ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর ছবি: জিএম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

আদিত্যপুর (বালাগঞ্জ) স্মৃতিসৌধ ঘুরে: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আউশকান্দি-নবীগঞ্জ গোলচত্বর পেরিয়ে বেশ খানিকটা আসার পর তাজপুর বাজার। রাস্তার পাশে ইট-পাথরের আধুনিক ভবন থাকলেও গ্রামীণ একটা ভাব রয়েই গেছে।

তবে পরিবেশ-প্রতিবেশে রয়েছে কিছুটা ‘পয়সাওয়ালা’ সিলেটিদের আভিজাত্যের ছায়া।

একটু পরপর সুরম্য আর নান্দনিক ডিজাইনের বাড়িগুলো সে বার্তাই দিচ্ছে। এ সড়কে তাজপুর বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে যে সড়কটি চলে গেছে, সেটিই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম হত্যার শিকার ৫৬ মুক্তিযোদ্ধার গণকবরে যাওয়ার রাস্তা।

ছোট-সরু এবং গ্রামের ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে যাওয়া পিচ ঢালা সড়কটি ধরে সিলেট-মৌলভীবাজারের সীমানা নির্ধারণী কুশিয়ারা বিধৌত বালাগঞ্জের দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এগোলেই আদিত্যপুর গ্রাম।

গ্রামের মাঝামাঝিতে আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এর ঠিক উত্তর পাশে অবস্থান স্মৃতিসৌধের।

৩৮৯.৫১ বর্গকিলোমিটারের বালাগঞ্জ উপজেলা, সিলেট জেলাশহর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার।

ভৌগোলিক অবস্থানে উপজেলাকে উত্তরে ঘিরে ধরেছে দক্ষিণ সুরমা ও বিশ্বনাথ, দক্ষিণে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর। আর পশ্চিমে আছে বিশ্বনাথ, তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ  ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর।

তাজপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হয় বালাগঞ্জে, তবে কালেভদ্রে ছোট রোলার কোস্টার ধরনের বাসের দেখাও মিলে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে সিলেট দখলের শুরুর যুদ্ধটাই হয় এখানকার শেরপুর ও সাদীপুরে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে গণহত্যা ঘটে আদিত্যপুর, বুরুঙ্গা, গালিমপুরেও।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হত্যার পাশাপাশি চলে লুটপাট, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে নয় মাসব্যাপী যুদ্ধের সময় ৪ এপ্রিল শেরপুর, ৫ এপ্রিল সাদীপুরে সম্মুখ যুদ্ধ হয়।

১৪ জুন আদিত্যপুরে শহীদ হন ৬৩ জন (তবে স্মৃতিফলকে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ আছে), ২৬ মে বুরুঙ্গায় শহীদ হন ৭৮ জন এবং ২০ মে গালিমপুরে শহীদ করা হয় ৩১ জনকে।

আর উপজেলার সুরিকোনায় ১৮ জুলাই ৩৩ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, একাত্তর সালের ১৪ জুন কয়েকজন রাজাকারের সহযোগিতায় দু’টি সাঁজোয়া জিপে করে আদিত্যপুরে আক্রমণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।  এ সময় গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে ৬৫ জনকে আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসে তারা।

পরে সারিবদ্ধভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের। তাদের মধ্যে গ্রামের দু’বাসিন্দা বেঁচে যান।

বেঁচে যাওয়া এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হিমাংশু ধর হিমু বাংলানিউজকে বলেন, ভাগ্যক্রমে আমার বাবা সেদিন বেঁচে যান। তার কোমরের দু’পাশে গুলি লাগে। দশ বছর আগে বাবা মারা গেছেন।

বালাগঞ্জ ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় জানিয়ে একটি স্কুলের শিক্ষক আমেনা খাতুন বলেন, এ এলাকা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর জন্মভূমি। বর্তমানে ওসমানীনগর হলেও তখন দয়ামীর বাজারের জালালপাড়াটি বালাগঞ্জে ছিলো।
স্থানীয় সাংবাদিক রজত চন্দ্র দাস তুলন বলেন, গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অযত্নে পড়ে আছে। বিশেষ দিবস ছাড়া তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও হয় না।

তিনি জানান, উপজেলার আদিত্যপুর, গালিমপুর, বুরুঙ্গা, সুরিকোনা গ্রামে চারটি গণকবর রয়েছে। এর মধ্যে চারটিরই কোনো সংস্কার নেই।

'আমরা ১৬ ডিসেম্বরে পুল (ফুল) দিয়া শ্রদ্ধা জানাই, ভিজয় ধিভস ছাড়া এইকানে খাউরে আইতে ধেকি না,' সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুলাইমান।

সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালের ৩০ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে আদিত্যপুর গণকবরের জন্য ২৪ হাজার ৮৩২ টাকা, বুরুঙ্গা গণকবরের জন্য ২২ হাজার ২২২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে সংসদ সদস্য (এমপি) শফিকুর রহমান চৌধুরী তিনটি গণকবর সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেন বলে জানান ইউপি সদস্য রহমতুল্লাহ।

ধ্বংস হতে যাওয়া এ তিনটি গণকবর সংস্কার এবং স্মৃতিসৌধ সংস্কারের দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মহাম্মদ আলীসহ স্থানীয়রা।

**যাত্রীর ইয়ার্ডে পাবলিকের কার পার্কিং
** ফাংশন নেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’


বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
এমএ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ