ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মাথিনের কূপে ধীরাজ কেন একা?

শারমীনা ইসলাম, লাইফস্টাইল এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
মাথিনের কূপে ধীরাজ কেন একা? ছবি: শুভ্রনীল সাগর - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টেকনাফ থেকে: একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প। মাঝে মাঝে চোখাচোখি... ছোটখাটো খুনসুটি সবার চোখ এড়িয়ে বেশ তো চলছিলো।

কিন্তু এ ভালোলাগা সইলো না বেশি দিন। একদিন ঝড় এলো, সব দুমড়ে-মুচড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। পড়ে রইলো একটি স্মৃতি। একটি কূয়া। মাথিনের কূয়া।

ভালোবাসার দেবী হয়তো সে ছিলো না। তবে ভালোবাসতে জানতো এটা ঠিক।  ভালো তো সবাই বাসে। কেউ কেউ সঠিক মানুষটিকে খুঁজে পায় জীবনে… বাকিটা সময় স্বপ্নের ভুবনে ঘুরে ফিরে কেটে যায়। কিন্তু সব ভালোবাসা জীবনে শুভ পরিণতি পায় না। আর প্রিয়জন হারানো বা তার কাছে উপেক্ষিত মনে করার কষ্ট অনেকেই নিতে পারে না। ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রিয় মাথিনও একদিন বেছে নেয় মৃত্যুর পথ, মুক্তির পথ। পরবর্তীতে মাথিনের মৃত্যু শোকে ধীরাজেরও মৃত্যু হয়।


ভালোবাসার অমর কাহিনী রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের স্মৃতি নিয়ে শতবর্ষ পরে আজও সবার আগ্রহের জায়াগা সেই মাথিনের কূপ।

দেশ-বিদেশে পর্যটনের আরও বিকাশ ঘটাতে ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’ শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে বাংলানিউজ টিম কাজ করছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। অফিসের সবার জন্য যখন অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছিলো। নিজে চেয়ে নিলাম টেকনাফ যাবো। প্রেমের সমাধি দেখতে! ভালোবাসার এমন উদাহরণ ক’টাই বা রয়েছে?


কিন্তু টেকনাফ উপজেলায় থানার মধ্যে অবস্থিত সেই বিখ্যাত মাথিনের কূপে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা খেলাম। একটু কষ্টও যেন পেলাম। কূপের পাশেই মাথিন ও ধীরাজের সেই অমর প্রেমের কাহিনী লেখা রয়েছে। কূপটি সংরক্ষণও করা হয়েছে। কিন্তু কূপের পাশেই একটি কাঁচঘেরা বাক্সে ধীরাজের একার একটি মূর্তি রয়েছে।

ধীরাজ ও মাথিনের ভালোবাসার পরিণতি হয়েছে মাথিনের করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তাহলে কর্তৃপক্ষ যখন ধীরাজের মূর্তিটি তৈরি করে, তখন তো অন্তত মাথিনেরও একটি মূর্তি তৈরি করে তাদের ছবিতে একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থাটা করতে পারতো। ধীরাজের একার ছবি দেখে এ পুরো আয়োজনটিই অসম্পূর্ণ মনে হলো।


এ বিষয়ে কথা হলো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ধীরাজ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, তবে তিনি কলকাতার ছেলে ছিলেন, একসময় বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান। আর চাকরিতে যোগ দেননি। পরে তিনি একজন লেখক হিসেবে জনপ্রিয় হন। তার লেখা ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ গ্রন্থ থেকেই মাথিন ও তার প্রেমের কাহিনী মানুষের মুখে মুখে আজ। (১৯৩০ সালে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে লেখা “যখন পুলিশ ছিলাম” গ্রন্থে তারই ভালবাসার স্মৃতি আদরিনী মাথিনের কথাও লিখেছেন। লাহোরের ওবাইদুল্লাহ রোডের জিলানী ইউনিক প্রেস থেকে ১৯৩০ সালের ১ আষাঢ় বইটি প্রকাশিত হয়। ওই বইয়ের বিখ্যাত চরিত্রে মাথিনের কূপ সংশ্লিষ্ট কাহিনীটি রচিত রয়েছে। )
ধীরাজ কেন একা? উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ধীরাজ পুলিশে ছিলেন বলেই তার একটি ছবি পাওয়া গিয়েছিলো। সেই ছবির আদলেই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। তবে মাথিনের ছবি অনেক খোঁজার পরও পাওয়া যায়নি।


কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারের প্রতিটি বিষয় নিয়ে অসংখ্য নিউজ করার জন্য বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি।


ফিরে আসতে আসতে মনে হচ্ছিল, মাথিন তো কূয়ায় ঘুমিয়ে আছে, ধীরাজ কি তাহলে রাত-দিন জেগে থেকে প্রাণপ্রিয় মাথিনকে পাহারা দিচ্ছে? আর সেখানে ঘুরতে আসা সবাইকে বলছে, ‘তোমরা শব্দ করো না… আমার মাথিনের ঘুম ভেঙে যাবে…!’


বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এসএইচ

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ