ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটন বর্ষ-২০১৬

‘আগে চাই যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন’

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
‘আগে চাই যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন’

ঢাকা: দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার ফল সুফল হবে না বলে মনে করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, শুধু প্রচারণা করে কতোটা লাভ হবে, যেখানে পর্যটন স্পটে যাওয়ার মতো রাস্তা নেই, গেলে শুধু দেখা ছাড়া আর কোনো ইভেন্টও থাকে না।

তাই দেশের পর্যটনের প্রসার ঘটাতে আগে অবকাঠামো ও যোগাযোগের উন্নয়ন জরুরি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশেদুল হাসান বলেন, সবার আগে দরকার অবকাঠামো গড়ে তোলা। । আমি এক জায়গায় যাবো- যদি সেখ‍ানে যাওয়ার মতো রাস্তা না থাকে। তাহলে যাবো কীভাবে। তাই বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে।

‘আমাদের পর্যটনের সম্পদ বাড়ছে না। আর এখানে পর্যটন বিকাশে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ও জরুরি। যেটা হচ্ছে না। ’

আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, দেশে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে চাইলে সরকারের ১৫টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। যারা যৌথভাবে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কাজও বাস্তবায়ন করবে। সেখানে  শুধু বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যে কারণে এ খাতে উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

‘আমদের টার্গেট অরিয়েন্টেড প্ল্যানিং নেই। প্রত্যেক দেশে আগামী পাঁচ বছরে এতো লাখ পর্যটক নিয়ে আসবো, এজন্য কী করতে হবে সে ধরনের কোনো প্ল্যান এখনও পর্যন্ত করা হয়নি,’ যোগ করেন দেশের পর্যটন বিষয়ে প্রথম এই পিএইচডি গবেষক।

একই কথা বললেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান খানও।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি ট্যুরিস্ট দেশ। তবে পর্যটক আনতে যে সুবিধা থাকা দরকার তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
 
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের পর্যটন ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত আছেন উদ্যেক্তা তানভীর চৌধুরী। বললেন, সিলেটের বিছনাকান্দি বাংলাদেশের অন্যতম একটি অনিন্দ্য সুন্দর পর্যটন স্পট। অথচ সিলেট থেকে বিছনাকান্দি যাওয়ার যে রাস্তা, এর মতো নাজেহাল সড়ক খুবই কম আছে। সেখানে নেই থাকার কোনো ব্যবস্থা, একই অবস্থা জাফলং-এরও।

যাতায়াত ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসিফ শুভ নামে এক পর্যটক বলেন, ‘ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি বা বান্দরবান যেতে একদিন চলে যায়, আবার ফিরতেও একদিন। অথচ রাঙ্গামাটিতে একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থাকলে সেখানে পর্যটক কয়েকগুণে বেড়ে যাবে। আর খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে ঢাকা  থেকে সহজে চলাচল করা যাবে। ’

‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি না করে পর্যটন বর্ষ ঘোষণায় তেমন লাভ হবে না,’ বলেন তিনি।

ভ্রমণ বিষয়ক লেখক ও নাট্যনির্মাতা শাকুর মজিদ বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অবস্থার স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশি পর্যটক টানা কষ্টকর। বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে দেদার ডলার উড়াবে, সে রকম সুযোগ ও পরিবেশ তৈরি না হলে কেবল দেশি পর্যটককে দিয়ে এসব ট্যুরিস্ট স্পটের প্রাণ রক্ষা করা যাবে না। ’

‘দেশি পর্যটকদের আরও কাছে টানার জন্য কিছু কিছু রিসোর্ট মালিকের মুনাফাপ্রীতি কমিয়ে সেবাপ্রীতির প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার,’ বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পর্যটন বিকাশে যোগাযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।   কক্সবাজারে বিমানবন্দরের রানওয়ে বড় করা হচ্ছে। সেখানে রানওয়ে বড় করার কাজ চলছে।

‘কক্সবাজার থেকে টেকনাফে যাওয়ার রাস্তা ফোরলেন হবে। মেরিন ড্রাইভ তো আছেই। আর রেললাইন হয়ে হলেও পর্যটনে বেশ সুফল আসবে,’ বলেন তিনি।

দেশে বর্তমানে ৮শ’র মতো স্পট রয়েছে জানিয়ে অপরূপ চৌধুরী বলেন, এসব স্পটে পর্যটক যেতে পারেন। আবাসিক ও খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে কাজ করছে পর্যটন করপোরেশন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এসএ/এমএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ