ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ছয় মাস কৃষক, ছয় মাস বেকার

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
ছয় মাস কৃষক, ছয় মাস বেকার ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাছাড়িয়া হাওর (সুনামগঞ্জ) থেকে: সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে চাইলে হাওর এলাকাতেই আসতে হবে। গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য হাওরেই প্রস্ফূটিত হয়।

আর বর্ষা মৌসুমে চারদিকে থৈ থৈ পানি। এর মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিনের ঘর হিজল গাছের সবুজ পাতায় ঢেকে রেখেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পানির ওপর কোনো বাগান ভেসে যাচ্ছে।
 
হাওরের মানুষগুলোও সহজ-সরল। কাউকে পেলেই সাধ্যমতো আপ্যায়নের চেষ্টা করেন। বাঙালি যে অতিথি পরায়ণ হাওরের মানুষদের এ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। বর্ষাকালে হাওরের এসব গ্রামে চলার একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
 
কিন্তু হাওরের মানুষের জীবনাচার অন্যদের চাইতে ভিন্ন। তারা বছরের ৪ মাস পানিবন্দি থাকেন। আরো দুই মাস পানি শুকানো না পর্যন্ত বেকার হয়ে পড়েন। ফলে হাওরের মানুষগুলো ছয় মাস কৃষি কাজ করেন। কেউ কেউ বাকি ছয় মাস গার্মেন্টসে বা লেবারের কাজ করেন। কেউবা আবার একদমই বেকার থাকেন।
 
রোববার (১৭ জুলাই) বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাছাড়িয়া হাওর (স্থানীয়দের ভাষায় কছড়া হাওর) এলাকা ঘুরে স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন এমন চিত্রই পাওয়া যায়।
 
বিশ্বম্ভরপুর বাজারে ধানের আড়তদার মো. শহিদুল ইসলাম। হাওরে তারও রয়েছে ৮ বিঘা জমি। তিনি জানান, ‘আমরা ছয় মাস নিজের জমিত থোন কাজ করবার পারি, বাকি ছয় মাস বেকার থাকতি অয়’।
 
তার বর্ণনায় কাছাড়িয়া হাওরে এখন (বর্ষার সময়) যেখানে ৫০ ফুট পানি, শুকনা মৌসুমে সেখানেই ইরি ২৮ ও ২৯ জাতের ধান হয়। এছাড়াও আলু, মূলা, লাউ, মিষ্টি আলু, পটল, করল্লা, মরিচ হয়। এই হাওরে যে সবজি উৎপাদন হয় তা দিয়ে এলাকার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করা হয়।
 
কাছাড়িয়া হাওরে প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশে এক বিঘা) জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদন হয়। এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে ৩ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকা হিসেবে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৯০০ টাকা। আবার ধান কাটতে ৪ জন শ্রমিকের খরচ হয় ১২০০ টাকা।

স্থানীয় বাজারে মণ প্রতি ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে এখানকার চাষিদের বড় সুবিধা ধান চাষ করতে কোনো কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না।
 
বাংলা পৌষ মাস শুরু হলেই শুরু হয় ধান লাগানোর উৎসব, চলে ফাল্গুন পর্যন্ত। এসময় রংপুর, সিরাজগঞ্জ বা আশপাশের জেলা থেকেও কাজ করতে আসেন মানুষ। আবার বৈশাখের ৪/৫ তারিখ থেকেই শুরু হয় ধান কাটার উৎসব। ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পুলির আয়োজন।
 
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা চাষি হোসেন আলী ফকির (৫০) জানান, আমরা বড় কষ্টে আছি বা, বর্ষায় কোনো কাজ থাকে না। হাওরে মাছ ধরবাম হেও পরি না, মহাজনের লোকরা ধরতে দেয় না।
 
জানা যায়, ডাকের মাধ্যমে বিভিন্ন মহাজন নিয়ে নেন কাছাড়িয়া হাওর। তাই বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই কোনো চাষি আর জমিতে নামতে পারেন না। তখন বেকার বসে থাকতে হয়। নায়তো অন্য কোথাও কাজে যেতে হয়।
 
শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা সজিব চন্দ্র বর্মন। তিনিও জানান, আমরা ছয় মাসের জন্য জমির মালিক থাকি, বাকি ছয় মাস বেকার থাকতে হয়।

 
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
এসএম/জেডএস

**
বর্ষায় মাঝি, শুকনায় রাজমিস্ত্রি
** পানি নয়, সাতছড়ির ছড়ায় এখন শুধুই বালু
**প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
** ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্যে কালো মেঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা
**লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
**লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
**নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ