ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দেশেই হয়ে ‍যাক মধুচন্দ্রিমা

মাহবুব আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
দেশেই হয়ে ‍যাক মধুচন্দ্রিমা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: হাল আমলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও মধুচন্দ্রিমা একটি অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত-সবাই বিয়ের পর সামর্থ্য অনুযায়ী নববধূকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যান।


 
সদ্য জীবন সঙ্গীর সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য এর বিকল্প নেই। কাছে কিংবা দূরে, যেখানেই হোক না কেন জায়গাটা হওয়া চাই সুন্দর, শান্ত ও নিরিবিলি


বাংলাদেশে মধুচন্দ্রিমায় ভ্রমণের জন্য অনেক জায়গাই আছে। এসব জায়গায় আছে থাকা-খাওয়া এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তেমনি কয়টি জায়গার খোঁজ-খবর থাকছে বাংলানিউজের এবারের আয়োজনে।

কক্সবাজার
মধুচন্দ্রিমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার একটি উত্তম জায়গা। যারা সমুদ্র ভালোবাসেন তারা ছুটে যেতে পারেন সেখানে।


তবে কক্সবাজার সারাবছরই পর্যটকে ঠাসা থাকে। নবদম্পতিরা যেহেতু নিরিবিলি জায়গায় যেতে চান-তাই হয়তো অনেকেরই অপছন্দ হতে পারে।

সেক্ষেত্রে যেতে পারেন ইনানী সৈকতে। এখানকার কিছু রিসোর্টে আপনার মধুচন্দ্রিমা হয়ে থাকবে স্মরণীয়।

একেবারে প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে নতুন দুইটি মানুষ একে অপরকে জেনে নেওয়ার হয়তো এটাই সঠিক জায়গা। লাল কাঁকড়া আর সমুদ্রের গর্জনে হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির কোলে!

সেন্টমার্টিন
কক্সবাজারের পযর্টন স্পটগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় গন্তব্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ। স্থানীয়ভাবে পরিচিতি নারকেল জিঞ্জিরা নামে। মধুচন্দ্রিমার জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা।


সাগরের নীল জলের মধ্যখানে গড়ে ওঠা নির্জন ‌এ দ্বীপে নতুন জীবনসঙ্গীকে একান্ত সময় দিতে ঘুরে আসতে পারেন সেন্টমার্টিন থেকে।

টেকনাফ থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সাগরে ভেসে জাহাজে করে পৌঁছাতে হবে নারকেল জিঞ্জিরায়।


এখানে পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব রিসোর্ট ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন হোটেল-কটেজ গড়ে উঠেছে।

টেকনাফ
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ উপকূলীয় এলাকাও হতে পারে মধুচন্দ্রিমার জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা। এখানকার সৈকত বেশ মোহনীয়, যেন পর্যটকদের পাশাপাশি নবদম্পতিদেরও হাতছানি দিয়ে ডাকছে।


বাংলাদেশ-মায়ানমার বিভক্তকারী নাফ নদীর উপরে নানা ধরনের সাম্রদ্রিক পাখির ওড়াউড়ি আর নির্জন সৈকতে হেঁটে অবলোকন করা যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য। ইচ্ছে করলে কক্সবাজারে থেকেও দিনে দিনে ঘুরে আসতে পারেন টেকনাফ থেকে।

বান্দরবান
পাহাড়ের বুকে ভাসা ভাসা মেঘের খেলা আর প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে চলে যেতে পারেন বান্দরবান। চট্টগ্রাম থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান।


ভিন্ন সংস্কৃতি আর পাহাড়ে উপজাতীয়দের সঙ্গে কিছুটা মধুর সময় কাটিয়ে আসতে পারেন বান্দরবান থেকে। যা আপনার মধুচন্দ্রিমাকে স্মৃতিময় করে তুলবে।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। এটি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার মন্দিরগুলোর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার এবং উজানীপাড়ার বিহার।

শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতীয়দের গ্রাম। প্রান্তিক হ্রদ, জীবননগর এবং কিয়াচলং হ্রদ আরও কয়েকটি উল্লেখ্য পর্যটন স্থান। রয়েছে মেঘলা সাফারি পার্ক, যেখানে রয়েছে দুটি সম্পূর্ণ ঝুলন্ত সেতু।

এখানকার বাকলাই ঝরণা, চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ, চিনরি ঝিরি ঝরণা, ফাইপি ঝরনা, জাদিপাই ঝরনা, মিরিংজা পর্যটন, নাফাখুম, রেমাক্রি, নীলাচল, নীলগিরি, থানচি, পতংঝিরি ঝরণা উল্লেখযোগ্য।

রাঙামাটি
মধুচন্দ্রিমার জন্য যেতে পারেন রাঙামাটিতে। প্রেয়সীকে নিয়ে ভেসে বেড়াতে পারেন কাপ্তাই লেকে।


এখানকার উপজাতীয় সংস্কৃতি ও জীবনাচার আপনার হানিমুনকে আরও মধুর করে দেবে। থাকার জন্য পর্যটন করপোরেশনের মোটেলসহ অনেক রিসোর্ট রয়েছে।

ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন
বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী প্রশস্ত বনভূমি সুন্দরবন বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত।


সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন নবদম্পতিদের একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

প্রকৃতির কাছে দুজন দুজনকে কছে পাওয়ার জন্য এই বিস্ময়বনের বিকল্প নেই। তবে এখাবে বেড়াতে অবশ্যই কোনো ট্রাভেল এজেন্সির (ভ্রমণ সংস্থা) সঙ্গে যেতে হবে।


ঢাকা ও খুলনার বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি সুন্দরবনে নিয়মিত প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই গাইডসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেবে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
একটি কুড়ি দুইটি পাতার দেশ সিলেট। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হতে পারে আপনার মধুচন্দ্রিমার অনত্যম গন্তব্য।


সেক্ষেত্রে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল একটি আকর্ষণীয় জায়গা। এখানকার চা বাগান ছাড়াও ঘুরে বেড়াতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর হ্রদ ইত্যাদি জায়গায়।


সম্প্রতি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে শ্রীমঙ্গলে বেশ কটি আধুনিক রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে গ্র্যান্ড সুলতান উল্লেখযোগ্য।
নব দম্পতিদের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজের আয়োজন করে থাকে গ্র্যান্ড সুলতান।

কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
অরূপ রূপের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকত অন্যতম নৈসর্গিক জায়গা।


এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।

মধুচন্দ্রিমার জন্য এ জায়গাটিও বেছে নিতে পারেন নবদম্পত্তিরা। থাকা-খাওয়ার জন্য জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের রিসোর্ট পর্যটন হলিডে হোমস রয়েছে। আছে পর্যটন ইয়ুথ ইন।


এসব রিসোর্ট ও মোটেলে এসি-ননএসি কক্ষে নবদম্পতিরা অবস্থান করতে পারেন। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বেশ কিছু হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে কুয়াকাটায়।

উত্তরাঞ্চলে মধুচন্দ্রিমা

উত্তরাঞ্চলে যেসব পর্যটন স্পট রয়েছে সেগুলোতে মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম! তবে যারা গিয়েছেন তারা ‍অবলোকন করেছেন প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য।

রাজশাহীর পদ্মাপাড়, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির অন্যতম পর্যটন স্পট।

কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে উপরে উল্লেখিত বেশির জায়গাতেই সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায়। আছে প্লেনে যাওয়ার ব্যবস্থাও। কুয়াকাটায় ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে যেতে পারেন পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে। তবে ঢাকা থেতে বাসেও যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।