ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মহেশখালীর ‘শতবর্ষী’ মসজিদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
মহেশখালীর ‘শতবর্ষী’ মসজিদ ছবি: সোহেল সারওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মহেশখালী থেকে ফিরে: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপটি কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। নাম মহেশখালী।

কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বের এ উপজেলা মিষ্টিপানের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ ছাড়াও এ পানের কদর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।

১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত হওয়া মহেশখালীতে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। আদিনাথ মন্দির, বড় রাখাইন পাড়া ও বৌদ্ধ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম।

প্যারাবন নামে পরিচিত মহেশখালীকে সমৃদ্ধ করেছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর প্রাণী, শুটকি, উপকূলীয় বনভূমি, কেয়া বন, লাল কাঁকড়া ও সাগরের গাঢ় নীল পানি।


নৌ-পথে পুরনো মহেশখালী জেটি কিংবা নতুন জেটি বলে খ্যাত আদিনাথ জেটি হয়ে মহেশখালী চ্যানেল ধরে যাতায়াত করেন এ এলাকায় আগতরা। সেই জেটির কাছাকাছি নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম তীর এলাকায় গড়ে উঠেছে কেয়া-নিশিন্দার ঘন ঝোপ। হাল সময়ে কিছু গোলপাতার গাছও এখানে লাগানো হয়েছে। নদীর পাড় বাঁচানো সবুজে ঘেরা এসব গাছ-গাছালির ফাঁকে একটি সাদা মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা এ এলাকায় আগত যেকোনো পযর্টকেরই নজর কাড়ে। আলোচিত এ মিনারটি মাত্র তিন বর্গকিলোমিটারের উপজেলা শহর মহেশখালীর সবচেয়ে মসজিদের মিনার। নাম গোরকঘাটা বাজার জামে মসজিদ।


এ মসজিদে নিমার্ণ সাল সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ মসজিদের বয়স একশ’ বছরের বেশি। মসজিদের গেট সংলগ্ন চাল ব্যবসায়ী চল্লিশোর্ধ্ব সালাউদ্দিন এমনটাই জানালেন। দোকানে বসে থাকা এ মসজিদেরই প্রাক্তন খাদেম ষাটোর্ধ্ব মৌলভী আবদুল খালেক ও অন্যরা তার দাবির প্রতিধ্বনিই করলেন। তারা জানান, ১৯৮৫ সালে বতর্মান কাঠামোয় মসজিদটি পুন:নির্মাণ করা হয়।

এর আগে মসজিদটি ছিলো মাটির। ৫৪ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত দ্বিতল এ মসজিদের ৩০ ফুট উঁচু মিনারটিই ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, হাতছানি দেয়।


স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও মসজিদ প্রতিষ্ঠার সন, ইতিহাস কিংবা প্রতিষ্ঠাতাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে একজন মওলানার সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা যায়। চট্টগ্রামে বসবাসকারী ওই মওলানা শুটকির ব্যবসার সূত্রে মহেশখালী যাতায়াত করতেন। তিনি স্থানীয়দের নিয়ে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের উদ্যোগে এ এলাকায় বেশ কিছু মক্তবও গড়ে উঠে।

মসজিদের পুন:নির্মাণকালে হাজী মৌলভী রিজওয়ান ও হাজী মোজাফফর আহমদ বিশাল ভূমিকা রাখেন। এখন মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন মৌলভী আবু তাহের। এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতায় দেশের আর অন্য দশটি মসজিদের মতো এ মসজিদটিও পরিচালিত হয়। একজন খতিব, একজন পেশ ইমাম, দু’জন মুয়াজ্জিন ও দু’জন খাদেমের মাধ্যমে মসজিদের কার্যক্রমসমূহ পরিচালিত হয়ে আসছে।


সুদৃশ্য এ মসজিদের সামনে শান বাঁধানো এক বিশাল পুকুর। এখানে মুসল্লিরা অজু করেন। এছাড়া অজুর আলাদা আরও ব্যবস্থা রয়েছে। দোতলা এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে। মূল মসজিদের ভেতরে ১৩টি, বারান্দায় ৪টি আর বধির্ত বারান্দায় ২টি কাতার রয়েছে। প্রতি কাতারে একশ’ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।


মহেশখালী উপজেলা শহরের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের জামাত এ মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদকে ভিত্তি করে পুরো মহেশখালী অঞ্চলের যাবতীয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। মসজিদটি তৈরিতে আধুনিক ধারা নির্মাণধারা অনুসরণ করা হলেও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর মহেশখালীর এ মসজিদটি ধীরে ধীরে ভ্রমণপিপাসুদের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।


বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
এমএ/এসএইচ

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ