ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো ছবি: শুভ্রনীল সাগর

লাউয়াছড়া থেকে: প্রচলিত আছে, ওসমান গণি টাকার খনি। তিনি টাকা দিয়ে বালিশ-তোষক বানিয়ে ঘুমাতেন।

এক-এগারোর সময় বহুল আলোচিত ওসমান গণির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বন কর্মকর্তারা ‘হরিলুটের রাজা’ এমন জন্মেছিলো সাধারণ মানুষের মনে।

সেসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আজও বন কর্মকর্তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

ওসমান গণির সময়কালে মিহির কুমার দো পটুয়াখালী অঞ্চলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হিসেবে কাজ করতেন।

মেধা, কর্ম ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে বন কর্মকর্তাদের সেই গ্লানি দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার) মিহির কুমার দো।

মৌলভীবাজার অফিসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সে সময়ের বন বিভাগের দুর্যোগকালীন অভিজ্ঞতার কথা বললেন তিনি।

মিহির কুমার বলেন, সব প্রতিষ্ঠানেই কিছু দুষ্টু লোক থাকে। এসব ব্যক্তির বদনাম হলে সেটা তার ব্যক্তিগত ইমেজের ব্যাপার, কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানের নয়। কিন্তু তারপরও প্রতিষ্ঠানের দিকেই আঙ্গুল ওঠে। এরকম একটা অবস্থা ছিলো ওসমান গণির সময়। তার কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি বন বিভাগের সেই গ্লানি মুছে ফেলাতে।

আমরা কর্মতৎপরতা বাড়িয়েছি। বন্যপ্রাণী ও বন  সংরক্ষণের জন্য টহল জোরদার করেছি। যখন যেখানে দায়িত্বে ছিলাম, সেখানেই চেষ্টা করেছি আমাদের ক্ষয়িষ্ণু বনজ সম্পদ সংরক্ষণের। মৌলভীবাজার আসার আগে পটুয়াখালীতে দায়িত্ব থাকাকালীন সময় উপকূলবর্তী চরাঞ্চলে ৭শ’ হেক্টর এবং ১৫০ হেক্টর বনায়ন করেছি।
 
আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দিন যত যাবে- আবাস ততই বাড়বে। তাই আমরা সামাজিক বনায়ন ও রাস্তার পাশে গাছ লাগানো বা নতুন চর সৃষ্টি হলে সেখানে বনায়ন করার পরামর্শ দিচ্ছি।

২০০৩ সালে চাকরি জীবন শুরু করেন মিহির কুমার দো। কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন বন ও উপকূলীয় অঞ্চলে। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকার ডিএফও হিসেবে কাজ করার সময় ৩টি বাঘের চামড়া, ৪টি বাঘের খুলি ও ২৪ কেজি হারগোড় উদ্ধার করেন তিনি।

২০১৫ সালে মৌলভীবাজারে আসার পরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে কয়েক প্রজাতির প্রায় ১০৭টি প্রাণী উদ্ধার করে অবমুক্ত করেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযান ছিলো ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর বাগাউড়া, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকায় চালিয়ে ২০টি গোখরা সাপ উদ্ধার করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। একই বছর ২৫ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারের জালালীয়া রোড থেকে ৪টি লজ্জাবতী বানর, দুটি মেছোবাঘ, একটি গন্ধগোকুল, একটি অজগর, দুটি সজারু এবং দুটি কাউ ধনেশ উদ্ধার করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফা রোড থেকে ৮টি ঘুঘু উদ্ধার করে মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়। এমন সাফল্যগাথা আরও রয়েছে তার।

তবে নিজের সাফল্যের কথা বলতে নারাজ এই বন কর্মকর্তা। আমাকে নিয়ে আলোচনা চাই না, নিভৃতে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কাজ করতে করতে ওরা পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে গেছে। কোথাও একটি প্রাণী হত্যার কথা শুনলেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এসএম/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ