ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মহানন্দার বালুচর যেন সমুদ্র সৈকত

রাজিউর রহমান রাজু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
মহানন্দার বালুচর যেন সমুদ্র সৈকত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড়:

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।


..........................

তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই রূপ মূর্ত হয়ে উঠছে পঞ্চগড়ের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার উপর দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর শুকিয়ে আসা বুকে।

প্রকৃতিতে বৈশাখ আসি আসি করলেও এরইমধ্যে ধু ধু চরজাগা পঞ্চগড়ের মহানন্দা নদীতে পানি এসে দাঁড়িয়েছে হাঁটু সমান।

সকাল-বিকেলে সেখানে এখন গ্রামের দূরন্ত শিশু-কিশোরদের গোসল, মাছ ধরা চলে। আর বিকেল হতেই তীরে, বালুচরে আশপাশ ও দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা।

তাদের কাছে নদীর বালুচরে এ বেড়াতে আসা অনেকটা সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলা দেখতে আসার মতোই। স্থানীয় অনেকের দাবি, বছরের এ সময়টাতে, গ্রীষ্মের আগমনীতে মহানন্দা শুকিয়ে তীর ও চর হয়ে ওঠে এক টুকরো সমুদ্র সৈকতের মতো।

তবে ফাল্গুন বা বৈশাখ যাই হোক, হাঁটুজল মাড়িয়ে ওপারে গরু-কিংবা গাড়ি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এপারে দাঁড়িয়ে ওপারের উঁচু ধার ঘেঁষেই চা বাগান।

তবে ওপারের চা বাগান, এর মনোরম প্রকৃতি শুধু চোখে দেখেই তৃপ্ত হতে হয় এপারের মানুষকে। ওপারে পাড় ঘেঁষে যে চা বাগান শুরু তা ভারতীয় ভূখণ্ডে। ফলে অলিখিতভাবে মহানন্দার স্বচ্ছ জলধারা পৃথক করে দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত।

সম্প্রতি হিমালয়কন্যা হিসেবে খ্যাত তেঁতুলিয়ার মহানন্দার বালুচরে গিয়ে দেখা মেলে নানান বয়সী পর্যটকদের। তাদের আনাগোনায় মুখর হয়ে আছে সমুদ্র সৈকত হয়ে ওঠা বালুচর।

এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে আসা শিশুরা  কেউ কেউ মহা আনন্দে মহানন্দার হাঁটুজলে নেমে গোসলে মত্ত হয়ে উঠেছে। বড়রা ব্যস্ত তপ্ত বালুচরে হাঁটাহাঁটি শেষে মহানন্দার স্বচ্ছ পানিতে নেমে একটু শীতল প্রশান্তি অনুভবে।

এখানে-ওখানে অনেকেই মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন। দলবেঁধে হাঁটছেন মহানন্দার বুকে। বড়দের কেউ কেউ নদীর পানিতে একটু গা ভিজিয়ে নিচ্ছেন।

শুধু সৈকত সদৃশ হয়ে ওঠা মহানন্দার বালুচরে নয়, তেতুলিয়ায় এখন আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা। তবে দলবলে যারা আসছেন, তাদের আসছেন শিক্ষা সফর কিংবা বনভোজনে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বছরের এই সময়টাতে দেশীয় পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় আসেন। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যাহ্নভোজ ও বিনোদনের একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে মহানন্দা নদীর কোল ঘেঁষে উঁচু টিলায় অবস্থিত তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো।  

নীলফামারী থেকে মহানন্দা তীরে শিক্ষা সফরে এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। এদের একজন নাসরিন আকতার বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের প্রথম দুই দেশের সীমান্তের কোনো নদীতে নামলাম। নদীর মাঝখানে গিয়ে একপাশে ভারত আর একপাশে বাংলাদেশ দেখতে পেয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বনভোজনে আসা গৃহবধু ফেরদৌসী আক্তার বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। এখানে এসে নতুন অভিজ্ঞতা হলো। নদীর এপারে দাঁড়িয়ে ওপারে ভারত দেখলাম। লোভ সামলাতে না পেরে বাচ্চাদের নিয়ে নদীতেও নেমেছি। নদীতে নেমে মনে হলো যেন সমুদ্র সৈকতে নেমেছি।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব প্রায় ৬00 কিলোমিটার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে, কিংবা ঢাকা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত উড়োজাহাজে আসা যায়। সেখান থেকে সড়কপথে পঞ্চগড়। পঞ্চগড় শহর থেকে তেঁতুলিয়ার দুরত্ব ৪৩ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া উপজেলা শহর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিভক্ত করা মনোমুগ্ধকর নদী মহানন্দা। ব্যক্তিগত বা রির্জাভ গাড়িতে সরাসরি কিংবা অটোরিকশায় করে যাওয়া যাবে নদীতীরে।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে আসতে ননএসি বাসে ভাড়া জনপ্রতি ৬৫০ আর এসিতে ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা।   পঞ্চগড় সদর থেকে লোকাল বাসে তেঁতুলিয়ার ভাড়া ৫৫ টাকা। তেঁতুলিয়া শহর থেকে অটোরিকশায় মহানন্দার পাড় যেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ১০ টাকা।

থাকা ও খাবার ব্যবস্থা
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে মহানন্দা নদীঘেঁষা টিলায় অবস্থিত তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো। এখানে গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা ও ডাকবাংলোর হলরুমের জন্য গ্রুপপ্রতি ২০০ টাকা ফি  উপজেলা পরিষদে জমা দিতে হয়।

তেঁতুলিয়ায় রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

মহানন্দার পাড়ে চটপটি আর ফুঁচকার কয়েকটি দোকান থাকলেও ভারী খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য আআসতে হবে তেঁতুলিয়া শহরে।

নিরাপত্তা
মহানন্দার তীর ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এদের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)  একাধিক বিওপি ক্যাম্প রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ