি পর্যটক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছিলাম ঢাকায় বৃত্তাকার নৌপথ চালু হবে। দেশের বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও সেটা দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর সে বিষয়ে কোনো আলাপ নেই। সরকার সেটা চালু করতে পারলে অন্যতম সাফল্য আসতো।

তবে বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্প শুরু করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন রিনা আক্তার

** ভূতের ভয়ে বন্ধুর ঘর থাইদের!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
জেপি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

থাইল্যান্ড এর সর্বশেষ