ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

উদ্বোধনী যাত্রায় উৎসবমুখর সুন্দরবন-১০

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬
উদ্বোধনী যাত্রায় উৎসবমুখর সুন্দরবন-১০

সুন্দরবন-১০ থেকে: ‘ঘাডে (ঘাটে) আইয়া (এসে) হুনছি, (শুনছি) নতুন একখান লঞ্চ নামছে, লঞ্চটা নাহি বড়। খুঁইজ্জাও দেহি, বিশাল একখান লঞ্চ।

ওরে বাবা, এতো বড় লঞ্চ, জিন্দেগিতেও দেহি নাই। হ্যার পর মোরা ভিতরে ঢুইক্যা দেহি, নিচে কোনো হানে জায়গা নাই। হ্যার পর মোরা দোতলার ডেগে যাইয়া জায়গা পাইছি। ভাইরে ভাই, এত্তো বড় লঞ্চ! যাইতে বেমালা (অনেক) মজা’- এমন কথা বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ফাতেমা বেগম।  

আনন্দে বিগলিত এই বৃদ্ধা পরিবারের অন্য তিনজনের সঙ্গে যাত্রী হয়েছেন এ পর্যন্ত পানিতে নামা নৌ-যানগুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় লঞ্চ সুন্দরবন-১০ এর। নৌ-পথের নিয়মিত যাত্রী বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া গ্রামের ফাতেমা তার দেখা সবচেয়ে বড় লঞ্চটিতে উঠতে পেরে অনেক উচ্ছ্বসিত।

সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাত্রা শুরু করেছে সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি। শনিবার (২৫ জুন) রাত পৌনে নয়টার প্রথম দিনের ট্রিপটিতে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ। শান্ত নদীর মাঝে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা সুন্দরবন-১০ এর প্রথম দিনের যাত্রার সঙ্গী হওয়া যাত্রীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনারও কমতি নেই। লঞ্চটিতে ভ্রমণ করতে ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রীদের গুণতে হবে- ডেকে ২০০ টাকা, সোফায় ৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা, ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকা এবং ভিআইপি কেবিনে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা।

সদরঘাট থেকে একই সময়ে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া অন্য তিনটি লঞ্চের কর্মীরা যেখানে ডাকাডাকি করেও যাত্রী পাচ্ছিলেন না, সেখানে যাত্রা শুরুর অনেক আগে বিকেল থেকেই পুরোপুরি পূর্ণ হয়ে গেছে সুন্দরবন-১০। সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন, ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, সোফা, ডেক মিলিয়ে ১ হাজার ৪শ’ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চারতলা লঞ্চটির সবগুলো আসনই ভরে গেছে। প্রথম দিনের টিকিট পেতে বুকিং শুরু হয়েছিল চারদিন আগেই, সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে শুক্রবার (২৪ জুন)। ডেকের যাত্রীদের টিকিট আগে থেকে নিতে হয় না, লঞ্চ ছাড়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জায়গা নিতে পারেন তারা। শুরুর দিনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আগে লঞ্চে উঠেও প্রথম তলার সম্পূর্ণ, দ্বিতীয় তলা ও ছাদের আংশিকজুড়ে থাকা ডেক পুরোপুরি ভরে থাকতে দেখা গেছে।

ডেকে, বারান্দায়, ছাদে, দোতলার ভিআইপি জোন, ফুডকোড, সামনে-পেছনের জায়গা সবখানেই আনন্দের আমেজ, হই-হুল্লোড়ে মেতে আছে গোটা সুন্দরবন-১০। অনেকগুলো বাচ্চাও ছোটাছুটি করে খেলছে, হই-চই করে মাতিয়ে রেখেছে বারান্দাগুলো, পেছনে তাদের সামলাতে ব্যস্ত মায়েরাও। রাত এগারটায়ও ঘুমাননি বেশিরভাগ যাত্রী।

শ্রমজীবী কাওসারের ভাষ্য- ‘বড় লঞ্চ, নতুন লঞ্চ, লাইটিং দেইখ্যা মন ভইরা গেল। উইঠ্যাই পড়লাম, বেশ মজা লাগছে’। ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরের কাওসারও প্রথম দিনে সুন্দরবন-১০ এর যাত্রী হতে পেরে অনেক খুশি।

লঞ্চটির মালিক আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টুও দেশের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে আধুনিক এবং প্রথমবারের মতো লিফট-সিসিইউসহ প্রযুক্তি সুবিধা সম্বলিত লঞ্চটি পানিতে নামাতে পেরে তার আনন্দময় অনুভূতি ব্যক্ত করলেন বাংলানিউজকে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ত্রিশ মাসের পরিশ্রম-চেষ্টার ফসল সুন্দরবন-১০ কে যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত করতে পেরে বুকটা ভরে যাচ্ছে’।

বাংলার টাইটানিক খ্যাত সর্বোচ্চ যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিলাসবহুল  সুন্দরবন-১০ লঞ্চটির মালিক রিন্টু একাধারে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বরিশাল চেম্বারের সভাপতি, এফবিসিসিআই’র পরিচালক এবং বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। বরিশালের ৩২টি মসজিদ-মাদ্রাসা, ক্রীড়া ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তা বা সংগঠক তিনি। ব্যবসার পাশাপাশি সেবার মানসিকতা নিয়েই তার এ উদ্যোগ বলেও জানান তিনি।

‘অন্য লঞ্চগুলোর কেবিনের বেডশিট রঙিন। আমরাই প্রথম সুন্দরবন-১০ এর বেডশিট ও বালিশের কাভার সাদা রঙের করেছি। যেন সাদা মন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে যাত্রীরা নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারেন। বরিশালের মানুষকে অনেক ধরনের সেবা দিচ্ছি। এটাকেও একটি সেবা বলেই মনে করছি। কারণ, সর্বোচ্চ সেবা দিয়েও ভাড়া বাড়াইনি। এমনকি সামনের ঈদ যাত্রায়ও ভাড়া বাড়াবো না’- বলছিলেন বরিশালবাসীর কাছে ‘সাদা মনের মানুষ’ খ্যাত সাইদুর রহমান রিন্টু।

আরও পড়ুন... প্রথম যাত্রায় যাত্রীতে পরিপূর্ণ সুন্দরবন-১০

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬

এএসআর/টিআই              

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ