দক্ষিণের জাতীয় সড়ক দিয়েই আমাদের যেতে হবে। যেটা চলে গেছে নীরমহল ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিখ্যাত জেলা সিপাহীজলার উপর দিয়ে।
যাত্রার শুরুতে রাস্তা খারাপ হলেও পরের দিকে বেশ ভালো। আঁকা-বাঁকা সড়ক। মাঝে মধ্যে ডুবে যেতে হয় আমাদের লাউয়াছড়া কিংবা খাগড়াছড়ির মতো ল্যান্ডস্কেপে। চা বাগান, রাবার বাগান আর সড়কের দুপাশে ঘন জঙ্গল। সিপাহীজলা বাজারে নেমে নলা মাছ, পাঠার মাংস আর ডাল-সবজি দিয়ে খেয়ে ফের রওয়ানা। বিশালগড় চা বাগান ও রাবার বাগানটি বেশ মনোরম। পথ চলতে চলতে বিকেলে পৌঁছালাম প্রায় ১৯০ বর্গকিলোমিটারের তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে।
বনের তিনটি ভাগ রয়েছে। একটিতে লেক, পিকনিক স্পট, একটি প্রজাপতি পার্ক আরেকটি ইডেন অব বাইসন। জয়চণ্ডীপুর ইকো ট্যুরিজমের আওতায় বছর পাঁচেক হলো এখানে কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়েছে। মাত্র ৬ রুপির টিকিট কেটে ঢোকা যায় বনে। তবে বাংলাদেশ থেকে এতো দূরে এসেছি শুনে সেটাও মাপ করে দিলেন টিকিটম্যান।
লেকের অংশে বানর, পাখি, সাপ, মায়া হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাস। আমাদের ধারণা ছিলো এ বনেও বাইসন দেখা যাবে। তাই ঘন জঙ্গল ঘেরা বনে ঢুকে ঘোরাঘুরি। লেকের কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ সামনে পড়লো এক বাদামি কাঠবিড়ালি। বেশ নির্ভিকচিত্তেই সে আমাদের চিত্তবিনোদন দিতে থাকলো। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
একটু এগিয়ে সামনে যেতেই খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো আরও দুটির দেখা। একেবারের কাছে হওয়ায় রীতিমতো চোখাচোখি হলো তাদের সঙ্গে। ক্যামেরার ক্লিকের সঙ্গে সঙ্গে সেও যেন দিতে থাকলো নানান পোজ। বর্ষায় বনের এখন যৌবন। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। তবে দর্শনার্থী কম। লেকের ঘাটে অলস শুয়ে থাকতে দেখা গেলো তত্ত্বাবধায়ক প্রদীপকে। ৩০ রুপিতে নৌকায় করে আধাঘণ্টা ঘোরা যায় এক কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে থাকা লেকে।
লেকটি বেগুনি শাপলায় ঢাকা। দূরে দুটি ল্যাঞ্জা হাঁসকে দেখা গেলো ঘুরে বেড়াতে। লেকের পাড়ে রয়েছে বসার জায়গা। উপরে ব্রিজও রয়েছে একটি। চারদিকে নিরিবিলি সবুজে ঢাকা। দুটি ট্রেইলে ট্রেকিংও করার সুযোগ রয়েছে এখানে। হরিণ কিংবা বানর দেখার প্রয়াসে বেশ কিছুক্ষণ চুপিসারে হাঁটা হলো। কিন্তু হতে হলো নিরাশ। শেষ দিকে সেই বাদামি কাঠবিড়ালিটিই নিরাশার মাঝে কিছুটা আশা জাগালো।
ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে টিকিটম্যানের কাছে জানা গেলো বাইসন দেখতে হলে এখনই চলে যেতে হবে ৫শ মিটার দূরে। বিকেলে নাকি বাইসনরা খেতে বের হয়। শুনেই দেরি না করে দৌড় ইডেন অব বাইসনে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দেখাও গেলো একপাল বাইসন।
নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ছাড়াও আগরতলা থেকে গাড়িতেও যাওয়া যায় দক্ষিণ জেলা। ভাড়াও খুব বেশি না। সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এএ