ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৪৮

পটুয়াখালী - নলছিটি ( ঝালকাঠি) - বরিশাল = ৪৩.৮৮ কি. মি.

চৌরাস্তার মোড় থেকে কয়েক কদম যেতেই প্রচুর শালিকের কিচিরমিচির। এই সকালবেলা অল্প কিছু ছিটিয়ে দেওয়া ভাত ঘিরে ওদের বিশাল জমায়েত।

লাউকাঠী নদীর উপরের সেতু পেরোলাম মিনিট কয়েকের মধ্যেই। পটুয়াখালী শহর‍টা মূলত এই নদীর তীরেই অবস্থিত। এই ভোরবেলাতেই সেতুর উপরটা মাতিয়ে রেখেছে চার চপলা তরুণী। হালকা কুয়াশার মধ্যেও চলছে তাদের সেলফি বিলাস।

সেতুর নিচেই খেজুর গাছের সারি। ডিজিটাল খেজুরগাছের দেখা মিললো এখানেই। মাটির হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিকের পাত্রের দেখা মিলছে হরহামেশাই। তবে সবচেয়ে মজা পেলাম একটা খেজুর গাছে উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি রাখা আছে দেখে।

ডিজিটাল খেজুর গাছ।  গাছে উঠার জন্য রাখা আছে কাঠের সিঁড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ

আজকের গন্তব্য বরিশালে যেতে হবে এন-৮ নামক মহাসড়ক ধরে। আজকেও সঙ্গী হবার কথা ছিল শিবলী ভাইয়ের। কিন্তু গতকালের হাঁটার পরে ব্যথাটা সকাল নাগাদ না সারায় উনি আর বেরোননি আজ। শিয়ালী বাজার থেকে সামনের দিকে যেতেই রাস্তা হয়ে গেলো সরু। রাস্তার দুইপাশের কিছুটা করে অংশ তুলে ফেলা হয়েছে বর্ধিতকরণের কাজের সুবিধার্থে। একই সাথে রাস্তার পাশে অনেকগুলো কাটা গাছ। রাস্তার উন্নয়নকাজ মানেই প্রথম কোপটা পড়বে গাছের উপর। এ নিয়ে কদিন আগে কলকাতার এক বন্ধুর ওয়ালে একটা কবিতা দেখেছিলাম। বেশ মনে ধরেছিল কবিতাটা।

‘ওরা দলে দলে খুন হয়ে যায়
যান না লাশ কাটা ঘরে,
বিচার পায় না বুড়ো বটগাছ
বিকিয়ে যায় সস্তা দরে। ’

অন্য গাছ কাটা পড়লেও কেন জানি খেজুর গাছের উপর কোপ পড়েনি। খেজুরের রসই হয়তো এই মৌসুমটা বাঁচিয়ে দিয়েছে ওদের। বদরপুরের পরেই কচাবুনিয়া নদী। এ নদী দৈর্ঘ্যে সাকূল্যে ১২ কিলোমিটার। নদীর এপারে সদর উপজেলার সীমানা শেষ। ওপারে দুমকি উপজেলা। এ অঞ্চলে জেলা-উপজেলার সীমানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নদী দিয়েই করা। নদীবিধৌত অঞ্চল হবার এই এক সুবিধা। রাস্তায় গাছ কাটার ফলশ্রুতিতে নেই একফোঁটা ছায়া। সকাল থেকেই লোকে খালি জিজ্ঞাসা করেই যাচ্ছে আমি কুয়াকাটা থেকে ফিরছি কিনা। একটা যুদ্ধবিমানের রেপ্লিকার গায়ে লেখা পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জায়গার নাম ইউনিভার্সিটি স্কয়ার।

পায়রা নদীর উপর নির্মীয়মাণ সেতু।  ছবি: বাংলানিউজ

পাগলার মাজার পেরিয়ে পায়রা নদী। দেড় কিলোমিটার লম্বা সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ চলছে এখানে। ফেরীতে উঠার আগে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা বলে ডাকছিল এক বাসের কন্ডাক্টর। পাশের আরেকজন কন্ডাক্টর বলে উঠল - ‘হে পাগলা কিসিমের। হে যাইবো পাবনা। ’ ফেরী পার হয়ে গেলাম লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসে। আমার মেডিক্যালের সিনিয়র সৌরভ ভাই এখানে কর্মরত। পায়রা নদীর গা ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে এই সেনানিবাসটি। লাল রঙ করা সুন্দর তোরণ পেরিয়ে সোজা সিএমএইচে। সৌরভ ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন উনার দুই সিনিয়র মেজর ইমরান আর রফিকের সঙ্গে। ইমরান ভাই কয়েক দফায় বেশ ক’বার পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিলেন চাকরিসূত্রে। উনার বলা বেশ কিছু জায়গায় আমার যাওয়া হয়েছে। সেসব নিয়ে গল্পের ফাঁকে সকালের নাশতা সারা হলো। এক ফাঁকে আশপাশটা ঘুরে দেখালেন সৌরভ ভাই আর বিদায়বেলায় আরেকবার হাতে সময় নিয়ে এদিকে আসার দাওয়াত দিতেও ভুললেন না।

পায়রা নদী পেরিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম বরিশাল জেলায়। প্রথম উপজেলার নাম বাকেরগঞ্জ। একসময় নাকি বরিশালের নাম ছিল বাখরগঞ্জ। একে একে পেছনে ফেললাম দুধলমৌ, লক্ষীপাশা বাজার, ভরপাশা। সংগীতা সিনেমা হল মোড়ে দেখা পেলাম মৌসুমী পতাকা বিক্রেতার। জাতীয় দিবসগুলো সামনে রেখেই উনারা বের হন রাস্তায়। আউলিয়াপুরের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই প্রতিবেশীর ঝগড়া দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ।

বাকেরগঞ্জের রাস্তা।  ছবি: বাংলানিউজ

বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় গাল-মন্দ শুনতে আমার বেশ লাগছিল। ঝগড়াটা প্রত্যাশার চেয়েও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়াতে মন কিছুটা খারাপই হলো। এইদিকের রাস্তায় অনেকগুলো বড়গাছ আছে। এদের বিশাল কান্ডের অধিকাংশই আচ্ছাদিত ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদে। নন্দপাড়া বোয়ালিয়া হয়ে বাখরকাঠি বাজারের একটু পরে প্রবেশ করলাম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। জুরকাঠী শিমুলতলা বাজার ছাড়িয়ে কাঠের ঘর বাজার। নাম কাঠেরঘর হলেও সব টিনের তৈরি দোকান বাজারে।

আরও কিছুদূর পা চালাতে ভরৎকাঠি। নামের শেষে ‘কাঠি’ নামটা এইদিকে বেশ প্রচলিত। লেবুখালী সেনানিবাস অদূরে হওয়ায় এই রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি প্রচুর। বুড়িরহাটের কিছুটা পরে জিরো পয়েন্ট নামক এলাকা। জিরোপয়েন্ট থেকে ডানদিকে মোড় নিতেই রাস্তাটা বেশ সুনসান। দেড় কিলোমিটারের মতো সামনে যেতেই প্রথমে খয়রাবাদ নদী। এই নদীর উপর নির্মিত সেতুর ওপারেই বরিশাল জেলা শুরু।

শালিকের দলের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজ

কর্ণকাঠীর পরের মোড়টার নাম হিরণ পয়েন্ট। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটরঙা দালানগুলো প্রথম চোখে পড়লো এখানেই। একই রঙের দালানগুলো দেখতে বেশ লাগছে। খয়রাবাদ নদী আর কীর্তনখোলা নদীর মাঝামাঝি অংশে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। কীর্তনখোলা নদী বেশ প্রশস্ত। সেতুর বামের অংশ বেশ সবুজ। চোখ ফেরানো দায়। সেতুর ওপার থেকে রুপাতলী। গোলচত্বরের বেড়া দেওয়া জায়গায় কে যেন লাল শাক আর বেগুনি লাগিয়েছে ফুলের বদলে।

মূল শহরের দিকে যতই এগোচ্ছি, যান্ত্রিক শব্দের তীব্রতা ততই বাড়ছে। সাগরদী বাজার ছাড়াতেই নানা বিকট শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়। এই শহরের বেশিরভাগ অটো-টমটম আগেকার দিনের টু স্ট্রোক ট্যাক্সির মতো হলদে রঙ করা। আমতলা মোড় থেকে বামে গিয়ে আলেকান্দা। চৌরাস্তার কাছে বিশাল জটলা। ধরে নিয়েছি কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে নিশ্চয়ই। একটু পরে বুঝতে পারলাম এই জটলা একটা ট্রাককে কেন্দ্র করে। আর সেখানে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।  ছবি: বাংলানিউজ

হাতেম আলী কলেজের সামনে এসেই ফোন দিলাম মেহেদী ভাইয়ের মা’কে। উনাদের বাসাতেই থাকবো আজ। আন্টি মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে আসতেই বিশ কদম হেঁটেই উনাদের বাসা। বাড়ির নাম মেহেদী ভাইয়ের নামানুসারে ‘মেহেদী কটেজ। ’ মেহেদী ভাই দেশে না থাকলেও অনেক আগেই আমি আসার কথা বলে রেখেছিলেন আন্টিকে। ফ্রেশ হয়ে বেরোলাম শোভন ভাইয়ের বাইকে। দীর্ঘদিন বাদে দেখা উনার সঙ্গে। পথে রুপাতলীতে অপেক্ষা করছিলেন তসলিম ভাই। উনাকে তুলে নিয়ে ওখান থেকে সোজা শোভন ভাইদের ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে।

চলবে...
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।