ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে ছবি: বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পারাবত এক্সপ্রেস থেকে: ঠিকঠাক গড়াতে না গড়াতেই থেমে গেলো চাকা। দু’পাশে পরিত্যক্ত লাইনে পরিত্যক্ত ওয়াগন।

লাইনের ফাঁকে ফাঁকে পলিথিনের জঞ্জাল। একটু যেনো পচা গন্ধও নাকে আসে।  

জায়গাটার নাম পূর্ব আরিচপুর। সামনে টঙ্গি জংশন। একটু আগে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস গেছে। লাইন ক্লিয়ার পেতে অবশ্য খুব বেশি দেরি হলো না। পেছনে পড়ে রইলো এয়ারপোর্ট স্টেশন।

এই সাত সকালেই ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে উঠেছে তাপমাত্রা। পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইছে। শ্রাবণ শুরুর আগের দিনে আকাশে কিছু মেঘ গড়াগড়ি খাচ্ছে বটে, তবে রোদের তেজ যুঁত হয়ে বসতে পারছে না কোথাও।

টঙ্গি ছাড়িয়ে একটু পূর্ব দিকে ঘুরে গেলো ট্রেনের নাক। গতি বাড়তে বাড়তে ফুল স্পিড নিলো ট্রেন। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে ট্রেন চলে এলো উন্মুক্ত প্রকৃতির ক্যানভাসে। দু’পাশে বিল-জলা, মাঠ, গাছ-গাছালি, মেঠো পথ। কাঁঠাল, কলা, মেহগনির ফাঁকে মাথা ‍উঁচু তালগাছ। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালির দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার মতো ট্রেন দেখতে ছুটে আসা কাউকে অবশ্য দেখা গেলো না কোথাও।
এই ট্রেন এখন আর বিস্ময় জাগায় না কারো মনে। অথচ সপ্তদশ শতাব্দীর কয়লা টানা ওয়াগন স্টিফেনশনদের হাতে ট্রেনে পরিণত হলে কি বিস্ময়টাই না জেগেছিলো মানুষের মনে?

তখন ইংল্যান্ডে খনি থেকে কাঠের দুই সমান্তরাল লাইনের ওপর দিয়ে কয়লা বোঝাই ওয়াগন টেনে নিয়ে যেতো মানুষ। পরে মানুষের বদলে জুড়ে দেওয়া হলো ঘোড়া। গতি বাড়লো কয়লা টানার। ওয়াগন টানার গতি আরো বাড়াতে বাড়তে থাকলো ঘোড়ার সংখ্যা। এক ঘোড়াকে বলা হলো-১ হর্স পাওয়ার বা ১ অশ্বশক্তি, ২ ঘোড়াকে ২ হর্স পাওয়ার, ৩ ঘোড়াকে ৩। এভাবে ঘোড়া থেকে তৈরি হলো হর্স পাওয়ার বা অশ্বশক্তির ধারণা। সেই ধারণাই কালক্রমে হয়ে উঠলো শক্তি পরিমাপের একক।

এরইমধ্যে জেমস ওয়াট আবিষ্কার করলেন স্টিম বা বাষ্পীয় শক্তি। সেই শক্তির ওপর ভিত্তি করে রিচার্ড ট্রেভিলিথ স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করলেন ১৮০৪ সালে। কিন্তু সেই ইঞ্জিন এতো ভারি হলো যে লাইনের ওপর দিয়ে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়লো।

কিন্তু হাল ছাড়লেন না জর্জ স্টিফেনশন। কয়লা খনির এই শ্রমিক দিনের পর দিন গায়েগতরে খেটে ১৮১৪ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে আবিষ্কার করলেন স্টিম ইঞ্জিন চালিত ট্রেন।
কিন্তু তার আবিষ্কৃত রেল ‘মাই লর্ড’ পাহাড়ে বা খাড়া ঢালে মালবোঝাই ওয়াগন তুলতে সক্ষম হলো না।

নাছোড়বান্দা জর্জ ছেলে রবার্টকে নিয়ে লেগে রইলেন তো রইলেনই। শেষ তক ১৯২৫ সালে কয়লা ও ময়দা বোঝাই ট্রেন স্টকটন থেকে ডার্লিংটন পর্যন্ত চালিয়ে নিতে সক্ষম হলেন তিনি। প্রথম ট্রেনে সওয়ার হলো সাড়ে চারশ’ যাত্রী। গতি উঠলো ২০ কিলোমিটারের একটু বেশি। তবে পথে কয়েক জায়গায় থামায় ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে গেলো ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট। যেখানে থামলো সেখানেই ট্রেনে চাপলো শখের যাত্রী। নামার সময়ে দেখা গেলো ৬শ’ যাত্রী ছিলো ট্রেনে।

সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী বাড়ছে। কখনো গতি একটু বাড়ে, তো পরক্ষণেই ঢিমে হয় ট্রেনের দুলুনি। মাঝেমধ্যেই এমন গতি কমা-বাড়ার কারণ স্পষ্ট হলো না।

ঘোড়াশাল পেরুনোর পর আরো যেনো নিজেকে মেলে ধরলো প্রকৃতি। কড়া রোদে মাথা উঁচিয়ে বাতাসে দুলছে ডাগর ডাগর পাটগাছ। চক চক করছে বৃষ্টিধোয়া গাছ-গাছালির সতেজ সবুজ পাতা।

মাঝেমধ্যে একটা/দুটো বাজার, গঞ্জ, গ্রাম। রোদের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরিতে শ্রাবণের আগমনী গান। তারই মাঝে ট্রেন ছুটে চলেছে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে। চলবে

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ